গরমকাল মানেই ঠান্ডা পানীয়ের অবিরাম হাতছানি! বাজারচলতি সফ্ট ড্রিঙ্কসের কুপ্রভাব জানা সত্ত্বেও লোভ সংবরণ করা কঠিন। গরমে তৃষ্ণা ও স্বাদ, পুষ্টি এবং ইচ্ছের মেলবন্ধন ঘটতে পারে স্মুদির চুমুকে। রেস্তরাঁর বাহারি স্মুদিতে অনেক বেশি পরিমাণে চিনি, ফ্রুট জুস বা সিরাপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে চাইলে বাড়িতে নানা স্বাদের স্মুদি বানিয়ে ফেলা যায়। এতে পুষ্টিগুণও অটুট থাকে। গরমের দিনে কাজের জায়গায় বা অন্যত্র ফ্লাস্ক বা বোতলে করে স্মুদি নিয়ে যাওয়া অসুবিধের নয়।
স্মুদির পুষ্টিগুণ
* ডায়াটিশিয়ান সুর্বণা রায়চৌধুরী এবং প্রিয়া আগরওয়াল একমত, স্মুদির প্রাথমিক কাজ শরীর ঠান্ডা রাখা। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় এই মরসুমে ঘামের পরিমাণ বাড়ে। তখন শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে স্মুদি।
* প্রিয়ার কথায়, ‘‘স্মুদিতে সাধারণত থাকে ঋতুকালীন একটি বা দু’টি ফল, সবুজ আনাজপাতি এবং স্বাদ বাড়ানোর জন্য দই, ক্রিম, আইসক্রিম বা অ্যাভোকাডো দেওয়া যেতে পারে।’’ সুবর্ণা বললেন, ‘‘স্মুদির ক্ষেত্রে কোন ফল বাছা হবে, সেটা নির্ভর করবে ব্যক্তির দৈহিক ওজনের উপরে। ওজন বাড়ানো না কমানো, উদ্দেশ্য অনুযায়ী ছোট এবং প্রাপ্তবয়স্করা স্মুদির উপকরণ বেছে নেবেন।’’ ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রেও ফলের নির্বাচন দেখেবুঝে করতে হবে।
* মুসাম্বি, কমলালেবু, তরমুজ জাতীয় ফল থেকে উন্নত মানের ভিটামিন সি পাওয়া যায়। সবুজ শাকপাতা থেকে পাওয়া যায় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। সাধারণত পালং শাক, লেটুস, পার্সলে, বেসিল স্মুদিতে ব্যবহার করা হয়।
* সবুজ শাকপাতা থাকায় স্মুদি কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
* প্রোটিন ড্রিঙ্ক হিসেবেও অনেকে স্মুদি পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে প্রোটিন পাউডারের বদলে দই, ছানা বা নারকেলের দুধ দিয়ে তৈরি করলে স্বাদ ও পুষ্টির ভারসাম্য বজায় থাকে।
* স্মুদি মুড-লিফ্টিং পানীয়। শরীর তরতাজা করার পাশাপাশি মন-মেজাজও ভাল করে দেয় এটি।
বাড়ির হেঁশেলে
বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত কয়েকটি স্মুদি তৈরির হদিস দিলেন ডায়াটিশিয়ান প্রিয়া আগরওয়াল।
* শরীরে প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে এই পানীয়। এর জন্য লাগবে একটি কিউয়ি, ২৫ গ্রাম পালংশাক এবং ২০০ মিলিলিটার নারকেলের দুধ। মিক্সার বা ব্লেন্ডারে তৈরি করে নিতে পারেন এই স্মুদি। শরীরে লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেতরক্তকণিকার ভারসাম্য বজায় রাখতেও কাজে দেয়
এই পানীয়।
* গ্যাস-বদহজমের মতো সমস্যায় কাজে দিতে পারে একটি ফ্রোজ়েন কলা, একটি বীট এবং একটি নাশপাতির মিশ্রণে তৈরি স্মুদি।
* গরমে ঠান্ডার ছোঁয়া পেতে তৈরি করতে পারেন নিম্নলিখিত স্মুদি দু’টি। শসা, মিন্ট এবং নারকেলের দুধ দিয়ে তৈরি করা যায় স্মুদি। একটি গ্রিন আপেল, ২৫ গ্রাম পুদিনা পাতা এবং এক টেবিল চামচ মধু দিয়েও তৈরি করে নিতে পারেন স্মুদি।
ছোটদের জন্য স্মুদি
বাড়ির ছোটদের স্মুদি বিশেষ পছন্দের। ফলের রস বা কাঁচা ফল খেতে না চাইলে স্মুদির আকারে তা দেওয়া যেতে পারে। সুবর্ণা বললেন, ‘‘যে বাচ্চাদের ওজন বেশি, তাদের ক্ষেত্রে কলা না দেওয়া হলেই ভাল। মুসাম্বি, কমলালেবু দিয়ে তাদের স্মুদি তৈরি করে দেওয়া যায়। আবার ওজন বাড়াতে চায় এমন শিশুদের জন্য কলা দেওয়া যেতে পারে।’’ প্রিয়ার কথায়, ‘‘ছোট বা বড় যারাই ওজন সম্পর্কে সচেতন, তারা চিনির বদলে ভেজানো খেজুর বেটে ড্রিঙ্কে মেশাতে পারেন। বাদামজাতীয় কিছু দিতে চাইলে পিনাট বাটার, ক্যাশিউ বাটার দেওয়া যেতে পারে।’’ সুবর্ণার মতে, ছোটদের স্মুদি খাওয়ার দিকে নজর রাখা প্রয়োজন। ঘন ঘন খেলে দাঁতের সমস্যা হতে পারে।
ছোটদের স্বাদ বুঝে কয়েক ধরনের স্মুদির সন্ধান দিলেন প্রিয়া:
* গরমের দিনে আম, আনারস শিশুরা পছন্দ করে। আম, কমলালেবু এবং গাজর দিয়ে স্মুদি তৈরি করা যায়। কমলালেবু, পিচ এবং ক্রিম দিয়ে বানিয়ে দিতে পারেন আপনার খুদের জন্য। এ ছাড়া ব্লুবেরি, চিকুর সঙ্গে নারকেলের দুধ দিয়েও বানানো যায় স্মুদি। একটি ফ্রোজ়েন কলা, এক কাপ স্ট্রবেরি এবং এক কাপ গ্রিক ইয়োগার্ট দিয়েও সুস্বাদু স্মুদি তৈরি করা যায়।
* ছোটদের স্মুদিতে চকলেট, চিজ় বা কোকো পাউডার দেওয়া যেতে পারে। সকালের জলখাবারে এক গ্লাস স্মুদি অনেকটাই পেট ভরিয়ে দেয়। তাই এর পরে শিশুকে অন্য খাবার খাওয়ার জন্য জোর না-ও করতে পারেন।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য
ডায়াবেটিক রোগীর স্মুদিতে চিনির পরিমাণে নজর রাখতে হবে। ফলের (১৫০-২০০ গ্রাম) পরিমাণ বেশি যেন না হয়। দুধ ডাবল টোনড হলে ভাল। সবুজ শাকপাতা যেন বেশি থাকে এই রোগীদের ড্রিঙ্কে।
স্মুদির শীতলতা জুড়িয়ে দিক প্রাণ-মন। ভাল থাকুক স্বাদ-স্বাস্থ্যও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy