যতই কেয়ূরে-কঙ্কণে কুসুমে রতনে সাজো হে কন্যে, অঙ্গে শাড়িখানি জড়ালে তবেই ঢল নামবে তব লাবণ্যে। এ কথাটা আজও আধুনিকারা অক্ষরে অক্ষরে মানেন। তাই উৎসবে-অনুষ্ঠানে নিজের সেরা রূপটি তুলে ধরতে তাঁরা আস্থা রাখেন আদি-অকৃত্রিম শাড়িতে। সেই কারণেই, ওয়ার্ড্রোবের মহার্ঘ্যতম, প্রিয়তম সম্পদটি হল নানা কিসিমের শাড়ি। সে সব শাড়ি রোজের পোশাক নয়। কিন্তু শাড়ি শুধু শখ করে কিনলেই তো হল না, তাকে যত্নআত্তিতে গুছিয়েও রাখতে হয়। নইলে সাধের শাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিস্তর সম্ভাবনা। তার উপরে এখন করোনা। একেই তো কালেভদ্রে শাড়ি পরি আমরা, আর এখন সেই শাড়ি পরে সাজ দেখাবার অনুষ্ঠানগুলিও প্রায় নেই। শাড়িগুলোর দেখভালের আর তার নতুনত্ব বজায় রাখার প্রয়োজন তাই আরও বেড়েছে। চিন্তা নাস্তি। ঠাকুমা-দিদিমারা তো বরাবরই তাঁদের দুর্দান্ত সব শাড়ির কালেকশন পরের প্রজন্মের জন্য তুলে রাখতেন। তাঁরা এমন সব কায়দা জানতেন যে, সে সব শাড়ির শরীরে বয়সের বিন্দুমাত্র ছাপ পড়ত না। আজ সেগুলোই একটু ফিরে দেখা যাক তবে। আর শেখা যাক নানা ফ্যাব্রিকের শা়ড়ির যৌবন ধরে রাখার কিছু আধুনিক টেকনিক।
বাঙালি ঘরের টোটকা
• শাড়ির তাকের কোণে কোণে ডাল সহ নিমপাতা রেখে দিতেন গৃহিণীরা। একটু গুঁড়ো হয়ে গেলে পাতা বদলে দিতেন তাঁরা। দারুচিনি ও এলাচ রাখতেন আলমারিতে। এতে শাড়িতে পুরনো, ভ্যাপসা গন্ধ হয় না।
• শাড়িগুলি মাঝেমধ্যেই পরতেন। বেশি দিন শাড়ি না পরলে, সেটি বিবর্ণ হয়ে যায়। পরার পর হালকা রোদে শাড়ি রেখে তবে তুলতেন।
• মাসে এক বার ভাঁজ খুলে শাড়িকে খোলা জায়গায়, ছায়ায় রাখতেন। তার পর তুলে ভাঁজ বদলে রাখতেন। বেশি দিন এক ভাবে ভাঁজ করে রাখলে ভাঁজে ভাঁজে শাড়ি ফেঁসে যায়।
• জামদানি, বেনারসি পাটে পাট করে অনেক কাপড়ের নীচে রাখতেন না। ওগুলি লাঠিতে পাকিয়ে পাকিয়ে রাখতেন। অথবা পুরনো শাড়ির সঙ্গে পাকিয়ে পাকিয়ে মুড়ে রাখতেন। উপরে কোলবালিশের মতো করে কভার পরিয়ে রাখতেন।
• শাড়ি ভাঁজ করে রাখলে, উপরে নীচে ও প্রতিটি ভাঁজের ভিতর ট্রেসিং পেপার রাখতেন।
• বালুচরি, বেনারসি শাড়ি বছরে এক বার তাঁতিদের দিয়ে পালিশ করিয়ে নিতেন। জামদানি শাড়িতে ‘কাটা পালিশ’-এর চল ছিল।
লিনেন, তাঁত, শিফন বাড়িতে যত্ন করে হাতে কাচলে তাঁতের শাড়ি অনেক দিন ভাল থাকে। ওয়াশিং মেশিনে ডেলিকেট মোডেও কাচতে পারেন। তবে এই শাড়িতে মাড় দিলে জল ঝরিয়ে নেবেন। মুড়বেন না। সুতো দুর্বল হয়ে যাবে। ছায়ায় শাড়ি শুকিয়ে নেবেন। তাঁত বা টাঙ্গাইল আয়তাকারে ছোট ছোট ভাঁজ (যে ভাবে দোকানে রাখে) করে রাখলে কিছু হয় না। তবে মাঝেমধ্যে উপরের শাড়ি নীচে, নীচের শাড়ি উপরে— এ ভাবে উল্টেপাল্টে দেবেন।
হ্যান্ডলুম ফ্যাশনের সৌজন্যে কটন ও লিনেন শাড়ির জনপ্রিয়তা ভীষণ বেড়েছে। এগুলির যত্ন সোজা। সুতির শাড়ি হালকা মাড় দিয়ে ইস্ত্রি করলে ভাল থাকবে।
কটন ও লিনেন শাড়ি হালকা ভাঁজ করে কাঠের হ্যাঙারে (ধাতব নয়) ঝুলিয়ে রাখুন। তাঁত, কটন ও লিনেনের শাড়ি প্রথমবার ধোয়ার আগে খনিজ লবণের জলে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখবেন। রংও টিকবে।শিফন ও জর্জেট শাড়িতে সেফটিপিন আটকাবেন না। তাই রোল করেই রাখতে হবে। নরম ডিটারজেন্টে শ্যাম্পু মিশিয়ে হাতে কাচবেন।
নেট, সিল্ক আর জরির জন্যআলমারিতে ঠেসে রাখবেন না। হ্যাঙারে ঝোলাবেন না। তাতে জরির কাজ, এমব্রয়ডারি নষ্ট হয়ে যাবে। প্লাস্টিকের ব্যাগে শাড়ি রাখলেও সূক্ষ্ম কাজগুলি কালচে হয়ে যাবে। আলমারির মধ্যে এটিকে নরম কাপড়ের উপর বা পারলে মসলিন দিয়ে ঢেকে রাখুন। অন্য কোনও কাপড়ের সঙ্গে নয়, সিল্ক আলাদা রাখতে হয়। জরি অংশ মলমল দিয়ে ঢেকে রাখুন। চেষ্টা করুন আলমারির অন্ধকারতম অংশে জরির শাড়িটি রাখতে। বেনারসি, তসর, ঘিচা, কাঞ্জিভরম প্রভৃতি সিল্ক এবং সব ডিজ়াইনার শাড়ির ক্ষেত্রেও এ ভাবেই যত্ন করতে হবে।
সিল্কের ঔজ্জ্বল্য ফেরানোর দু’টি সহজ উপায় বাতলে দিয়েছেন বুটিক শিল্পীরা। পাঁচ লিটার জলে পাঁচ চামচ হোয়াইট ডিস্টিলড ভিনিগার মিশিয়ে এক বালতি দ্রবণ বানিয়ে নিন। এই দ্রবণে পাঁচ মিনিট শাড়ি ভিজিয়ে রাখুন। তার পর কলের জলে সাবধানে ভাল করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন। এ বার বড় আর ফুলো তোয়ালেতে শাড়িটা চেপে জল শুষে নিন। ছায়ায় মেলে দিন। শুকোলেই দেখবেন, ঔজ্জ্বল্য ফেরত। সিল্কের শাড়ি পরিষ্কার স্যাঁতসেতে কাপড় দিয়ে বাড়িতেই পালিশ করে নিতে পারেন।
গুটিকয়েক টিপস
• এক হ্যাঙারে দুটো শাড়ি রাখবেন না। শাড়ির উপর নরম সুতির কাপড় রেখে মাঝারি তাপে ইস্ত্রি করবেন। শাড়ির উল্টো দিকে ইস্ত্রি চালান।
• ছত্রাক থেকে বাঁচতে আলমারিতে সিলিকা জেল পাউচ রাখুন। আর শাড়ির উপরে সুগন্ধি ব্যবহার করবেন না।
• শাড়ি রাখার টিসু ব্যাগ পাওয়া যায়। সেগুলিতে আলাদা করে, কাঠের তাকের উপর শাড়ি রাখতে পারেন।
• বাড়িতে হয়তো সব সময়ে শাড়ি পরা যায় না। তবে ওয়েবিনার, জ়ুম কনফারেন্সে কখনওসখনও তো শাড়িগুলি পরে সেজেগুজে বসুন। এতে মন আর শাড়ি দুই-ই ভাল থাকবে।
• এই পদ্ধতিগুলি জেনে রাখলে শাড়ির আয়ু ও জৌলুস বাড়বে। কয়েক প্রজন্ম পরতে পারবে শাড়িগুলো। আর তারিফ চলবে আপনার রুচি আর সৌন্দর্যের।
মডেল: শ্রীময়ী ঘোষ, ছবি: দেবর্ষি সরকার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy