প্রশিক্ষক সৌমেন দাসের মতে এই ধরনের ফ্যাট কমাতে প্রয়োজন স্পট রিডাকশন স্ট্রেচিং ওয়ার্কআউট। নিজস্ব চিত্র।
ওজন কমাতে নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন নির্দিষ্ট ধরনের শারীরচর্চা। নিয়মিত দৌড়ানো, মর্নিংওয়াক কিংবা ডায়েট আপাত ভাবে ওজন কমালেও শরীরের নিম্নাঙ্গে জমে যাওয়া ফ্যাট বার্ন করাতে পারে না। ফিটনেস প্রশিক্ষক সৌমেন দাস বললেন, “পিঠে, কোমরে কিংবা নিতম্বে অতিরিক্ত চর্বি জমার সমস্যা মূলত মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে সব মহিলার ওজন একটু বেশি তাঁদের প্রথমেই চর্বি জমতে শুরু করে শরীরের পিছনের অংশে। অতিরিক্ত চর্বি জমে কোমরে, পিঠে ব্যথার পাশাপাশি দেখা দিতে পারে পিসিওডির মতো গুরুতর সমস্যাও।’’ ঠিক পদ্ধতিতে ট্রেনারের পরামর্শ মতো নিয়মিত ২০ মিনিট থেকে আধঘণ্টা শারীরচর্চা চর্বি কমিয়ে দিতে পারে অল্প সময়েই।
কী কী ব্যায়াম করবেন?
প্রশিক্ষক সৌমেন দাসের মতে এই ধরনের ফ্যাট কমাতে প্রয়োজন স্পট রিডাকশন স্ট্রেচিং ওয়ার্কআউট।
মাটিতে বসে পা দু’টিকে স্ট্রেচ করুন সামনে। খেয়াল রাখবেন, হাঁটু যেন ভাঁজ না হয়। এ বার নিতম্বের উপরে ভর দিয়ে মাটিতে ঘষে সামনের দিকে এগোন দশ বার। একই ভাবে আসুন পিছনের দিকেও দশ বার। শারীরচর্চায় এই ব্যায়ামকে হিপ ওয়াকিং বলা হয়ে থাকে। ক্রমাগত মাটিতে ঘষা খাওয়ার ফলে শরীরের এই অংশের অতিরিক্ত চর্বি কমতে থাকে। নিয়মিত পাঁচ সেট করলে ফল পাওয়া যাবে শীঘ্রই। তবে মনে রাখবেন, এই ব্যায়াম কখনওই যোগ ম্যাটের উপরে করবেন না।
ডান হাতে টেনে ধরুন পিঠের পাশের দিকের অতিরিক্ত চর্বি। এ বার কাঁধের উপরে বাঁ হাতটিকে রেখে ঘোরান ক্লকওয়াইজ়। অন্তত দশ বার করার পরে একই ভাবে করুন বিপরীত দিকেও। এই ব্যায়াম করতে হবে অন্তত তিন সেট।
ডান পায়ের পাতার উপরে ভর দিয়ে গোড়ালি তুলে দাঁড়ান। বাঁ পা রাখুন ডান পায়ের কাফ মাসলের উপরে। এই অবস্থায় ডান পায়ের গোড়ালি আপ-ডাউন করুন দশ বার। একই পদ্ধতি অনুসরণ করুন অন্য পায়ের ক্ষেত্রেও। প্রয়োজনে চেয়ার বা দেওয়াল ধরেও করতে পারেন এই ব্যায়াম। এতে পায়ের কাফ মাসলের অতিরিক্ত মেদ ঝরে।
একটানা চেয়ারে বসে পড়াশোনা হোক কিংবা ল্যাপটপ, কম্পিউটারে মুখ গুঁজে কাজ। এতে চর্বি জমে পিঠের ঠিক মাঝখানে, যাকে বলা হয়ে থাকে স্ক্যাপুলা। ফলে কুঁজো লাগে মানুষকে। তখন ডিজ়াইনার ব্লাউজ় থেকে পশ্চিমি পোশাক ফিট হতে চায় না সহজে। এই ফ্যাট ঝরিয়ে ফেলতে, হাঁটু শক্ত করে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে অল্প শরীর ঝুঁকিয়ে নিন। কনুই ভাঁজ না করে দুই হাত সামনে টেনে ধরে পাঁচ গুনতে থাকুন। তার পর কনুই ভাঁজ করে হাত দু’টিকে পিঠের পিছনের দিকে টেনে রেখে আবারও পাঁচ গুনুন। দিনে দশ বার এই ব্যায়াম করলে পিঠের অতিরিক্ত মেদ কমবে।
ফিটনেস বিশারদ গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সাজাচ্ছেন দৈনন্দিন এই শারীরচর্চাকে। তাঁর মতে, এর জন্য অনুসরণ করতে হবে হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং। এর জন্য প্রথমে করে নিতে হবে হালকা জগিং বা ওয়াকিং। এর পর কুড়ি গজ দৌড়ে নিন চারবার। মাঝে বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারেন ৩০ সেকেন্ড করে। দৌড়ানো বা জগিংয়ে সমস্যা হলে স্পট রানিংও করতে পারেন।
এর পর করতে হবে ফ্লোর টুইস্ট। দু’হাত দু’ধারে রেখে পা একবার বাঁ দিক, একবার ডান দিকে ঘোরান। দশ সেকেন্ড করে মোট তিন সেট করুন।
তার পর ওয়াল টুইস্ট। দেওয়াল থেকে এক হাত এগিয়ে দাঁড়িয়ে হাত দু’টিকে সামনে রেখে বাঁ দিকে রোটেট করে ছুঁতে হবে দেওয়ালকে। একই ভাবে করতে হবে ডান দিকেও। পনেরো করে দু’দিকে করুন তিরিশ বার।
এবার পালা সাইড স্ট্রেচিংয়ের। দু’পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে, হাত দু’টি রাখতে হবে মাথার পিছনে। এবার একবার বাঁ দিকে, একবার ডান দিকে করতে হবে স্ট্রেচিং। পনেরো বার করে দু’সেট করাই যথেষ্ট।
চেয়ারে বসে কোমর থেকে পিছনে ডান দিকে যতটা পারবেন রোটেট করুন, তার পর একই ভাবে করুন বাঁ দিকেও।
বাইসাইক্লিং টুইস্ট: মাটিতে শুয়ে পেটের উপরে নব্বই ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে ভাঁজ করে রাখুন হাঁটু দুটি। এবার বাঁ হাঁটুতে চেষ্টা করুন ডান কনুই ছোঁয়াতে। একই ভাবে করুন উলটো দিকেও। মোট কুড়ি বার করুন এই ব্যায়াম।
সঙ্গে রাখুন
শারীরচর্চার সঙ্গে ব্যাকফ্যাট কমাতে সঙ্গী করুন ডায়েটকেও। সৌমেন দাসের মতে, “মূলত কার্বোহাইড্রেট কম খেয়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অর্থাৎ রাজমা, মাছ, চিকেন ইত্যাদি বেশি খেলে প্রথম দিকেই ওজন কমে তাড়াতাড়ি।” তা ছাড়া বেশি পরিমাণে খেতে হবে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। গুরুপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “শরীরের এ ধরনের ফ্যাট কমাতে নিয়ম মেনে খাওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন ঠিক ভাবে পেট পরিষ্কার রাখা। সে কারণেই প্রয়োজন শাকসবজি, ফল ইত্যাদি খাওয়া।” প্রশিক্ষকদের মতে, অন্তত প্রথম ১৫ দিন সারাদিনে একবার খান কার্বোহাইড্রেট।
রয়েছে আরও বেশ কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ়। নিয়মিত এই ধরনের ব্যায়ামে পনেরো থেকে কুড়ি দিনের মধ্যেই নজরে আসবে ফলাফল। পাশাপাশি করতে পারেন সুইমিংও। সাঁতার শরীরের অতিরিক্ত মেদ বিশেষত শরীরের পিছনের অংশ ও পেটের মেদ কমাতে উপকারী। তবে পুরোটাই নির্ভর করবে ব্যক্তির শরীর, ক্ষমতা ও অতিরিক্ত মেদ ঠিক কোন স্থানে জমেছে তার উপরে। তাই কোন ধরনের সমস্যায় এক্সারসাইজ় ও ডায়েট কী হবে, তা ঠিক করার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষকের পরামর্শ মেনে চলাই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy