সদ্য মুক্তি-পাওয়া ‘অপরাজিত’ ছবির নায়ক সত্যজিৎ তো ননই, ওরফে জীতু কমলও নন। ছবি: শৌভিক দেবনাথ
বেঁচে থাকলে মানিকবাবু হয়তো বলতেন, ‘‘ভাবাই যায় না!’’ আর তখন জনসন ও রনসনের মতো দুই সত্যজিৎ যদি পাশাপাশি দাঁড়াতেন, বলা শক্ত হত কোনটি আসল। কিন্তু এতে কী বা আসে-যায়! সদ্য মুক্তি-পাওয়া ‘অপরাজিত’ ছবির নায়ক সত্যজিৎ তো ননই, ওরফে জীতু কমলও নন। নায়ক নন পরিচালক অনীক দত্তও!
এই ছবির নায়ক এক জন, যাঁকে টলিপাড়ার বাইরে কেউ চেনেন না। সোমনাথ কুন্ডু। বাংলা ছবিতে কাজ করছেন ২৫ বছর। মেক আপ শিল্পী হিসাবে। কিন্তু সম্ভবত এই প্রথম এই রূপটান শিল্পীর অস্তিত্ব স্বীকৃতি পেল টালিগঞ্জের বাইরে।
বেঁচে থাকলে মানিকবাবু হয়তো বলতেন, ‘‘ভাবাই যায় না!’’
মেক আপ শিল্পীর অস্তিত্ব রয়েছে সৃষ্টির আদিকাল থেকে। মেক আপ ছাড়া নিশ্চয়ই মা দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করতে কৈলাস থেকে নামেননি। শিবও কি আর ছাই না মেখে বাইরে বেরোতেন? নাকি সিন্ধু সভ্যতার সময়কার সুন্দরীরাও প্রসাধনী ছাড়া ঘরের বাইরে পা রাখতেন!
তখন মেক আপ ছিল মুখে বিশেষ ধরনের মাটি বা চন্দন লাগানো। অথবা হলুদের মতো কোনও পদার্থ। না হলে গায়ে হলুদ লাগানোর প্রচলনই বা কেন এল বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে! বায়োস্কোপের প্রসার আর অভিনেত্রীদের জনচিত্তে অধিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রূপটান শিল্পীর প্রয়োজন আরও অনুভূত হল। সুন্দরীদের অবয়বের পিছনে মেক আপ শিল্পীদের অবদান কখনওই কম ছিল না। ‘‘আসলে কী জানেন, মেক আপ তো সব সময়েই করা হত। বিশেষ করে চলচ্চিত্রে মেক আপ করার প্রয়োজন পড়তই। কোন দিন আর মেক আপ ছাড়া কোনও ছবি হয়েছে?’’ বললেন টলিপাড়ায় প্রায় ৩০ বছর ধরে কাজ করা রূপটান শিল্পী অনিরুদ্ধ চাকলাদার।
কিন্তু তখন দিনকাল অন্য রকম ছিল। সুন্দরী মহিলাদের একটু লিপস্টিক বা মুখে সামান্য রুজ লাগিয়ে দেওয়া অধিকাংশ মেক আপ শিল্পীর মূল কাজ ছিল। এ বিষয়ে একমত ‘অপরাজিত’ ছবির চিত্রগ্রাহক সুপ্রতিম ভোল। তাঁর কথায়, ‘‘সিনেমা, ক্যামেরা যেমন বদলে গিয়েছে, তার নেপথ্যনায়কদের ভূমিকাতেও এসেছে পরিবর্তন।’’
এক কালে ততটা নজর দেওয়া হত না পুরুষদের মেক আপে। উত্তমকুমার যেমন উত্তমকুমারই থাকতেন সব ছবিতে। এখন সময় বদলেছে। কলকাতার জীতু হোন বা মুম্বইয়ের রাজকুমার রাও— এক-একটি ছবিতে বদলে যায় তাঁদের রূপ। যেমন সুপ্রতিম বলেন, ‘‘এখন তো পুরো মেক আপ করে তবে লুক টেস্ট হয়। চরিত্রের সঙ্গে মেক আপ মানানসই না হলে কোনও পরিচালক গ্রহণ করেন না। প্রযোজকরাও এ বিষয়ে বেশ নজর দেন।’’
একমত সোমনাথও। তিনি জানাচ্ছেন, আগে মেক আপ নিয়ে ভাবনাই ছিল অন্য রকম। সেটা ছিল স্রেফ নায়িকাদের সাজানো। শাড়ির সঙ্গে মেক আপের রং মিলল কি না, এ সব অনেক বেশি ভাবা হত। অনিরুদ্ধের বক্তব্য, ‘‘আমি যে বিবিএ পড়ে কেন মেক আপ করতে এলাম, তা নিয়ে কত জনে যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন! তাঁরা বলতেন, শেষে কি না রঙের বাক্স হাতে নিয়ে নায়িকাদের সঙ্গে ঘুরবি!’’ কিন্তু সে সব ধারণা অনেক দিন হল বদলে গিয়েছে। ‘‘এখন আমাদের কাজের ধরনে অনেক বদল এসেছে। মেক আপের গুরুত্ব বেড়েছে,’’ বলেন সোমনাথ। তাঁর সঙ্গে একমত পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, ‘‘যে কোনও ছবিতেই মেক আপের গুরুত্ব অপরিসীম। চরিত্র অনুযায়ী মেক আপের কথা ভাবা হয়। অনেক সময়ে আজকাল নো-মেক আপ লুক চাওয়া হয়। সেটা করতেও কিন্তু মেক আপ শিল্পীর উপরেই নির্ভর করতে হয়। নো-মেক আপ লুক মানে কিন্তু মেক আপ না করা নয়। মেক আপ শিল্পীকে ছাড়া চরিত্রের সে চেহারাও তৈরি যায় না।’’
‘অপরাজিত’।
তবে বিপ্লব এসেছে প্রস্থেটিক মেকআপের হাত ধরে। মেক আপের নতুন প্রযুক্তি। কৃত্রিম চেহারা তৈরি হয় এর মাধ্যমে। যেমন কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয় অস্ত্রোপচারের সাহায্যে, এ ক্ষেত্রে সেটিই হয় মেক আপ শিল্পীর হাতের গুণে। নায়িকা রূপসী কি না, তার উপর আর নির্ভরশীল নয় ছবি। প্রস্থেটিক মেক আপ সে দায়িত্ব নেবে। অভিনেত্রীর গুণ দেখার সুযোগও তাতে বাড়ছে বলে মত টলিপাড়ার একাংশের।
প্রস্থেটিক মেক আপের ব্যবহারে এক জন অভিনেতার চেহারা একেবারে অন্যের মতো করে দেওয়া যেতে পারে। মেক আপের শিল্প এখন এতটাই এগিয়ে গিয়েছে যে, উত্তমকুমারকে দেখানো যেতে পারে ছবি বিশ্বাসের মতো। যেমন জীতুকে দেখে মনে হচ্ছে চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সত্যজিৎ স্বয়ং!
এক কালে হলিউড, পরে মুম্বইয়ের নানা ছবিতে দেখা যেত প্রস্থেটিক মেক আপ। যেমন ‘চাচি ৪২০’ ছবিতে কমল হাসন হয়ে উঠেছিলেন অন্য রকম দেখতে এক মহিলা। অথবা হালের ছবি ‘পা’। কেউ বলে না দিলে কে বুঝতেন যে সত্তরের অমিতাভ বচ্চন অভিনয় করছেন বছর বারোর কিশোর অরোর চরিত্রে!
এমন উদাহরণ ভূরি-ভূরি রয়েছে মুম্বইয়ে। তারও আগে দেখা গিয়েছে বিদেশি ছবিতে। ফরাসি ছবি ‘আ ট্রিপ টু দ্য মুন’-এ প্রথম দেখা গিয়েছিল প্রস্থেটিক মেক আপের ব্যবহার। সেটা ১৯০২ সাল। তার পর একের পর এক ছবি তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কখনও ‘প্ল্যানেট অব দ্য এপ্স’, কখনও ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’ অথবা ‘টার্মিনেটর’।
সবেতেই মেক আপের গুণে তৈরি হয়েছে নানা রকম চরিত্রের চেহারা। অভিনেতার রূপ একেবারে বদলে দেওয়াই প্রস্থেটিক মেক আপের সাফল্য। যত নিপুণ হবে রূপটান, ততই নিখুঁত দেখাবে চরিত্র। তার আড়ালে হারিয়ে যাবে অভিনেতার আসল চেহারা। কোনও বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনের উপর নির্ভর করে যদি হয় ছবি, তবে দাবি আরও বাড়ে। অবিকল দেখাতে হবে সে ব্যক্তির মতো। যেমনটা ঘটেছে ‘অপরাজিত’র ক্ষেত্রে।
পরিচালকের অনীক দত্তের সঙ্গে চিত্রগ্রাহক সুপ্রতিম ভোল।
এত বছর প্রস্থেটিক মেক আপ তেমন ভাবে দেখা যেত না কলকাতার বাংলা ছবিতে। অভিনেতার থেকে চরিত্রের গুরুত্ব যত বেশি বাড়ছে বাংলা ছবিতে, ততই প্রস্থেটিক মেক আপেরও গুরুত্ব বাড়ছে। ১৯৯৪ সালে যখন কাজ শুরু করেন এ কালের অন্যতম নামী রূপটান শিল্পী অনিরুদ্ধ, তখনও তারকাদের সাজিয়ে তোলার গুরুত্ব ছিল। তবু শিল্প হিসাবে তেমন জোর ছিল না রূপটানের। অনিরুদ্ধ মনে করান, ‘‘রূপটান শিল্পীর কাজ যে আলাদা করে নজর করার, সে সচেতনতা তৈরি হয়েছে হালে। নেটমাধ্যমের এই জমানায়। এমন নয় যে, বছর কুড়ি আগে প্রশংসা পাইনি। তবে সহকর্মীদের প্রশংসা পাওয়া আর আলাদা করে কোনও ছবির রূপটান শিল্পীর কাজ দর্শকের নজরে পড়া— দুটো আলাদা।’’
কাজের সময়ে অনিরুদ্ধ খেয়াল করেছেন, সার্বিক ভাবেই দিন দিন ছবিতে অভিনেতার চেহারা চরিত্রের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য স্বাভাবিক রূপ আরও ভাল ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা দেখা গিয়েছে বিভিন্ন ছবিতে। বাংলাও তার বিকল্প নয়। তা থেকেই ধীরে ধীরে প্রস্থেটিক মেক আপের দিকে ঝোঁক গিয়েছে। বাংলা ছবিতে প্রস্থেটিক মেক আপের ব্যবহারের আগ্রহ আগে সে ভাবে দেখা না গেলেও সোমনাথের চেষ্টা ছিল অনেক দিন ধরেই। তিনি নিজেই বলেন, ‘‘আমি বহু বিদেশি পত্রিকা কিনতাম। সেখান থেকে শেখার চেষ্টা করতাম, কী ভাবে প্রস্থেটিক্সের ব্যবহারে একেবারে অন্য রকম করে দেওয়া যায় এক জনের চেহারা।’’
মেকআপ শিল্পী অনিরুদ্ধ চাকলাদার খেয়াল করেছেন, সার্বিক ভাবেই দিন দিন ছবিতে অভিনেতার চেহারা চরিত্রের সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য স্বাভাবিক রূপ আরও ভাল ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা দেখা গিয়েছে বিভিন্ন ছবিতে।
সোমনাথ বোঝাতে থাকেন, ‘‘অপরাজিতর জন্য সত্যজিৎ রায়ের চেহারা খুব ভাল ভাবে লক্ষ করেছি আমি। অনেক দিন ধরে লেখাপড়া করেছি। ওঁর গালের দাগগুলি, থুতনির আঁচিল, গলার ভাঁজ— সব এখানে খেয়াল করে তৈরি করা হয়েছে। জীতুকে বলেছিলাম, ও যেন কোনও ভাবেই নিজে চুল না কাটে। চল্লিশের দশকে শুরু হচ্ছে ছবিটি। সে সময়ে চুলের এক ধরনের কায়দা ছিল। খানিকটা এলভিস প্রেসলি ঘরানা। সে সব কথাও মাথায় রাখা হয়েছে চরিত্রের মেক আপের সময়ে।’’
এই ছবির নায়ক এক জন, যাঁকে টলিপাড়ার বাইরে কেউ চেনেন না। সোমনাথ কুন্ডু।
প্রস্থেটিক্স রূপটানের কাজ সোমনাথের এই প্রথম নয়। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের একাধিক ছবিতে চরিত্রের চেহারার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। সৃজিত নিজেই উল্লেখ করেন ‘ভিঞ্চি দা’ ছবির কথা। পরিচালক বলেন, ‘‘এক কালে বিশেষ ধরনের কোনও রূপটানের প্রয়োজন পড়লে মুম্বই থেকে শিল্পীদের নিয়ে আসা হত। এখন কলকাতায় মেক আপ শিল্প অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। প্রস্থেটিক মেক আপ বেশ উন্নত মানের হতে হয়। সোমনাথের সঙ্গেই আমি আগে কাজ করে দেখেছি এখন কলকাতার শিল্পীরাই অনেক ধরনের লুক তৈরি করতে পারেন। ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘জুলফিকর’, ‘গুমনামি’-র মতো ছবিতে সফল ভাবে কাজ করেছেন সোমনাথ। আর ‘ভিঞ্চি দা’ ছবির বেশ কিছু অংশ তো ব্যক্তি সোমনাথের কথা মনে রেখেও তৈরি হয়েছিল।’’ প্রস্থেটিক মেক আপ কারও চেহারা কতটা বদলে দিতে পারে, তা-ই তো তুলে ধরেছে সে ছবি।
সোমনাথ এই সাফল্যে আনন্দিত। তবে পেরিয়ে এসেছেন অনেক কঠিন পথ। তিনি বলেন, ‘‘এখন উন্নততর ক্যামেরা সব। রূপটান ভাল না হলে তাতে সব ধরা পড়ে যায়। আগে তো এত কিছু ভাবার সুযোগ পেতেন না কেউ। এখন আমরা কত চিন্তা করি চরিত্রের লুক নিয়ে। চুলের কায়দা, গায়ের রং— সব নিয়ে ভাবি। বাজেটও ধরা হয়।’’
পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাংলা ছবিতে মেক আপ এখন একটা পরিণত জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে।’’
আনন্দবাজার অনলাইনকে সাক্ষাৎকারে জীতু জানিয়েছিলেন, ‘মানিকবাবু’ হয়ে ওঠার জন্য কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁকে। তবে সোমনাথবাবুর শ্রমও ছিল সমান। গালের ব্রণ থেকে চুলের ছাঁট— সবটা অবিকল সত্যজিতের মতো করে তোলার কৃতিত্ব দেন মেকআপ শিল্পীকে। ‘অপরাজিত’ ছবিতে নায়কের চেহারা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে প্রশংসাও কম পাননি জীতু ও সোমনাথ। টলিপাড়ার অনেকেই বলেছেন, জীতুকে যেন চেনাই যাচ্ছে না। সৃজিতও বলেন, ‘‘বাংলা ছবিতে মেকআপ এখন একটা পরিণত জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে।’’
তার প্রয়োজনও রয়েছে। সুপ্রতিমের কথায়, ‘‘মেকআপ সূক্ষ্ম না হলে এখনকার উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরা সঙ্গে সঙ্গে ধরিয়ে দেবে। অবশ্য ত্রুটি ঢাকার প্রযুক্তিও উন্নত হচ্ছে। কিন্তু নিখুঁত ছবির জন্য চরিত্রের চেহারা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’ আর সে কথা যত বেশি লক্ষ্য করছেন পরিচালক-প্রযোজকেরা, তত বেশি নজর যাচ্ছে রূপটানে। সৃজিত যেমন আলাদা করে উল্লেখ করেন, ‘‘কলকাতায় রূপটান শিল্পীদের কাজ উন্নত হচ্ছে বলে আমাদের ছবি বানানোর খরচও খানিকটা নিয়ন্ত্রণে থাকছে। আগে বিশেষ ধরনের মেক আপ করানোর জন্য বাইরে থেকে শিল্পীদের আনতে হত। তাতে খরচ বাড়ত।’’
প্রস্থেটিক মেক আপ কারও চেহারা কতটা বদলে দিতে পারে, তা তুলে ধরেছে ‘ভিঞ্চি দা’ ।
কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড, তিনি বেঁচে থাকলে কী করতেন? সত্যজিৎ কি প্রস্থেটিক মেক আপের দিকে ঝুঁকতেন? তিনি কিন্তু সাধারণ ‘ন্যাচরাল মেকআপ’, ‘ন্যাচরাল আলো’ ব্যবহার করেছেন বেশি। সর্বজয়ার প্রস্থেটিক মেকআপ হবে শুনলে হয়তো বলতেন, ‘‘পাগল!’’ তার চেয়ে চরিত্রের চেহারা ফুটিয়ে তোলার উপযুক্ত অভিনেতাকেই খুঁজে বার করতেন। এক কথায় বলতে গেলে প্রস্থেটিক মেক আপ শিল্পী নয়, প্রস্থেটিক অভিনেতার সন্ধান চলত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy