ঘুমিয়েও কমে ওজন! ছবি—শাটারস্টক
স্লিপিং বিউটি ডায়েট
এই ডায়েটের হদিশ প্রথম পাওয়া যায় ১৯৬৬ সালে৷ আমেরিকান ঔপন্যাসিক জ্যাকলিন সুজানের বেস্ট সেলার নভেল ‘ভ্যালি অব দ্য ডলস’–এ৷ উপন্যাসের কমবয়সি সুন্দরী মেয়েরা সবাই থাকতেন হলিউডে৷ ওজন কমানোর জন্য তাঁরা হয় ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমতেন, নয়তো সুইস স্লিপ ক্লিনিকে নাম লেখাতেন৷ ১৯৭০–এর দশকে শোনা যায় আরেক মজার খবর৷ ‘রাজা’এলভিস প্রিসলের ছিল এক সিগনেচার জাম্পস্যুট৷ তিনি হঠাৎ খেয়াল করেন, সেটি আর ফিট করছে না৷ কী করেন কী করেন ভেবে তিনিও শুরু করেন এই ডায়েট৷ কাজ হয় হাতে নাতে৷ তাঁর হাত ধরে ডায়েটটি আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷ কমবয়সি, ইটিং ডিজর্ডার নামে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত মেয়েরা যেন হাতে চাঁদ পেয়ে যান৷
ইটিং ডিজর্ডার
না খেয়ে ওজন কমানোর অবসেশনের নামই ইটিং ডিজর্ডার৷ কমবয়সি মেয়েদের এই সমস্যা বেশি থাকে৷ কী ভাবে না–খেয়ে ওজন কমানো যায়, সেই পথ খুঁজতে থাকেন তাঁরা৷ ফলে এই ডায়েট খুব পছন্দসই তাঁদের৷ ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়া৷ সেই ঘুম যখন ভাঙে, আবার ঘুম৷ ঘুমতে ঘুমতে সারা দিনে–রাতে খাওয়া–দাওয়ার আর সময় থাকে না৷
এ ক্ষেত্রে ঘুমতে হয় ওষুধ খেয়ে৷ ঘুমের ওষুধ বা কড়া ব্যথার ওষুধ৷ তাতে নানা রকম বিপদ হয়৷ তবে এই ডায়েট যাঁরা করেন, তাঁদের কাছে এ সব বিপদের কোনও গুরুত্ব নেই৷ কী করে না খেয়ে ওজন কমানো যায়, সে চিন্তাতেই তাঁরা মশগুল৷ প্রো–অ্যানোরেক্সিয়া ব্লগ ও ফোরামে তাই কেউ লেখেন, পরীক্ষার পর ১৫ দিনের ছুটিতে টেনে ঘুমিয়েছেন৷ দিনে ১৮–২০ ঘণ্টা৷ খেয়েছেন না খাওয়ার মতো৷ কেউ বলেন, ব্যথার ওষুধে ঘুম যেমন হয়েছে, পেট ব্যথা, অস্বস্তি, অম্বলে কমে গেছে খিদে৷ ফলে খেতে হয়নি খুব একটা৷ কেউ বলেন, ব্যায়াম ভাল লাগে না, জেগে থাকলেই খেতে ইচ্ছে করে, কাজেই ওজন কমাতে স্লিপিং বিউটি ডায়েটের মতো ডায়েট হয় না৷
ঘুমলে ওজন কমে?
ভাল ঘুম হলে গ্রোথ হরমোনের আনুকূল্যে এক দিকে যেমন চর্বি ঝরে, পেশির গঠন ও মেরামতির কাজও ভাল হয়৷ আর কম ঘুমলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন কর্টিজোলের ক্ষরণ বেড়ে চর্বি জমার প্রবণতা বাড়ে৷ কম ঘুমের ক্লান্তি ভুলতে হাই ক্যালোরি খাবার, বিশেষ করে মিষ্টি খেতে থাকেন মানুষ৷ তার উপর লেপটিন ও ঘ্রেলিন নামে দু’টি হরমোনের পরিমাণে তারতম্য হয়ে খিদে বেশি পায়৷ তৃপ্তি কম হয়৷ অতিভোজনের হাত ধরে প্রচুর ক্যালোরি জমা হতে থাকে শরীরে৷ ক্লান্ত শরীরে ব্যায়ামের ইচ্ছেও থাকে না৷
অর্থাৎ, ওজন কমাতে চাইলে দিনে ৬–৮ ঘণ্টা ঘুম চাই৷ তার বেশি নয়৷ গবেষণা থেকে জানা গেছে, যাঁরা দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমন, তাঁদের বিএমআই (ওজন বৃদ্ধির সূচক) বেশি থাকে, বেশি থাকে মানসিক রোগের প্রবণতাও৷ কাজেই না খেয়ে দিনে ১৮–২০ ঘণ্টা ঘুমলে কম খাওয়ার জন্য ওজন এক–আধ কেজি কমলেও তাতে দীর্ঘমেয়াদি লাভ হয় না৷ কারণ সারা জীবন তো আর ঘুমিয়ে থাকা যায় না৷ স্বাভাবিক রুটিনে ফিরলেই, হারানো ওজন ফিরে আসে৷ সঙ্গে যুক্ত হয় ঘুমের ওষুধের আসক্তি ও আরও হাজারো বিপত্তি৷
বেশি ঘুমের বিপত্তি
• মনোচিকিৎসক শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “যাঁরা না খেয়ে ও বেশি ঘুমিয়ে ওজন কমানোর কথা ভাবেন, তাঁদের বেশির ভাগের ইটিং ডিজর্ডার থাকে, যার সঙ্গী হিসেবে থাকে অবসাদ৷ যখনই ঘুম ভাঙে, একটা ঘোরের মধ্যে থাকেন তাঁরা৷ সঙ্গে থাকে প্রবল খিদে৷ অবসাদ আরও বাড়ে৷ আর অবসাদ যত বাড়ে, তত খাওয়া নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা শুরু হয়৷ বাড়ে অবসাদ৷ অর্থাৎ এক আবর্তের মধ্যে পড়ে যান মানুষ৷ দিন পনেরো এই ডায়েট করলেই গ্রাস করে প্রবল অপুষ্টি৷ মানসিক ক্লান্তি, হতাশা ও অবসাদ বাড়াতে এরও ভূমিকা আছে৷”
• সারা দিনে ৬০০–৮০০ ক্যালোরির মতো খেলে বিপাক ক্রিয়ার হার কমে যায়৷ মাঝে মধ্যে প্রচুর খেয়ে ফেলার আশঙ্কা বাড়ে, যদিও বেশির ভাগ সময় সে খাবার বমি করে দেন তাঁরা৷ সূত্রপাত হয় বিঞ্জ ইটিং সিনড্রোম নামে আরেক ধরনের ইটিং ডিজর্ডারের৷
• দিন–রাত ঘুমলে সামাজিক মেলামেশা হয় না৷ কাজ নষ্ট হয়৷ তা থেকেও আসে অবসাদ৷
• ঘুমের ওষুধ বেশি খেলে বিপদ হতে পারে৷ ব্যথার ওষুধ বেশি খেলেও সমস্যা৷
কী করবেন
“এই ডায়েট করবেন না৷ তার চেয়ে স্লিপ ডক্টরস ডায়েট প্ল্যান মেনে চলুন৷ পেটপুরে কম ক্যালোরির পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার সঙ্গে ভাল ঘুমের জন্য শুতে যাওয়ার ৭ ঘণ্টা আগে থেকে চা/কফি/কোলা/চকোলেট খাবেন না৷ সন্ধের পর ভাল করে ব্যায়াম করুন যাতে ঘরে ফিরে স্নান, খাওয়ার পর এমনিই ঘুম এসে যায়৷ ভাল ঘুম, ব্যায়াম ও পুষ্টির যোগ–সাজসে ওজন কমবে সহজে”, জানালেন পুষ্টিবিদ প্রিয়াঙ্কা মিশ্র৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy