ত্বকের এক ধরনের পিগমেনটেশন ডিজ়অর্ডার অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানস। ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে এটি। সময় থাকতে সতর্ক হওয়া দরকার
রোগের নামটি বেশ কঠিন। চেনা বৃত্তে দেখতেও পাওয়া যায়। কিন্তু এটির জন্য যে চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে, সেটা হয়তো অনেকেই জানেন না। অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানস ত্বকের একটি রোগ। আবার ক্ষেত্রবিশেষে ক্যানসারের লক্ষণও বটে। অর্থাৎ কিছু ক্ষেত্রে এটি বিনাইন, কয়েকটি ক্ষেত্রে ম্যালিগন্যান্ট।
রোগের বৈশিষ্ট্য
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা.সন্দীপন ধর বুঝিয়ে দিলেন এই রোগের ক্লাসিক বৈশিষ্ট্য। ‘‘ভেলভেটের মতো কালো আস্তরণ পড়ে যায় চামড়ার উপরে। দেহের অন্য অঙ্গের তুলনায় চামড়াটা বেশ পুরু হয়। ঘাড়, গ্রয়েন, স্তনের নীচে (ওজন ভারী মহিলাদের) এবং আর্মপিটে সাধারণত এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।’’ এই রোগ বংশানুক্রমিক ভাবেও হতে পারে।
মেলানিনের কারণে নয়
অনেকেই মনে করেন, ত্বকে কালো আস্তরণ পড়ার উৎস মেলানিন। এই রোগের ক্ষেত্রে সেটা একেবারেই ঠিক নয়। ডা.ধরের মতে, ‘‘মেলানোসাইট প্রলিফারেশন বা মেলানোসাইট থেকে মেলানিন বেরিয়ে ত্বকে মিশেছে—এর কোনওটাই নয়। অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানসের ক্ষেত্রে মেলানিনের পরিমাণে তারতম্য ঘটে না। এ ক্ষেত্রে এপিডার্মিস কয়েকগুণ বেশি পুরু হয়ে যায়। সেই জন্য ত্বকে ওই কালো আস্তরণ পড়ে।’’
রোগের প্রকারভেদ
বংশানুক্রমিক কারণে ত্বকে এই সমস্যা তৈরি হতে পারে। পরিবারে কারও না কারও থেকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছে।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে দেখা যায়, অস্বাভাবিক বেশি ওজনের ব্যক্তিদের এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে ত্বকে। সে ক্ষেত্রে এটিকে বলা হয় সিউডো বা ছদ্ম অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানস। ডা. ধরের মতে, স্থূলকায় ব্যক্তিদের সাধারণত ঘাড়ের দু’দিকে বা দু’দিকের আর্মপিটে এটি হতে পারে। এটিকে বলা হয় বাইল্যাটারাল অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানস। আবার এক দিকেও হতে পারে।
সাধারণত বেশি ওজনের মানুষদের চামড়া পুরু হওয়ায় আলো ঠিকমতো ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। সে কারণেই কালো আস্তরণ তৈরি হয়।
ক্যানসারের লক্ষণ
কিডনি, ইউরিনারি ব্লাডার, বাইলডাক্ট, থাইরয়েড, ইসোফেগাস, ব্রঙ্কাস, রেকটামের ক্যানসারের একটি লক্ষণ হল অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানস। সে ক্ষেত্রে তখন এটি ম্যালিগন্যান্ট। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরাই এই লক্ষণ দেখে প্রাথমিক ভাবে ক্যানসার সন্দেহ করেন এবং সংশ্লিষ্ট অঙ্গের ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন। এ ছাড়া এই ধরনের ম্যালিগন্যান্সি তৈরি হলে, হাতের তালুতেও কালো ছোপ তৈরি হয়। যাকে বলা হয় ট্রিপ পাম।
সাধারণ অ্যাকানথোসিসের চেয়ে ম্যালিগন্যান্ট অ্যাকানথোসিসের বৈশিষ্ট্য খানিক আলাদা। ম্যালিগন্যান্ট হলে এটি খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায় এবং শরীরের ভাঁজে আবদ্ধ থাকে না। সামনের দিকের ত্বকেও ছড়িয়ে পড়ে।
হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত
থাইরয়েডের জন্য যাঁদের ওষুধ খেতে হয় বা পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের এই চর্মরোগ দেখা যায়। হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এই রোগগুলিতে।
চিকিৎসা
* বিভিন্ন ধরনের ময়শ্চারাইজ়ার দেওয়া হয়। আবার ওজন ভারী ব্যক্তি যদি অনেকটা ওজন কমিয়ে ফেলতে পারেন, তবে এই আস্তরণও অনেক হালকা হয়ে যায় বলে মত চিকিৎসকদের।
* এ ক্ষেত্রে ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার না করলেই ভাল।
* অনেকেই ডি-মেলানাইজ়িং ক্রিম ব্যবহার করেন। তাতে রোগমুক্তি ঘটবে না। কারণ মেলানিনজনিত কারণে এটি হয় না।
* ওজন বেশি, অ্যাকানথোসিস রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ইনসুলিন রিসেপ্টর টেস্ট করা হয়। অর্থাৎ এঁদের ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাঁদের জন্য ডায়াবিটিসের ওষুধ দেওয়া হয়, যা অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানসের ক্ষেত্রে ভাল কাজ দেয়।
যে কোনও রোগের ক্ষেত্রেই সজাগ থাকা এবং সময়মতো পদক্ষেপ করা জরুরি।
মডেল: অনন্যা দাস
মেকআপ: চয়ন রায়
ছবি: জয়দীপ মণ্ডল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy