দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনের ‘এডুগ্রাফ এইট্টিন আন্ডার এইট্টিন’-এর অনুষ্ঠানে ১৮ বছর বয়সের নীচের ১৮ জন কৃতী স্কুলপড়ুয়াকে সম্মান জানালেন উদ্যোক্তারা। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
গাড়ি-ঘোড়া চড়ার জন্য সব সময়ে লেখাপড়া করতে হয় না। রোলার স্কেট, রুবিক কিউবে মন দিলেও দিব্যি হতে পারে বংশের মুখ উজ্জ্বল!
বুধবার ছিল দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইনের ‘এডুগ্রাফ এইট্টিন আন্ডার এইট্টিন’-এর সেরা ১৮-র নাম ঘোষণার দিন। সাউথ সিটি স্কুলের প্রেক্ষাগৃহে জড়ো হয়েছিলেন পড়ুয়া, অভিভাবক, শিক্ষকেরা। ১৮ বছর বয়সের নীচের ১৮ জন কৃতী স্কুলপড়ুয়াকে সম্মান জানালেন উদ্যোক্তারা। লেখাপড়ায় অসাধারণেরা তো ছিলই, তবে তালিকায় ছিল খেলা, গান, ক্যারাটে থেকে সমাজসেবা— নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত কিশোর-কিশোরীরা। তারা কেউ ১৮ বছর বয়সে পা দেওয়ার আগে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জায়গা করে নিয়েছে, কেউ বা সমাজসেবা করে জীবন কাটাবে বলে ইতিমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছে। আর তাদের কাণ্ড দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রধান অথিতি শিক্ষক ও লেখক সুধা মূর্তি বললেন, ‘‘তোমরা প্রত্যেকে আমার কাছে কোহিনুর হিরের চেয়েও দামি!’’
এ বার ছিল ‘এডুগ্রাফ এইট্টিন আন্ডার এইট্টিন’-এর তৃতীয় বর্ষ। পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্কুল থেকে ১৮ অনূর্ধ্ব কৃতীদের বেছে সম্মান জানাতে টেলিগ্রাফ অনলাইনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল ‘এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাস’। পাশে ছিল টেকনো ইন্ডিয়া গোষ্ঠী। গত ছ’মাস ধরে চলেছে বাছাই পর্ব। ২৫০০ প্রতিযোগীর মধ্যে থেকে চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছোয় ৫৩ জন পড়ুয়া। তাদের মধ্যে থেকে ১৮ জন সেরাকে বেছে নিয়েছেন নয় বিচারক।
দেশের নানা অঞ্চল থেকে প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার আবেদন জমা পড়েছিল। মেঘালয় থেকে ওড়িশা, নাম লিখিয়েছিল নানা স্কুলের পড়ুয়ারা। প্রাথমিক বাছাই পর্বের পর উঠে আসে ৫৩ জনের নাম। সেখান থেকেই সেরা আঠেরোকে বেছে নেন নয় বিচারক— অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীতশিল্পী সোমলতা আচার্য, মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম, নৃত্যশিল্পী তনুশ্রী শঙ্কর, সঙ্গীতশিল্পী বিক্রম ঘোষ, কলকাতার সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ‘জঙ্গল ক্রোস’-এর অধিকর্তা পল ওয়ালশ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব প্রান্তের অধিকর্তা দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, গল্ফার ইন্দ্রজিৎ ভলোটিয়া এবং ফিটনেস প্রশিক্ষক রণদীপ মৈত্র।
কারা এই কৃতী? কাদের দেখে মুগ্ধ হলেন বিচারকেরা?
সেরা ১৮-র তালিকায় উঠে এল নানা কাজে পারদর্শী পড়ুয়াদের নাম। ডিপিএস, নিউ টাউনের আরাত্রিকা ঘোষ লেখাপড়া থেকে নাচ-ক্যারাটে, নানা কাজেই সমান দক্ষ। বিড়লা হাই স্কুলের আরভ কুমারও তেমনই। কুইজ় থেকে সাঁতার, সবই করে সমান উৎসাহের সঙ্গে। আসানসোলের সেন্ট ভিনসেন্ট স্কুলের অভিনব সাউ আবার অলিম্পিক্স জয়ী অভিনব বিন্দ্রার মতো রাইফেল শুটিংয়ে দক্ষ। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলের অময় আগরওয়াল মন দিয়ে সমাজসেবা করে, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অরুণা দাস ইতিমধ্যেই বাংলা চলচ্চিত্র আর ধারাবাহিকের জন্য গান গেয়ে বেশ পরিচিত। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের আর এক কৃতী অনন্য ঘোষ আবার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বেশি মন দিয়েছে। হাওড়ার এমসি কেজরীওয়াল বিদ্যাপিঠের হিতেশ কুমার ভুওয়ালকা শুধু নিজে তরতরিয়ে রুবিক কিউব খেলে না, সঙ্গে অন্যদের তার পাঠও দেয়। কনভ ধনধনিয়া পড়ে বিড়লা হাই স্কুলে। কুইজ থেকে ডিবেট, সবেতেই দক্ষ। ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কুশাগরা কনোই মন দিয়ে স্কোয়াশ খেললেও পড়াশোনায় ফাঁকি দেয় না। লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজের নিখিলেশ মুখোপাধ্যায় যেমন করে লেখাপড়া, তেমনই আবার সমাজ নিয়ে চিন্তায় ব্যস্ত। ১৪ বছর বয়সি প্রাঞ্জল ঘটক সল্টলেকের এপিজে স্কুলে পড়ে। বাঁশিতে সুর তুলে মন জয় করেছে বহু জনের। মহাদেবী বিড়লা স্কুলের পৃশা বহতি লেখাপড়ায় যেমন ভাল, তেমনই ভাল নাচ-খেলা-সাঁতারে। বারাসতের কল্যাণী পাবলিক স্কুলের সানভি রায় টেবিল টেনিস খেলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বহু মেডেল পেয়েছে। সেন্ট লরেন্স স্কুলের শৌনক রায় সরোদ বাজায়। বিদ্যা ভারতী গার্লসের শ্রেষ্ঠা হালদার ছবি তো আঁকেই, তবে সমাজকে সচেতনও করে নিজের শিল্প দিয়ে। সাহিত্যে বেশি মন গার্ডেন হাই স্কুলের সৌমী ভৌমিকের। ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশের নানা পত্রিকায় লেখা বেরিয়েছে। ডিপিএস রুবি পার্কের সুচেতনা সেনকে কুইজ়ে হারানো মুশকিল আর শ্রী শ্রী অ্যাকাডেমির ভনশিকা চতুর্বেদী ক্যারাটেতে দক্ষ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের নানা প্রতিযোগিতায় গিয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছে।
তবে এই ১৮-র বাইরে যারা, তারাও কেউ কম নয়। সে কথা মনে করিয়ে দিলেন সুধা মূর্তিও। বললেন, ‘‘প্রতি দিন জিততে হবে, এমন কোনও কথা নেই। জয়ের থেকে যাত্রাটাই আসলে বড়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy