Advertisement
E-Paper

অটিজ়মের প্রশিক্ষণে জরুরি ছোট উদ্যোগও

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অটিজ়মে সব থেকে জরুরি এই প্রশিক্ষণ। মূলত তিনটি জায়গায় এমন রোগীদের সমস্যা হয়— অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ, সামাজিক বোধ এবং শেখার ধরন।

 অটিস্টিকদের তৈরি জিনিসের প্রদর্শনী। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

অটিস্টিকদের তৈরি জিনিসের প্রদর্শনী। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০০
Share
Save

বছর চারেকের ছেলেকে নিয়ে কোথাও যাওয়া রীতিমতো আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছিল কুন্ডু দম্পতির কাছে। হঠাৎ করে বায়না জুড়ে দিত শিশুটি। আব্দার না মানা হলেই পরিত্রাহি চিৎকার। চমকে উঠতেন আশপাশের মানুষজন। দাবি আদায়ে রাস্তায় শুয়ে পড়া বা হাত-পা ছুড়তে গিয়ে অন্যের গায়ে লেগে যাওয়া ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে সহযাত্রীদের মুখে একরাশ বিরক্তি ঝরে পড়তে দেখতেন দম্পতি। সমস্যাটা কোথায়, বুঝতে কিছুটা দেরি হয়েছিল তাঁদের। অবশেষে শহরতলির বাসিন্দা ওই পরিবারটিকে চিকিৎসকেরা জানান, অটিজ়মের শিকার শিশুটি।

নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের শেষে ওই ছেলেটি এখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অটিজ়মে সব থেকে জরুরি এই প্রশিক্ষণ। মূলত তিনটি জায়গায় এমন রোগীদের সমস্যা হয়— অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ, সামাজিক বোধ এবং শেখার ধরন। তাই এই দিকগুলি মাথায় রেখেই প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। ‘অটিজ়ম সোসাইটি, পশ্চিমবঙ্গ’-এর অধিকর্তা ইন্দ্রাণী বসু বলছেন, ‘‘আমরা এই প্রশিক্ষণে সব সময়ে পরিবারকে অংশগ্রহণ করাই। পরিবার ছাড়া ওদের প্রশিক্ষণ অসম্ভব। বেশি প্রশ্ন করতে নিষেধ করা হয় বাবা-মাকে। ছবি এবং মডেল দেখিয়ে ওদের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করা হয়। কোনও যন্ত্র নয়, কিছু সাধারণ খেলনা, মডেল, ছবি আর ওদের বুঝতে পারার ক্ষমতা, এ সবের মাধ্যমেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’’

অটিজ়ম নিয়ে কাজ করা দিল্লির একটি সংস্থা ‘অ্যাকশন ফর অটিজ়ম’-এর পেরেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি ট্রেনিংয়ের প্রধান ইন্দ্রাণী বসুর লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা দীর্ঘ। প্রায় ২৩ বছর আগে তিনি জানতে পারেন, তাঁর ছেলে অয়ন অটিজ়মে আক্রান্ত। বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সাতাশ বছরের অয়ন নিজেই এক জন কর্মরত যুবক। গয়না তৈরি, কাগজের ব্যাগ বানানো, মশলার প্যাকেট তৈরি প্রভৃতি নিজে করেন তিনি। সমবয়সিদের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা, ডাকলে সাড়া না দেওয়া, ঘুমের সমস্যার মতো অটিজ়মের সাধারণ লক্ষণ দেখেই সতর্ক হয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। তাঁর কথায়, “কিছু মুখে বলা বা অক্ষরের থেকে ওরা অনেক বেশি বোঝে ছবি দেখে। যেমন গানের কিছু জিনিস ও কম্পিউটার দেখিয়ে জানতে চাইলাম, ‘এক ঘণ্টার অবসরে কোনটা করবে?’ দ্রুত উত্তর দেবে। কিন্তু কোনও প্রশ্ন করুন, উত্তর আসবে না।”

চিকিৎসকদের মতে, পাঁচ বছরের মধ্যে অটিজ়ম চিহ্নিত করা গেলে এবং থেরাপি শুরু হলে ভাল ফল পাওয়া যায়। সুতরাং দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত করা এবং উপযুক্ত থেরাপি এই লড়াইয়ের অস্ত্র। তবে এখনও অটিজ়মের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কিছু ক্ষেত্রে অটিস্টিকদের বাবা-মায়েরাই এগিয়ে আসছেন। তেমনই একটি সংগঠন বাগুইআটির ‘কেয়ার ফর অটিজ়ম’। সংস্থার সেন্টার ইন-চার্জ নীলাঞ্জনা মুখোপাধ্যায় জানান, পাঁচ বছর বয়স তাঁদের সংগঠনের। পড়ুয়া ১৮ জন। তাদের বয়স পাঁচ থেকে কুড়ি বছর পর্যন্ত। সংস্থার তরফে ইন্দ্রনীল সান্যাল বলেন, ‘‘স্পেশ্যাল এডুকেটর, স্পিচ থেরাপিস্ট এবং অকুপেশনাল থেরাপিস্ট দিয়ে প্রশিক্ষণ চলে এখানে। সপ্তাহে পাঁচ দিন ১০-৫টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ হয়।’’ উৎসাহ বাড়াতে নিজের হাতে জিনিস তৈরির পাঠও দেওয়া হয় ওদের। রবিবার বাইপাসের ধারে একটি ক্লাবে ওদের তৈরি সেই সব জিনিস নিয়েই হয়ে গেল এক প্রদর্শনী। ওই অনুষ্ঠানের শুরুতে অটিস্টিক আক্রান্ত পড়ুয়ারাই নাটক ও নাচ পরিবেশন করে।

এ ভাবে বাবা-মায়েদের এগিয়ে আসাকে উৎসাহিত করছেন রাজ্যের অটিজ়ম সোসাইটির অধিকর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রয়োজন অনেক। তবে সরকারি সাহায্য ছাড়া বড় সাফল্য অসম্ভব। তাই এমন ছোট ছোট উদ্যোগ জরুরি।’’

Autism Training

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}