মডেল: নয়নিকা সরকার
কথায় বলে, কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। অথচ কুচকুচে কালো বস্তুটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে ত্বকের ময়লা টেনে নেওয়ার চৌম্বক শক্তি। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে কয়লার মতো দোসর আর কে হতে পারে! কিন্তু তা বলে এখনই কিছুটা পোড়া কয়লা বার করে নিলেন কিংবা বারবিকিউ করার পরে অবশিষ্ট কাঠকয়লা তুলে রাখলেন ত্বক পরিচর্চার জন্য, এতে হিতে বিপরীতই হবে। রান্নায় ব্যবহৃত বা গ্রিল করার কয়লা রূপচর্চায় কখনওই ব্যবহার করা হয় না। ত্বকচর্চায় চাই পরিশোধিত কয়লা বা অ্যাক্টিভেটেড চারকোল।
কোথায় পাব কয়লা
বিভিন্ন জৈব পদার্থ যেমন হাড়, পাটকাঠি, নারকেলের খোলা, জলপাই কাঠ ইত্যাদি পুড়িয়ে তৈরি হয় কয়লা। কিন্তু সাধারণ কয়লার সঙ্গে সক্রিয় চারকোলের পার্থক্য হল, সাধারণ কয়লাকে রূপচর্চায় ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে গ্যাস ও স্টিম দিয়ে পরিশোধিত করা হয়। কোনও বিষাক্ত উপাদান ব্যবহার হয় না এটি তৈরি করতে। আর এই পরিশোধিত কয়লাই ত্বকের ময়লা পরিষ্কারের দাওয়াই।
ত্বকের দূষণ রুখতে
সৌন্দর্যচর্চায় এই পরিশোধিত কয়লার সঙ্গে ভাব জমালেই ত্বকের দূষণকে জব্দ করা যায়। মজার কথা, নিজের ওজনের চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ গুণ বেশি ওজনের ময়লা ত্বক থেকে শোষণ করতে পারে এক একটি চারকোল কণা। রূপ বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বিভিন্ন কাজের তাগিদে অধিকাংশ সময়েই যাঁদের বাইরে থাকতে হয়, তাঁদের জন্য পরিশোধিত চারকোল ফেসমাস্ক খুবই কার্যকরী। এই মাস্ক ত্বকের অতিরিক্ত তেল, ময়লা দূর করে মৃত কোষ তুলে এনে ত্বক করে তোলে প্রাণবন্ত। বাজারচলতি অ্যাক্টিভেটেড চারকোল মাস্ক ছাড়াও আছে ডিটক্স চারকোল ফেসিয়াল।
চারকোল ফেসিয়াল
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের পরিবর্তনও স্বাভাবিক। কম বয়সে ত্বক অবহেলা করলেও মধ্য বয়সে তা করা উচিত নয়। সময়কে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু পরিশোধিত চারকোলের গুণে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না। কয়লার কণা শরীর থেকে টক্সিন ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ সহজেই দূর করে। চামড়ার কুঁচকে যাওয়াও আটকে দেয়। বলিরেখা পড়তে দেয় না। খসখসে উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি বলে ত্বকের অতিরিক্ত তেল, মৃত কোষ তুলতে এর জুড়ি মেলা ভার। ত্বক ভাল রাখতে চারকোল ফেসিয়ালই তুরুপের তাস। চারটি ধাপে এটি করা হয়। ক্লেনজ়িং থেকে শুরু করে ট্যান রিমুভ করার পরে দেওয়া হয় অয়েল সেরাম। শেষে মাসাজের সাহায্যে ফিরে আসে ত্বকের হারানো প্রাণ। মনে রাখবেন, যে কোনও ফেসিয়ালের তুলনায় অনেক গভীরে গিয়ে পরিষ্কার করতে পারে চারকোল। এর ব্যবহারে দীর্ঘমেয়াদি সুফলও পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই চারকোল ফেসিয়াল করবেন।
ব্রণর অব্যর্থ দাওয়াই
ত্বকের ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়া দূর করতেও অ্যাক্টিভেটেড চারকোলের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণর সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে ব্রণর দাগও মিলিয়ে যায়।
বাড়িতেই তৈরি করুন প্যাক
সময়ের অভাবে সালঁয় যাওয়া সম্ভব না হলে বাড়িতেই চারকোল প্যাক তৈরি করতে পারেন।
• তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যায় পরিমাণ মতো অ্যাক্টিভেটেড চারকোল গুঁড়ো, দু’টেবিল চামচ অ্যালো ভেরা জেল এবং চার ফোঁটা টি ট্রি অয়েল বা গোলাপজল মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। মুখে এবং গলায় মেখে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন।
• শুষ্ক ত্বকের জন্য পরিমাণ মতো অ্যাক্টিভেটেড চারকোলের সঙ্গে টক দই, যে কোনও মরসুমি ফল এক টুকরো থেঁতো করে, চার ফোঁটা মধু বা ল্যাভেন্ডার তেল বা যে কোনও এসেনশিয়াল তেল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। মুখে ও গলায় লাগিয়ে ২০ মিনিটের বেশি রাখবেন না। শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া অবধি রাখা চলবে না। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
তা হলে আর দেরি কেন? নিষ্প্রভ প্রাণহীন ত্বক কয়লার কালো ম্যাজিকেই ফিরে পাক নতুন জীবন। আর তা হয়ে উঠুক সুন্দর হয়ে ওঠার চাবিকাঠিও।
ছবি: অমিত দাস, সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায় (প্যাকের ছবি)
মেকআপ: সুমন গঙ্গোপাধ্যায়, লোকেশন: বিবোনি, কসবা নিউ মার্কেট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy