Tips and tricks for students to reduce tension and manage stress ahead of the board examinations
Board Examination Tips
ভাল পরীক্ষা পড়ুয়ার হাতে
বোর্ডের পরীক্ষা, স্কুলের পরীক্ষা... টেনশনে পড়ুয়ারা, সঙ্গে বাবা-মাও। সব লিখতে পারবে তো? মনে ভয়। রইল শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।
ছবি: অমিত দাস।
নবনীতা দত্ত
কলকাতাশেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
পরীক্ষার মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। এক দিকে বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষা যেমন চলছে, তেমনই স্কুলগুলোতেও পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সারা বছর পড়লেও পরীক্ষার আগের দিনগুলোয় নিজের মগজাস্ত্রে শান দিয়ে রাখতে হবে যে! রইল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—
তৈরি হওয়ার সহজপাঠ
সিলেবাসে কী কী আছে, বিষয় অনুযায়ী তার একটা লিস্ট তৈরি করে নেওয়া যাক। তার মধ্যে যেগুলো তৈরি সেগুলো থাকুক এক দিকে সহজ-এর তালিকায়। আর যেগুলো এখনও কঠিন ঠেকছে বা ভাল করে তৈরি হয়নি, সেগুলো বরং রাখা যাক তালিকার অন্য দিকে। এ বার কঠিনদের পড়ে আয়ত্তে এনে তাকে জুড়ে দেওয়া যাক সহজ-এর তালিকায়। ক্রমশ কঠিন তালিকাটা একটু একটু করে কেটে শূন্যে পৌঁছলে আর সহজ তালিকা ভরে গেলেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।
পড়ার সময়ও খুব জরুরি। যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বললেন, “যদি কোনও বিষয় একটু কঠিন মনে হয়, সেগুলো সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়া ভাল। পরীক্ষার আগের রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে জটিল বিষয়গুলো হয়তো একবার চোখ বুলিয়ে দেখে নিল। পর দিন সকালে উঠে পরিষ্কার মাথায়, সেটা আগে পড়ল। এতে বিষয়টা আয়ত্তে আনা সহজ হবে।”
একই সঙ্গে অমিত সেন মজুমদারের পরামর্শ, রোজ লেখার অভ্যেস চালু রাখতে হবে। বিশেষ করে, পরীক্ষার মাঝের ছুটির দিনগুলোয় শুধু পড়লে হবে না, লিখতেও হবে। এতে হাতের লেখার গতি বজায় থাকবে। পরীক্ষাহলে ঠিক যে সময়ে পরীক্ষা দেবে, বাড়িতে ঠিক সে সময়ে ঘড়ি ধরে লেখার অভ্যেস করা গেলে বায়োক্লকও সে ভাবে তৈরি হয়ে যাবে।
তবে ডিজিটাল দুনিয়ার হাতছানি থেকে এ সময়ে দূরে থাকতে হবে। চিলড্রেনস ফাউন্ডেশন স্কুলের প্রিন্সিপাল রুমেলা রায় বললেন, “স্ক্রিনটাইম বেঁধে দিতে হবে গোড়া থেকেই। পরীক্ষার আগে হঠাৎ করে ফোন, টিভি, ল্যাপটপ দেখতে বারণ করলে বা স্ক্রিন টাইম কমাতে বললে সন্তান শুনবে না। তবে এখন হাতে সময় নেই। তাই পরীক্ষার দিনগুলো স্ক্রিন টাইম যাতে কম হয়, সে দিকে খেয়াল রাখুন।” বিশেষত রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে সময় নষ্ট যেন না হয়। ঠিক সময়ে ঘুমোতে যাওয়া, ভাল ঘুম হওয়া ও ঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা দরকার পরীক্ষার দিনগুলোয়। পড়তে বসেও পাশে মোবাইল না রাখলেই ভাল। বারবার নোটিফিকেশনের আওয়াজে মনঃসংযোগ নষ্ট হয়।
অনেক বাচ্চাদের মনঃসংযোগ অতিমারির পরে কমেছে বলে মত শাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সিংহ মহাপাত্র নাগের। তাঁর কথায়, “অতিমারির পরে অনেক বাচ্চার মধ্যেই দেখছি লেখার স্পিড, মনোযোগ দুটোই কমেছে। তাই মন দিয়ে পড়তে ও লিখতে হবে। আর এই সময়টা যেহেতু ঋতু পরিবর্তনের। শরীর খারাপ হওয়ার ভয় থাকে। তাই সেই দিক দিয়েও সাবধান।”
পড়ুয়াদের টেনশন করা থেকে বিরত থাকার কথা বললেন অমিত। তাঁর কথায়, একটু টেনশন ভাল। তা পরীক্ষায় তৈরি হওয়ার সহায়ক। কিন্তু সেই টেনশন যেন গ্রাস না করে ফেলে পড়ুয়াকে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষা খারাপ হওয়ার ভয় থাকে। “আর পরীক্ষায় প্রশ্ন কঠিন এলেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বাকি পরীক্ষার্থীদের কাছেও তো প্রশ্নপত্র কঠিন। সে ক্ষেত্রে ইভ্যালুয়েশনে তার সমতা বজায় রাখা হয়,” বললেন অমিত সেন মজুমদার।
এই প্রসঙ্গে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আবীর মুখোপাধ্যায় বললেন, “একটা সীমা অবধি টেনশন থাকা ভাল। এতে পড়ুয়াদের প্রোডাক্টিভিটি লেভেল বেড়ে যায়। সে সজাগ থাকে। পড়াশোনার বিষয়ে সিরিয়াস থাকে। কিন্তু সেই সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে অতিরিক্ত টেনশন করলে আবার হিতে বিপরীত হয়। তখন কিন্তু প্রোডাক্টিভিটি লেভেল কমতে থাকবে।”
অন্য একটি দিক নিয়েও আলোচনা করলেন ডা. আবীর, “বার্ডেন অব এক্সপেক্টেশন কমাতে হবে। অনেক সময়ে দেখা যায়, মা-বাবারা প্রথমেই ধরে বসে আছেন সন্তান সব পারবে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ‘ও তো পারবে না’ ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য। দুটোই বাচ্চার উপরে মানসিক বোঝা তৈরি করে। অন্য দিকে সন্তান নিজেও নিজেকে নিয়ে বেশি আশা করতে পারে। সে হয়তো ধরেই নিচ্ছে সে প্রথম হবে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় হওয়া তার কাছে গ্রহণযোগ্যই নয়। অথবা ভাবছে, সব উত্তর দারুণ লিখে আসবে। কিন্তু সেটা যখন হচ্ছে না, সে ভেঙে পড়ছে। পরবর্তী পরীক্ষায় তার প্রভাব পড়ছে। তাই নিজের উপরেও অহেতুক বোঝা চাপানো যাবে না।”
ভাল পরীক্ষার টিপস
পরীক্ষার আগের দিন শুধু রিভিশন। যে অংশটা তৈরি নেই, সেটা সে দিন তৈরি করতে আগে সময় দেওয়া যাবে না। সব রিভিশন হয়ে গেলে সময় থাকলে সেটা ধরা যেতে পারে।
ডা. আবীর মুখোপাধ্যায় বললেন, “পরীক্ষার দিনগুলোয় ঠিক মতো ঘুম জরুরি। ক্লান্ত মস্তিষ্ক নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে কিন্তু সমস্যা বাড়বে। বরং পরীক্ষার আগের রাতে ভাল ঘুম জরুরি। তা হলে মস্তিষ্ক সচল থাকে।”
স্নান করতে যাওয়ার আগে, পেন, বোর্ড, আই কার্ড ও বাকি জিনিসপত্র মন দিয়ে গুছিয়ে নিতে হবে।
পরীক্ষাহলে ঢোকার আগে অত্যধিক চিন্তিত বন্ধুদের সঙ্গে সময় নষ্ট না করাই ভাল। মন থাকবে নিজের পরীক্ষার দিকে।
প্রশ্নপত্রে যে সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, সেগুলো আগে করে নিতে হবে।
পরীক্ষার সময়সীমার কিছুটা সময় হাতে রাখতে হবে। লেখা মিলিয়ে উত্তরপত্র জমা দিতে হবে।
আর খুব জরুরি হল, পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়েই সেই প্রশ্নপত্র নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা না করা। আবীর মুখোপাধ্যায় বললেন, “যেটা হয়ে গিয়েছে, সেটা হলে রেখে দিয়েই বেরিয়ে আসতে হবে। তৈরি হতে হবে পরের পরীক্ষার জন্য। যে পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া করে মনখারাপ করলে পরের পরীক্ষাগুলোয় তার প্রভাব পড়বে।” একই পরামর্শ সন্তানের অভিভাবকদের জন্যও।
এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে প্রস্তুত হতে হবে। প্রশ্ন অনুযায়ী ঠান্ডা মাথায় ‘টু দ্য পয়েন্ট’ উত্তর লিখতে পারলে মার্কসেও প্রাপ্তি কম হবে না।