পৃথিবীটা ছোট হতে হতে মুঠোফোনে এখন বন্দি—গত দেড় বছরে বাড়ির ছোটদের জন্য এ কথা সব দিক দিয়ে সত্যি। ক্লাসরুম হয়ে গিয়েছে ভার্চুয়াল। ফোনে গেম খেলা আগেও ছিল। তবে বাড়ির বাইরে খেলার সুযোগ কমে যাওয়ায়, মোবাইল গেম ছোটদের এখন একমাত্র বিনোদনের পথ। অতঃ কিম? মোবাইলের পর্দায় নাগাড়ে চোখ রাখতে রাখতে স্ক্রিনটাইম যাচ্ছে বেড়ে। দেখা দিচ্ছে চোখের সমস্যা। স্কুল স্বাভাবিক ছন্দে না ফেরা অবধি, ছোটদের ক্ষেত্রে স্ক্রিনটাইম হঠাৎ করে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু চোখের সমস্যা এই বয়স থেকে বাড়তে শুরু করলে, তা আগামীর জন্য মোটেও ভাল নয়। তাই কয়েকটি বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা খুব জরুরি।
ছোটদের চোখের
সমস্যার উপসর্গ
চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুমিত চৌধুরীর মতে, ‘‘ছোটদের চোখের সমস্যা নিয়ে অভিভাবকেরা আসছেন। অনেক ক্ষেত্রে পাওয়ার দেখা যাচ্ছে। তবে স্ক্রিনটাইম বেড়েছে বলেই পাওয়ার হচ্ছে, এমনটা বলা যায় না। কারণ শিশুটির আগে থেকেই পাওয়ারের সমস্যা ছিল কি না, তা বাবা-মায়েরা জোর দিয়ে বলতে পারেন না।’’ যে উপসর্গগুলি ছোটদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে, তা হল—
নাগাড়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে ড্রাই আইজ় বা চোখ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা বাড়ে। শিশুরা চোখ কচলাতে শুরু করে তখন।
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনলাইনে ক্লাস করলেও ড্রাই আইজ়ের সমস্যা বাড়ে।
টেলিভিশন বা ট্যাবের দিকে চোখ কুঁচকে দেখাও চোখের সমস্যার উপসর্গ হতে পারে।
অনেক অভিভাবক বলছেন, বিকেল থেকেই তাঁদের সন্তানের মাথাব্যথা শুরু করে। অন্য রোগের সঙ্গে চোখের কারণে এই ব্যথা কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।
চোখ থেকে জল পড়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসা
কোনও শিশুর যদি চোখ পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, তার পাওয়ার হয়েছে, তবে তাকে চশমা দিতেই হবে। তার সঙ্গে লুব্রিকেটিং ড্রপও দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু সেই পর্যায়ে যাওয়ার আগে অবধি অভিভাবকদেরও কয়েকটি বিষয়ে নজর দিতে হবে।
স্ক্রিনটাইম বাঁচিয়ে চোখ ভাল রাখা
ডা. চৌধুরীর মতে, ‘‘স্ক্রিনটাইম বেঁধে দেওয়া খুব মুশকিল। কারণ অনলাইনে পরপর ক্লাস চলতে থাকে। তবে এক ঘণ্টা ক্লাস হলে বেশ কিছুক্ষণ বিরতি দিতে হবে। যাতে ওই সময়টুকু শিশুকে স্ক্রিনের দিকে না তাকাতে হয়।’’
স্ক্রিনটাইম বাড়লে বারবার চোখে জলের ঝাপটা দিতে হবে। ছোটরা নিজে থেকে হয়তো সেটা করে না। তাই অভিভাবককে এ বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে।
বেশি করে জল খেতে হবে। সঙ্গে ফলের পরিমাণও বাড়াতে হবে। চিকিৎসকদের মতে, শরীরকে রি-হাইড্রেটেড রাখা খুব দরকার।
নাগাড়ে স্ক্রিনের দিকে না তাকিয়ে মাঝেমাঝে এ-দিক ও-দিক তাকাতে হবে। শিশুর চোখের পাতা যেন পড়ে, সেই দিকটি নিশ্চিত করতে পারলে ভাল।
মোবাইলের বদলে ট্যাব বা ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে শিশুকে কাজ করতে দিলে, তুলনায় চোখ আরাম পায়। স্ক্রিন যত বড় হবে, চোখের উপরে চাপও কম পড়বে।
অনলাইন ক্লাসে লেখার হরফগুলোর সাইজ় বাড়িয়ে নেওয়া, ট্যাব বা মোবাইলের ব্রাইটনেস যথাযথ মাত্রায় রাখা চোখকে আরাম দেওয়ার জন্য দরকার।
যে সব শিশুর মাইনাস পাওয়ার, তারা সব সময়ে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকলে, শর্ট সাইটেডনেস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই তাদের ক্ষেত্রে বাইরে খেলাধুলো করার সুযোগ করে দেওয়া খুব জরুরি।
স্ক্রিনটাইম বেড়ে যাওয়া অতিমারির অভিশাপ। প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে ছোটদের উপরে এর বিরূপ প্রভাব বেশি। তাই পড়াশোনা, বিনোদনের জগৎকে বাঁচিয়ে ছোটদের চোখ ভাল রাখতে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy