রক্তের অসুখে আক্রান্তদের কোভিডের ঝুঁকি বাড়ে।
কোভিড-১৯-এর ভয়ানক দাপটে অন্যান্য অসুখের কথা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। আর তারই মারাত্মক ফল পেতে হচ্ছে হাতেনাতে। অন্যান্য ক্রনিক অসুখে আক্রান্তরা করোনা সংক্রমণের ভয়ে নিজেদের চিকিৎসার জন্যে চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এর ফলে তাঁদের অসুখ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া-সহ নানা ক্রনিক রক্তের অসুখের রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে কিছুটা কম হওয়ায় এঁদের কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের প্রবণতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। বলছিলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান তুফানকান্তি দলুই।
আমাদের দেশে এই মুহূর্তে প্রায় ৬৭ হাজার মেজর থ্যলাসেমিয়ার রোগী আছেন। এ ছাড়া মাইনর থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলা, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া ও রক্তের নানা ক্যানসার মিলে প্রতি ১ লক্ষে ৫-৬ জন রোগী আছেন, যাদের চিকিৎসা চলছে। লকডাউনের জেরে চিকিৎসা করানো বন্ধ করে দিলে এক দিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে, অন্য দিকে রোগ জাঁকিয়ে বসার সম্ভাবনা থাকবে।
আরও পড়ুন: ফুসফুস, কিডনি, হার্ট... কোভিডে আক্রান্ত হলে সব ক্ষেত্রেই হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি
টেলিফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গে থ্যালাসেমিয়া ও অন্যান্য রক্তের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এদের অনেকের বসবাস গ্রামাঞ্চলে। লকডাউনের ফলে থ্যালাসেমিয়া-সহ অন্যান্য রক্তের অসুখের রোগীদের ফলো আপ চিকিৎসা প্রায় বন্ধের মুখে। এদের মধ্যে অনেককে আবার নিয়মিত রক্ত নিতে হয়। করোনার ভয়ে অনেকে হাসপাতালে ব্লাড ট্র্যান্সফিউশন করাতেও যেতে পারছেন না। ফলে তাঁদের অসুখ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
থ্যালাসেমিয়া অসুখটা ঠিক কী?
থ্যালাসেমিয়া মূলত একটি বংশগত অসুখ। এই রোগে রক্তের হিমগ্লোবিন তৈরি করে এমন দুটি জিন অস্বাভাবিক থাকে। এই অস্বাভাবিকতার রকম ফেরে আলফা থ্যালাসেমিয়া মেজর, বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর, থ্যালাসেমিয়া মাইনর ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের থ্যালাসেমিয়া দেখা যায়। আমাদের রাজ্য তথা দেশে থ্যালাসেমিয়া বলতে বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজরই বোঝায়। এদেশে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মহারাষ্ট্রে এই সমস্যার প্রকোপ বেশি। ভারতে প্রতি ঘন্টায় এক জন করে থ্যালাসেমিয়া-যুক্ত শিশু জন্ম নিচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া ট্রেটরা আসলে এই রোগের বাহক বা ক্যারিয়ার। দু’টি জিনের একটি খারাপ থাকায় এদের শরীরে কোন রোগলক্ষণ থাকে না কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মে এরা রোগটিকে বয়ে নিয়ে যায়।
থ্যালাসেমিয়া-সহ রক্তের অসুখের রোগীদের কাছে করোনা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
থ্যালাসেমিয়া মাইনর বা থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমিডিয়া রোগীদের আসলে খুবই মৃদু ধরনের থ্যালাসেমিয়া থাকে। সে জন্য যেখানে থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগীদের মাসে এক থেকে তিন বার রক্ত নিতে হয় সেখানে থ্যালাসেমিয়া মাইনরে প্রতি এক বছর বা দুই বছর অন্তর রক্ত নিতে হয় বা অনেক সময় রক্ত না নিলেও চলে। যে কোনও থ্যালাসেমিয়াতেই অ্যানিমিয়া থাকে। এ ছাড়া লিভার, কিডনি বা হার্টে আয়রন জমে বলে চিকিৎসকদের সঙ্গে এদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখাও প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন: এ বার তো বাইরে বেরনো বাড়বে, কী কী মেনে চলবেনই
রক্তের অসুখে কোভিড-১৯ কো-মর্বিডিটির কারণ হতে পারে
হার্টের অসুখ, ডায়াবিটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতোই থ্যালাসেমিয়া-সহ রক্তের অসুখের রোগীদের কাছে করোনা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এদের সংক্রমনের ঝুঁকি বেশি। তাই এই বিশ্ব মহামারির সময় নিয়ম মেনে বাড়িতে থাকতে হবে। বাজার-দোকানে যাওয়া একেবারে মানা। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা মাস্ক পরার মতো সাধারন নিয়ম মানতেই হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে চরম বিপদের ঝুঁকি থাকে।
রক্তের রোগীদের কোভিড-১৯ এর উপসর্গ
থ্যালাসেমিয়া-সহ ক্রনিক রক্তের অসুখে অনেক সময় করোনার প্রচলিত উপসর্গ নাও থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আর পাঁচ জনের মতোই জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট দিয়ে রোগের লক্ষণ শুরু হয়। কিন্তু রক্তের অসুখে সামান্য দূর্বলতা, গা ম্যাজম্যাজ আর তার পরেই শুরু হয় প্রবল শ্বাসকষ্ট। তাই কোনও রকম শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলেই দ্রুত সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করতে হবে। এখন বেশির ভাগ গ্রামের হেল্থ সেন্টারে থ্যালাসেমিয়া ও অন্যান্য রক্তের অসুখের কাউন্সিলর আছে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সঠিক পরামর্শ পাওয়া যাবে বলে জানালেন তুফানকান্তি দলুই।
রক্ত নেওয়ার দরকারে দেরি নয়
থ্যালাসেমিয়া ও হিমোফিলিয়া-সহ ক্রনিক রক্তের অসুখ থাকলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্ত নেওয়ার দরকার হয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিতে বললেন তুফানবাবু। দরকারে একাধিক বার ফোন করুন। ব্লাড ট্রান্সফিউশনের নির্ধারিত সময় পনেরো-কুড়ি দিন পর্যন্ত পেছিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে জরুরি ভিত্তিতে রক্তের দরকার হলে নিকটবর্তী হাসপাতালে যেতে হবে। মাস্ক, ফেস শিল্ড-সহ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে তবেই বাড়ির বাইরে বেরনোর পরামর্শ দিলেন তুফানবাবু। যে কোনও শারীরিক অসুবিধের সম্মুখীন হলে তা গোপন না করে বাড়িতে জানিয়ে অবশ্যই হেমাটোলজিস্টের পরামর্শে সঠিক চিকিৎসার সাহায্য নিলেই অসুখ অনেকটা সামাল দেওয়া যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy