Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
stroke

স্ট্রোকের ধাক্কা সামলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরায় এই পদ্ধতি, জেনে নিন খুঁটিনাটি

থ্রম্বাস বা রক্তের ডেলা গলায় বলে এর নাম ‘থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি’৷

স্ট্রোক হলে এক সেকেন্ডে মস্তিষ্কের কয়েক হাজার স্নায়ু ও কোষের ক্ষতি হয়৷ ছবি: শাটারস্টক।

স্ট্রোক হলে এক সেকেন্ডে মস্তিষ্কের কয়েক হাজার স্নায়ু ও কোষের ক্ষতি হয়৷ ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৯ ১৪:০৮
Share: Save:

কোলেস্টেরল জমে সরু হয়ে যাওয়া মস্তিষ্কের ধমনীতে রক্তের ডেলা জমে যে স্ট্রোক হয়, তাকে বলে ইস্কিমিক স্ট্রোক৷ এই ধরনের স্ট্রোকই বেশি দেখা যায়৷ এর চিকিৎসায় থ্রম্বোলাইটিক থেরাপির বিশেষ গুরুত্ব আছে৷ অ্যাটাক হওয়ার ৩–৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলে কাজ হয় সফল ভাবেই। নিউরোলজিস্ট প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত জানালেন এমন থেরাপির হালহদিশ।

থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি

ইস্কিমিক স্ট্রোক হওয়ার পর চার–সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে টিস্যু প্লাসমিনোজেন অ্যাক্টিভেটর জাতীয় ওষুধ শিরা বা কিছু ক্ষেত্রে ধমনীর মধ্যে দিয়ে দিতে হয়। এতে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে জমা রক্তের ডেলা গলে রোগীর অবস্থা ভাল হতে শুরু করে৷ থ্রম্বাস বা রক্তের ডেলা গলায় বলে এর নাম ‘থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি’৷

সামান্য কিছু ক্ষেত্রে তাতে কাজ না হলে সরু ক্যাথিটারের সাহায্যে ওই রক্তের ডেলা টেনে বার করে নেওয়া হয়, যাকে বলে ‘মেকানিকাল থ্রম্বেকটমি’৷ দু’–এক ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেশ ভাল ফল হয়৷ ৬ ঘণ্টার মধ্যে এলেও কাজ হয়৷ তার পর এলে আগের মতো ফল না হলেও চেষ্টা করা হয় যাতে ক্ষতির মাত্রা আর না বাড়ে৷

আরও পড়ুন: গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় প্রায়ই জেরবার? ওষুধ ছাড়াই সুস্থ থাকুন এ সব উপায়ে

আসলে স্ট্রোক হলে এক সেকেন্ডে মস্তিষ্কের কয়েক হাজার স্নায়ু ও কোষের ক্ষতি হয়৷ এক মিনিটে নষ্ট হয় প্রায় কুড়ি লক্ষ কোষ৷ এক বার নষ্ট হয়ে গেলে তাদের আর ঠিক করা যায় না৷ কাজেই সমস্যা হয়েছে মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করা উচিত৷ কিন্তু চিন্তার কথা, ১০০ জন মানুষের যদি এই চিকিৎসার দরকার থাকে, তবে মাত্র ৫–৬ জনকে তা দেওয়া সম্ভব হয়৷ কারণ—

স্ট্রোক হয়েছে তা বুঝতে না পারা, বাড়ির ডাক্তারকে ডেকে পাঠানো, কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে তা নিয়ে দ্বিমত, হাসপাতালের দূরত্ব ইত্যাদি মিলিয়েমিশিয়ে রোগী যখন শেষমেশ চিকিৎসকের কাছে এসে পৌঁছন, তত ক্ষণে ‘উইন্ডো পিরিয়ড’ অর্থাৎ যতটুকু সময়ের মধ্যে এই চিকিৎসা দিলে কাজ হতে পারে তা শেষ হয়ে যায়৷ ফলে চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল হয় না৷ দ্বিতীয় বাধা আসে খরচের দিক থেকে৷ স্বাস্থ্যবিমা না থাকলে মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে এক কথায় ৫০–৬০ হাজার টাকা বার করে দেওয়া সব সময় সম্ভব হয় না৷ তৃতীয় সমস্যা, দ্বিধাদ্বন্দ্ব৷ ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ওষুধে কিছু সমস্যা হয়৷ অনেক রোগী, কখনও চিকিৎসকও এই ঝুঁকি নিতে চান না৷ কারণ স্ট্রোক হলে হাত–পায়ের জোর কমবে বা মানুষ মারা যাবেন, এ সব কমবেশি মেনে নেন অনেকেই, এর যে কোনও পদ্ধতিগত চিকিৎসা আছে তা নিয়ে সচেতনতারও অভাব রয়েছে ৷ আবার কেউ কেউ ওই প্রাণের ঝুঁকিকেই বড় করে দেখেন। নিজের রোগীকে ওই ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে নিয়ে আশঙ্কিত হতে পরেন। ফলে চিকিৎসায় সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়।

আরও পড়ুন: পাতে চাই সোডিয়াম-পটাশিয়াম, কী কী খাবারে মিলবে এ সব?

স্ট্রোকের রোগীর ক্ষেত্রে রক্তচাপ ঠিক রাখা প্রয়োজন।

আনুষঙ্গিক চিকিৎসা

ইনটেনসিভ থেরাপি ইউনিটে রেখে ওষুধপত্র দিয়ে চিকিৎসা হয়৷ কিছু ক্ষেত্রে অপারেশন করতে হতে পারে। ডেডিকেটেড স্ট্রোক টিমের দৌলতে আজকাল চিকিৎসার ফলাফল অনেক ভাল হচ্ছে৷ এই টিমে নিউরোলজিস্টের সঙ্গে থাকেন জরুরি ও ট্রমা কেয়ার বিভাগের চিকিৎসক, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স, ফিজিওথেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট, ওয়ার্ড বয়৷ তাঁরা জানেন কোন পরিস্থিতি কী ভাবে সামলাতে হয়৷ সময়ে সময়ে ওষুধ দেওয়া, ঠিক মতো খাওয়ানো, রক্তচাপ ঠিক রাখা, বেডসোর যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা, চ্যানেল–ক্যাথিটার থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কি না সে দিকে খেয়াল রাখা ইত্যাদি দিকে কড়া নজর রাখতে হয় তাঁদের।

স্ট্রোক রিহ্যাবিলিটেশন

হাসপাতালেই শুরু হয় রিহ্যাবিলিটেশান৷ অর্থাৎ মানুষটিকে আগের কর্মময় স্বাভাবিক ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালোনো হয়৷

অভিজ্ঞ ফিজিকাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে কিছু ক্ষণ পর পর হাত–পা বিভিন্ন দিকে চালনা করা হয়, পাশ ফেরানো হয়৷ যাকে বলে প্যাসিভ ফিজিওথেরাপি৷ রোগী একটু সুস্থ হওয়ার পর শুরু হয় অ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি৷ তাঁকে বসানো ও হাঁটানোর চেষ্টা করা হয়৷ সারা দিনে যত বার সম্ভব৷ রিস্ট ড্রপ, ফুট ড্রপ বা কোনও রকম বিকৃতি এড়াতে রাত্রে স্প্লিন্ট পরিয়ে রাখতে হতে পারে৷ স্ট্রোকের পর শরীর কতটা সচল হবে তা নির্ভর করে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু নিজে থেকে কতটা ঠিক হবে তার উপর৷ ফিজিওথেরাপির উদ্দেশ্য, যত দিন না স্নায়ু কর্মক্ষম হচ্ছে তত দিন ব্যায়ামের সাহায্যে পেশি ও সন্ধিকে সচল রাখা৷ প্রথম দু’–এক মাস দ্রুত কাজ হয়৷ ৬ মাস পর্যন্ত গোল্ডেন টাইম৷ এক থেকে দেড় বছর পর আর ফিজিওথেরাপি চালিয়ে লাভ হয় না৷ হতাশা–অবসাদ কাটাতে মনোবিদের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিতে হয় রোগীকে কী ভাবে সামলাবেন৷ অনেক সময় অতিরিক্ত আগলে রাখলেও ক্ষতি হয়৷ রোগের ধরন অনুযায়ী ঠিক করতে হবে তা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy