Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
CORONAVIRUS

এখনও ধূমপান না ছাড়লে করোনার ঝুঁকি কিন্তু বাড়ছেই! কেন জানেন?

ধূমপায়ীদের জন্য বিপদ কতটা বেড়েছে, তা উঠে এসেছে বিশ্বব্যাপী কয়েকটি সমীক্ষা ও গবেষণায়।

ধূমপান ডেকে আনে করোনাকে। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

ধূমপান ডেকে আনে করোনাকে। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২০ ১২:৫৮
Share: Save:

ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯-এর মারণছোবল অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। ধূমপায়ীদের আশেপাশে যাঁরা থাকেন, তাঁদেরও প্রায় একই রকম বিপদ। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বার বার অনুরোধ করছেন এই পরিস্থিতিতে ধূমপান ছেড়ে দিতে। একই আবেদন জানিয়েছেন ‘ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল’।

ধূমপায়ীদের জন্য বিপদ কতটা বেড়েছে, তা উঠে এসেছে বিশ্বব্যাপী কয়েকটি সমীক্ষা ও গবেষণায়।

• চিনে কোভিড আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে ১০৯৯ জনকে নিয়ে সমীক্ষা করে, ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ সেই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ সংখ্যক ধূমপায়ী জটিল অবস্থায় ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের কৃত্রিম ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হয়েছে। তার পরও তাঁদের বেশির ভাগই মারা গিয়েছেন।৭৮ জন জটিল কোভিড রোগীদের নিয়ে সমীক্ষা করে দেখা গেছে এঁদের অধিকাংশই ধূমপায়ী।

আরও পড়ুন: লকডাউনে বাচ্চাকে দেখাতে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যাবেন? কী কী মানবেন?

ফুসফুসের ক্ষতি এড়াতে আজই ছাড়ুন ধূমপান। ছবি: আইস্টক।

• ইতালির স্বাস্থ্য গবেষণা এজেন্সি জানিয়েছে, কোভিড ১৯-এ মৃতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই পুরুষ। এবং তাঁদের অধিকাংশই ধূমপায়ী।

• বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীর অবস্থা জটিল হতে পারে প্রায় ১৪ গুণ।

• বিপদ ঠেকাতে ‘টোকিও মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘জাপান সোসাইটি ফর টোব্যাকো কন্ট্রোল’ এগিয়ে এসেছেন বেশ কয়েক কদম। টোব্যাকো কন্ট্রলের পক্ষ থেকে সমস্ত অফিসকাছাড়ি ও বহুতল আবাসনের কতৃপক্ষের কাছে ধূমপান কক্ষ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। কারণ এ সব জায়গা থেকেই একযোগে বেশ কিছু মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, যাকে বলে ‘ক্লাস্টার ইনফেকশন’।

কেন এত কড়াকড়ি?

এর প্রধান কারণ, যিনি ধূমপান করছেন, তাঁর শরীরে যদি ভাইরাস থাকে, তিনি যখন ধোঁয়া ছাড়বেন, সেই ধোঁয়ায় ভর করে ভাইরাসও ছড়িয়ে পড়বে আশপাশে। ওই অ্যারোসল বা বাতাসবাহীত লালার কণায় ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে ঘণ্টা তিনেক। কাজেই বদ্ধ ঘরে কাছাকাছি বসে ধূমপান করলে অন্যের মধ্যেও ছড়াবে ভাইরাস।

আরও পড়ুন: দশম দিন: আজকের যোগাভ্যাস

ধূমপায়ীদের সংক্রমণ বেশি হয়

লাগাতার ধূমপানে ফুসফুসের রোগ ঠেকানোর ক্ষমতা কমে যায়। কারণ ফুসফুসে ছোট ছোট চুলের মতো দেখতে সিলিয়া থাকে। সাধারণ অবস্থায় এরা ধুলোবালি, জীবাণু, সব কিছুকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। দীর্ঘ দিন ধরে প্রচুর ধূমপান করলে তারা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। তাই ধূমপায়ীদের মধ্যে যে কোনও ধরনের ফুসফুসের সংক্রমণ বেশি হয়। নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টিবি ইত্যাদির প্রকোপ তাঁদের মধ্যে বেশি। এই একই কারণে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও তাঁদের বেশি।নিয়মিত ধূমপানে ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে যায় বলেও বিপদ হয়।

বিপদ আছে আরও। বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “করোনাভাইরাস যে সমস্ত রিসেপ্টারের মাধ্যমে কোষের মধ্যে ঢোকে, ধূমপান করলে সে সব রিসেপ্টার অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। ফলে ভাইরাস খুব দ্রুত গতিতে বংশবিস্তার করে বিপাকে ফেলে দিতে পারে।”

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, ধূমপানের কারণে যদি ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ বা ‘সিওপিডি’ নামের রোগ হয়ে থাকে, এক বার কোভিড হলে তার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

ধূমপান ছেড়ে দেওয়া করোনা থেকে বাঁচার অন্যতম উপায়।ছবি: আইস্টক।

তা হলে উপায়?

• উপায় একটাই। ধূমপান ছেড়ে দেওয়া। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধূমপান করলে এর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্ভরতা জন্মায়। হঠাৎ ছেড়ে দিলে যে সব উইথড্রয়াল সিম্পটম হয়, তা সামলাতে পারেন না অনেকেই। তাই বিপদ এড়াতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়াই যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন:

• ধূমপান ছাড়তে চাইলে আগে ধূমপান কমান। আগে যদি ২০টা খেতেন, এখন তবে ১০টা খাওয়ার চেষ্টা করুন। সবচেয়ে ভাল হয়, যদি দিনে ৫টায় নামিয়ে আনতে পারেন। বা আরও নীচে। এ বার কমাতে কমাতে দিন তিন-চারেকে একেবারে ছেড়ে দিন।

• বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ধূমপানে কোভিডের আশঙ্কা বাড়ার অন্যতম কারণ হল ‘হ্যান্ড হাইজিন’ বজায় রাখতে না পারা। ধূমপান করার সময়ও মানুষ কিন্তু অসংখ্য বার নাকে-মুখে হাত দেন, একটু আগেই হয়তো সেই হাতে সিগারেটের প্যাকেট খুলেছেন, দেশলাই জ্বালিয়েছেন, যা হয়তো খানিক আগেই দোকানি বা অন্য কারও হাতে ছিল। কাজেই এদের কারও হাতে জীবাণু থাকলে তা আপনার হাতে-নাকে ও মুখে লেগেছে। আবার মাস্কের সামনের অংশটা ধরে মাস্ক খুলে সেই হাতে সিগারেট ধরিয়েছেন। সেখানে জীবাণু থাকলে, তাও আপনার হাতে লেগেছে।

• প্রথমত, সিগারেট ছেড়ে দিতেই হবে। যত ক্ষণ না তা পারছেন, তত ক্ষণ সিগারেট, সিগারেটের প্যাকেট, দেশলাই বা লাইটার আদান-প্রদান করবেন না। অর্ধেক খেয়ে অর্ধেক আর এক জনকে দেওয়ার তো কোনও প্রশ্নই নেই। হুঁকোও ভাগাভাগি করে খাওয়া চলবে না।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

smoking Novel Coronavirus coronavirus COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE