Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
সরস্বতী পুজো। আরাধনা, জীবন-উৎসব, কৈশোরের স্মৃতিমেদুরতা। বহু বদলের পরেও আজও যে দিনটি প্রথম ভাললাগার হাতেখড়ি-মুহূর্ত
saraswati puja

বাঙালির নিভৃতযাপন দেবী

রাংতা-কাগজ কাটা আগেই সারা। আঠাও তৈরি অ্যারারুটের। কয়েক ফালি কাঠও রাজি মণ্ডপের শিরদাঁড়া হতে।

‘জীবনে আমার সঙ্গীত দাও আনি/নীরব রেখো না তোমার বীণার বাণী’

‘জীবনে আমার সঙ্গীত দাও আনি/নীরব রেখো না তোমার বীণার বাণী’

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:২১
Share: Save:

স্লেটে খড়ি দিয়ে লিখলাম ‘অ’। সেই প্রথম। হাত ধরে লিখিয়ে দিলেন বৃদ্ধ পুরুতমশাই। পরে তার উপর খড়ি বোলাতে বললেন। কী বুঝলাম, জানি না। বোলাতে লাগলাম। রেখা সরে-সরে গিয়ে চূড়ান্ত বর্ণ বিপর্যয়। তা নিয়ে যদিও চিন্তিত নন কেউ। বাড়ির সবার মুখে ঝাড়বাতি জ্বলে উঠেছে। কারণ, এটাই নিশ্চিত বাড়ির কনিষ্ঠ সদস্যটির রবীন্দ্রনাথ বা কালিদাস হয়ে ওঠার প্রথম সোপান। পুরুতমশাই মন্ত্র পড়ে যাচ্ছেন ঘাড় কাত করে। মন্ত্রের তোড়ে কষ বেয়ে নেমে আসছে ফেনিল শ্রমজল। তাকিয়ে আছেন স্বস্তিকা-আঁকা তামার ঘটের দিকে। উপরে সিঁদুরমাখা আমের পাতা। ঘট রাখা ছোট জলচৌকির সামনে। চৌকিতে কাকা-পিসিদের কয়েকখানি বই। সে সবের উপর গাঁদা ফুলের পাপড়ি ছড়ানো। কিন্তু যাঁর জন্য এত সব আয়োজন, তাঁকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। দেখার অবশ্য কথাও নয়। কারণ, তিনি মূর্তিতে আসেননি। এসেছেন ঘটে।

তাঁর সঙ্গে দেখা বেশ কিছু পরে। বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গিয়ে দেখা গেল, সেখানে তিনি ছোট একটা হাঁস পায়ের কাছে পুষে সেজেগুজে বসে আছেন। মায়ের কোলে চেপে তাঁকে দেখতে গিয়ে বড় এক টুকরো পাটালি পেয়েছিলাম।

স্কুলে ভর্তি হওয়ার কয়েক বছর পরে তিনি বাড়িতে এলেন। ছোটকার চটজলদি সিদ্ধান্তে। বড়দের আপত্তি শোনা হল না। বরং চাঁদা দিতে বাধ্য করা হল। পুরুতমশাইয়ের বাড়ি গিয়ে দশকর্মার তালিকা হল। এবং এক দুপুরে ছোটকার সঙ্গে যাওয়া গেল তাঁর গোকুলে, কুমোরপাড়ায়, যেখানে তিনি বেড়ে উঠছেন। আমরা যখন গেলাম, তখনও হাতা-আভাস অসমাপ্ত ব্লাউজ পরে দাঁড়িয়ে। তিনি একা নন, অনেক তিনি। ছাউনি জুড়ে সার সার। নানা আকারের। ছোটকা ছোট-গড়ন এক জনকে পছন্দ করে বায়না করল। নির্দিষ্ট দিনে তাঁকে আনতে গেলাম। চক্ষু চড়কগাছ! ছাউনি খানিক ফাঁকা হলেও ঝলমল করছে! আমাদের ভদ্রমহিলাকে চিনতেও পারলাম না। কুমোরজেঠু মূর্তিতে সাঁটা চিরকুট দেখে জানালেন— এটি আমাদের। কী মধুর! কিন্তু খবরের কাগজের মোড়কে মুখ ঢেকে দেওয়া হল। ভ্যানরিকশায় তাঁকে নিয়ে জয়যাত্রা শুরু। পাড়ার গলিতে ঢুকে গর্ব আরও বেড়ে গেল। কারণ, পাড়ায় তখনও অধিকাংশেরই ছাঁচের মূর্তি। আমাদের তিনির মেরুদণ্ড আছে!

ঠাকুরঘর-কাম-ঠাকুমাঘরে রাখা হল তাঁকে। তাঁর সামনেই বারে বারে ঘুরঘুর। একটা মিষ্টি গন্ধ। যে কাগজে মুখ ঢাকা, তাতে জবাকুসুমসঙ্কাশ কেশতৈলের আধোছেঁড়া বিজ্ঞাপন।

রাতে সবাই শুতে গেল। ঠাকুমাও আজ অন্য ঘরে। সে ঘরে তখন চারটি প্রাণী। ছোটকা, আমি, তিনি আর তাঁর হাঁস। বাবার ধুতি, মায়ের শাড়ি দিয়ে প্যান্ডেল হবে তাঁর। ঘরেরই এক দিকে। একটা কাগজে তার নকশাও করে রেখেছে ছোটকা। রাংতা আর কাগজ কাটা আগেই সারা। আঠা তৈরি হয়েছে অ্যারারুটের। কয়েকটা ফালি কাঠও রাজি মণ্ডপের শিরদাঁড়া হতে।

ভোর হওয়ার আগেই সব তৈরি। খুলে নেওয়া হল মুখের কাগজ। তৃপ্তিতে গুনগুন কলি ধরেছে ছোটকা— ‘সরস্বতী বিদ্যেবতী, তোমায় দিলাম খোলা চিঠি’।

এ ভাবেই কেটেছে বছরের পর বছর। তবে, সরস্বতী পুজোর আগে প্রায় নিয়ম করে হাম হত আমার। ছোটবেলায়। সে সময় হাম-বসন্ত ঘরের লোক ছিল। হাম-বসন্ত বলাও হত না, বলতে হত ‘মায়ের দয়া’। তা সে মায়ের দয়া আমার উপর একটু বেশিই বর্ষিত হত। বসন্ত-পঞ্চমীতে যাঁর আসার কথা, তিনি হাম-পঞ্চমীতে আসতেন। হামাবস্থাতেও কাকা লুকিয়ে আমায় শাগরেদ রাখত মূর্তিমানের মণ্ডপ তৈরির কাজে। যে বার ছোটকার বসন্ত হল, আমি সুস্থ, সে বার আমিও প্রতিদানী কর্মবীর এবং পরে আমিও বাসন্তী। তাঁর অবশ্য কিস্যু হল না!

অপরূপ রূপ-ইন্দু

ধীরে ধীরে গুটিপর্ব অতিক্রান্ত পতঙ্গের। ‘স্বপনে রয়েছি ভোর’। গলা ভেঙে গেল। ঠোঁটের উপর হালকা সন্ধিসমাস। মন ঢলল অকারণ মনখারাপের দিকে। বদলে গেল বাণীবন্দনাও। আমার মতো মূর্তিও বড় হয়ে গিয়েছে যেন! চাহনি বদলে গেল আমার! কতবার ফাঁকা ঘরে তাঁর দিকে অপাঙ্গে তাকিয়ে বোকা-বোকা লজ্জা পাওয়া! তাঁর অনুপম স্পর্শ করে ফেলে হাঁটু মুড়ে, কানে হাত দিয়ে কতবার সে কী নাটকীয় ক্ষমাপ্রার্থনা! আর কতবার কুণ্ঠিত তাঁর সেই বিপজ্জনক হাসিতে! স্থির-শান্ত, নরম-উদার, অসহ্য সেই হাসি!

বাড়িতে পুজো হচ্ছে। ফুলের মালা দীপের আলো ধূপের ধোঁয়ায় ক্ষণতরের শাশ্বতী অধিকার। মন পড়ে রয়েছে স্কুলে এবং স্কুলের পথে। সেই বৃদ্ধ পুরুতমশাই এখন অতিবৃদ্ধ। তবু কী যেন আছে ওঁর কণ্ঠে আর সংস্কৃত ভাষাটায়! কিছুই বুঝছি না, তবু মনে হচ্ছে, আলোকপ্রভ তন্ত্রীর হাতের বীণাযন্ত্রই যেন ঝঙ্কার তুলছে মায়ালাবণ্যে! কিন্তু মন বড়া পাপী সাঁওরিয়া রে! পুরুতমশাই সুর করে মন্ত্র পড়ছেন— ‘জয় জয় দেবী চরাচর সারে’— পরের পঙ‌্‌ক্তিতে এসেই কণ্ঠে বাড়তি ওজন লাগল যেন! আর ষড়জং বদতি ময়ূরঃ হঠাৎ যেন রেখাব-গান্ধার-মধ্যমা টপকে সোজা কোকিলঃ পঞ্চমং বদেৎ! ‘কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে’ অমন পঞ্চমে কেন, পুরুতদাদু?

সে বয়সে জিজ্ঞেস করা হয়নি। আর আমার তো মন পড়ে স্কুলে, স্কুলের পথে। যদিও সে পথে পথে পাথর ছড়ানো! তখনও গোটা পাড়া, পাশের পাড়া, স্কুলের শিক্ষক-দারোয়ান, আচারদাদা— সবাই আমাদের অভিভাবক! সে এক বিচিত্রবীর্য মিষ্টি সময়! আজ কল্পনাও করা যায় না! কিন্তু সরস্বতী-সকালে স্কুলের পথের প্রতিমা-মিছিল দেখব না! পায়ে পা মেলাবে না আমার প্রথম পাজামা-পাঞ্জাবি দাসপাড়ার প্রথম শাড়ি-ব্লাউজের সঙ্গে!

নব-নন্দনতানে

‘মিলাব নয়ন তব নয়নের সাথে’। তাই কোনওক্রমে বাড়ির অঞ্জলি সেরেই বিশ্বনিখিলের অঞ্জলিদের জন্য নাও ছাড়িয়া দে! কথা বলার সাহস ছিল না। তবু ‘উড়ালি বিড়ালি বাওয়ে নাওয়ের বাদাম নড়ে’! লাভা লুকিয়ে মুহূর্তে আগ্নেয়গিরি সাইকেলে সওয়ার। কথা একদম হত না, তাও নয়। কোচিং ক্লাসের বন্ধুনিকে দেখতে পেয়ে চাকা থামিয়ে নেমে পড়া। প্রথমত, তাকে দেখা। মায়ের শাড়ি পরেছে। এটা জানা। আগের দিনই কোচিংয়ে ফিসফিসাচ্ছিল নিজের সইদের, জামদানি দেবেন না, বলেছেন মা। অগত্যা সাদা জমির শান্তিপুরী। মিষ্টি লাগছে সে শাড়িতে! দ্বিতীয়ত, তার বন্ধুদের দেখা। এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অচেনার আনন্দ! কাঁধে সেফটিপিন মারা, তবু বারবার আঙুল-আকর্ষে আঁচল ঠিক করার অছিলা! সেজপিসি বা রাঙাবৌদির ব্লাউজের হাতা সেলাই করা হয়েছে রাত জেগে। মোটাদাগের সে সূচিকর্মচিহ্ন গোপন রাখার নিপুণ চেষ্টা তাই। ঠিক তেমনই, পাঞ্জাবির হাতা খোলা থাকবে না কি ঈষৎ গোটানো— ভেবে পাথার অকূল আমাদেরও। অকারণ সাইকেল-গতি বাড়িয়ে আচমকা ব্রেক কষে অমর পুরুষত্ব বিরচনার খ্যাপাটে প্রয়াস। এ সব নিয়েই চলমান আচমকা নিজেদের আবিষ্কার করা দ্বিধা-থরথর রং-রঙিন পলাশ-শিমুলের মিছিল। আবহাওয়া অনুকূল হলে জেনে নেওয়া কর্তব্যই ছিল— চোখ চলে যাওয়া বন্ধুর বন্ধুটি সন্ধেবেলা কি স্কুলেই থাকছে? তা হলে যেতাম। মানে, ওই আর কী, সরস্বতী দেখতেই! মানে, স্যারেরা বলে দিয়েছেন আর কী! মানে, খিচুড়ি-প্রসাদ তো যেতেই হবে দিতে! পাশাপাশি স্কুল। মেয়েদের-ছেলেদের। মধ্যে পাঁচিল না থাকলে তো যৌথখামারই বানানো যেত!

আড়নয়নে চেয়ে থাকা, মনে মনে ছবি আঁকা সরস্বতীপ্রসাদেই হয়ে যেত। পাঞ্জাবিরও, শাড়িরও। ওই হেঁটে যাওয়া, অকারণ হাসিতে ঢলে পড়া। হঠাৎ বড় হয়ে যাওয়া নন্দিনী-রঞ্জন-বিশুপাগল! স্থিরাস্থির, স্পর্শাতুর, ভীত, গলাভাঙা! দিনভর অন্য ভুবন কাটিয়ে ক্লান্ত দেহে শাড়ি-পাঞ্জাবির বাড়ি ফেরা। ফিরে দেখতে পাওয়া— জেগেই রয়েছে রাত্রি, ‘নিবিড়মিলনদাত্রী’। ‘স্বপনে রয়েছি... আমারে জাগায়ো না’! হোক সেমিছে কল্পনা!

চিরবন্দনগানে

সেই সব মুখ, সেই সব বন্ধু, সেই সব আধোপরিচয় সব-সবাই আছে নিশ্চিত। নানা ভাবে, নানা অঙ্গে। আছেন তিনিও। তিনি মিউজ় বলেই আমরা স্বপ্নসম্ভব। তিনি আরাধ্যা। তাঁকে শুধু নৈবেদ্য-উপচারে রাখব কেন! বরং রাখি হৃদ্‌মাঝারে। তাই ‘উপগৃহিণীর অনুরোধে সরস্বতী পূজা’র কাল পেরিয়ে পৌঁছেছি সম্প্রদায়নির্বিশেষ গণতান্ত্রিক সার্বভৌম প্রেমদিবসে। ভ্যালেন্টাইনস ডে-র বঙ্গবোধনের অনেক আগে তুমি-তোমরা আমি-আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম তোমার-তোমাদের আমার-আমাদের সেই গোপন মল্লিকাবনে, যেখানে প্রথম ধরেছে কলি।

যুগ বদলেছে। বুড়ো শীত আর কাঁচা বসন্তের প্রেমদিবসেরও বদল ঘটেছে ঢের। মুঠোফোন আর সমাজমাধ্যম অনেক নিভৃত মুহূর্তের অন্তর্জলী যাত্রা সুসম্পন্ন করেছে। সহজ উপচে গিয়ে আস্বাদনকে কঠিন করে তুলেছে। কিন্তু সে তো স্বাভাবিকও। বদলই গতিসত্য। তাঁরও কি বদল ঘটেনি যুগে যুগে? বেদের তিনি আর পুরাণের তিনি কি এক? নানা জায়গায় নানান সংখ্যার হাত। এই তিনি ব্রহ্মার বৌ তো ওই তিনি বিষ্ণুজায়া, ওই তিনি শিবের প্রেয়সী। এই তিনি সৃষ্টিকর্তার মুখগহ্বর থেকে উৎসারিত ‘ওগো পরম ভাল’ তো ওই তিনি অসুরদলনী, ‘দেবীতমে’। এই তিনি নদী তো ওই তিনি সৃষ্টির অণু-পরমাণুতে গেঁথে রাখা সুর। ভূলোকে তিনি ইলা, অন্তরীক্ষে সরস্বতী, স্বর্গলোকে ভারতী। আবার এ সব পেরিয়ে বাঙালির তিনি শিব-দুর্গার কোলপোঁছা ছোট মেয়েটা— ‘বিমল মানসসরসবাসিনী/শুক্লবসনা শুভ্রহাসিনী/বীণাগঞ্জিত মঞ্জুভাষিণী/কমলকুঞ্জাসনা’।

এই ঘরের মেয়েটিই বাঙালিকে শীতশেষের ওম দিয়েছেন, নববসন্তের দানের ডালিও। যুগ পাল্টালেও নিভৃতবাসিনী বীণাপাণিকে আবিষ্কারের নেশা স্বয়ং-পরম্পরা। স্কুলপথ ধরে সাইকেল গড়িয়ে হন্যে হওয়া সেই আমি চোখে আজ ভারী চশমা লাগিয়ে আমার জিনস-টপের নবীন মেয়ের মধ্যে সেই ফেলে আসা আমিকেই পরিষ্কার দেখতে পাই। একই মন্ত্রে কী-ব্যস্ত কী-ব্যস্ত ওরা আজ এই মৃদু দক্ষিণ সমীরে— নন্দন চত্বরে, গজলডোবায়, সোনাঝুরিতে কত আড়চোখ অপেক্ষা করছে ওদের জন্য! ‘তৃষাতুর জন যথা হেরি জলবতী/নদীরে, তাহার পানে ধায় ব্যগ্ৰ মনে/পিপাসা-নাশের আশে’।

মিউজ় ওদের সঙ্গী হোন। ভগবতী ভারতী। দেবী। বাঙালির নিভৃতযাপন শুদ্ধসাধন বসন্তসেনা।

মডেল: শ্রীময়ী ঘোষ, সোমরাজ মাইতি; ছবি: জাভেদ ইব্রাহিম; মেকআপ: ভাস্কর বিশ্বাস; স্টাইলিং: ঐন্দ্রিলা বসু; পোশাক: আনন্দ, রাসেল স্ট্রিট (সিল্ক বালুচরি ও তসরের কাঁথা কাজের পাঞ্জাবি), সুন্দরী, গড়িয়াহাট (জর্জেট বেনারসি), অভিষেক রায় (লিনেনে সুতোর কাজের পাঞ্জাবি); জুয়েলারি: সাক্ষী, সাউথ সিটি মল; লোকেশন ও হসপিটালিটি: অউধ ১৫৯০

অন্য বিষয়গুলি:

saraswati puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy