সাবধানে রাখুন সদ্যোজাতকে। ফাইল ছবি।
নভেল করোনা ভাইরাসের ভয়ে পুজোর আনন্দে কিছুটা লাগাম পড়লেও কিছু পরিবারে আনন্দের জোয়ার। এখনকার বিষণ্ণ সময়েও তাঁদের ঘরে এসেছে পরের প্রজন্ম। সদ্য মা ও পরিবারের অন্যদের সব আনন্দ একরত্তি মানুষটাকে ঘিরে। হেমন্তের শুরুতেও গুমোট গরমে একরত্তির শরীর জুড়ে লালচে র্যাশ, কারও আবার জড়ুল, নারেঙ্গা, হারপিস, ন্যাপকিন র্যাশ। এ সব দেখে হবু বাবা মা দিশাহারা হয়ে পড়েন। গরম হোক বা ঠান্ডা সব আবহাওয়াতেই হাজারো ত্বকের সমস্যা কাবু করে ফেলতে পারে ছোট্ট মানুষদের।
এই নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই, সদ্যোজাতের সংবেদনশীল ত্বকের সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামান্য যত্নেই ঠিক হয়ে যায়। বরং অতিরিক্ত পাউডার, ক্রিম বা অ্যান্টিবায়োটিক লোশন লাগালে সমস্যা জটিল আকার নিতে পারে বললেন ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজির প্রেসিডেন্ট ত্বক চিকিৎসক ডা সন্দীপন ধর।
এখনকার বাচ্চাদের সব থেকে বেশি যে সমস্যা হয় তা হল ন্যাপকিন র্যাশ। ভিজে ডায়াপার পরিয়ে বাচ্চাকে অনেকক্ষণ রেখে দিলে এই সমস্যার ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় ভিজে কাঁথায় বা তোয়ালেতে দীর্ঘক্ষণ বাচ্চাকে শুইয়ে রাখলে ন্যাপকিন র্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ভিজে ন্যাপকিনের সংস্পর্শে মূত্রে থাকা জীবাণুরা শিশুর ভিজে ত্বককে সহজেই আক্রমণ করে। আর এই কারণেই ন্যাপকিন ডার্মাটাইটিস হয়।
আরও পড়ুন:ডিম খেলে কি মোটা? ক'টা খাবেন, কী ভাবে খেলে মিলবে পুষ্টি
অনেক সময় ডায়াপারের ঘষা লেগে কচি ত্বক ছড়ে গিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে বললেন সন্দীপন বাবু। সদ্য মা বার বার ন্যাপকিন বদলানোর ভয়ে টানা ১২ – ১৩ ঘণ্টা ডায়াপার পরিয়ে রাখেন। শিশুর কোমল ত্বকের জন্য এই ব্যবস্থা যথেষ্ট ক্ষতিকারক। বাচ্চা যেন ভিজে অবস্থায় শুয়ে না থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রধানত তলপেট, উরুর আশপাশে এই র্যাশ বেশি দেখা যায়। জন্মের ৩ সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে ন্যাপকিন র্যাশের সমস্যা বেশি দেখা যায়। খোলামেলা আর শুকনো রাখলে দ্রুত র্যাশ মিলিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বেশি সংক্রমণ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, জানালেন সন্দীপন।
ন্যাপি বদলে দিতে হবে বার বার। ভিজে ন্যাপি র্যাশের কারণ। ফাইল ছবি।
কোভিড পরিস্থিতিতে ভিডিয়ো কল বা টেলিমেডিসিনের সাহায্য নেওয়াই ভাল। খুব দরকার না পড়লে বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ির বাইরে যাওয়া ঠিক নয়। সদ্যোজাতের আর এক সমস্যা নিয়ে অনেক মা চিন্তায় পড়েন তা হল নাভির লেগে থাকা অংশে সামান্য রস থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৭–১৫ দিনের মধ্যে নাভি শুকিয়ে যায়। নিয়মিত ওষুধ লাগাতে হবে। তুলো দিয়ে রাখবেন না।
আরও পড়ুন:মেদ ঝরানো, ব্যথা কমানো, কো-মর্বিডিটি ঠেকানো, এই সব ব্যায়ামেই কেল্লাফতে
স্নানের সময় জল লাগলে কোনও সমস্যা হয় না। এই নিয়ে অযথা ভয় পেতে মানা করলেন সন্দীপন বাবু। গ্রামাঞ্চলে জীবাণুর সংক্রমণে নারেঙ্গা নামে এক ধরনের ত্বকের অসুখ হয়। ৩- ৬ মাস বয়সে নারেঙ্গার প্রকোপ বাড়ে। মূলত অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এর জন্যে দায়ী। স্ট্যাফাইলোকক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস, ইত্যাদি জীবাণু ত্বকের এই সমস্যার জন্য দায়ী। ডাক্তারি পরিভাষায় পোড়া নারেঙ্গার নাম ইমপেটিগো। কালচে ফোস্কার মত দেখতে বলে এই অসুখের নাম পোড়া নারেঙ্গা। এ রকম হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত।
অনেক সময় ফোস্কার মত দেখতে হারপিস হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। হারপিস না নারেঙ্গা তা একমাত্র চিকিৎসকই বুঝতে পারেন। দ্রুত এই সমস্যার চিকিৎসা শুরু না করলে ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, সাবধান করলেন সন্দীপন বাবু। বেশ কিছু সদ্যোজাতর জন্মের সময় শরীরের বিভিন্ন অংশে বাদামি বা কালচে দাগ থাকে। সাধারণ ভাবে এই দাগকে জড়ুল বলা হয়, ডাক্তারি নাম মঙ্গোলিয়ান স্পট। এটা আদৌ কোনও রোগই নয়।
আরও পড়ুন:করোনা আবহে টিকায় গাফিলতি, মাম্পসের সংক্রমণ চিন্তা বাড়াচ্ছে
জন্মের সময় থেকে পিঠে, ঘাড়ে বা হাতে এই বাদামী, ধূসর বা নীলচে স্পট অর্থাৎ জড়ুল দেখা যায়। অনেক সময় জন্মগত এই জড়ুল আকারে বাড়ে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকারে ছোট হতে শুরু করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বছর দশেক বয়সে এই মঙ্গোলিয়ান স্পট ছোট্ট হয়ে ক্রমশ মিলিয়ে যায়। কোনও মলম লাগানো বা ওষুধ খাওয়ানোর কোনও দরকারই পড়ে না। আবার কারও কারও জড়ুল থেকে যেতে পারে। এই নিয়ে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই।
এ দেশের আবহাওয়ায় বাচ্চাদের ত্বকে ইমোলিয়েন্ট জাতীয় ক্রিম বা লোশন লাগানো ভাল। ফাইল ছবি।
অনেক পরিবারে বাচ্চাকে অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন দিয়ে স্নান করানো হয়। অনেক সময় শিশুর শরীরে র্যাশ হলেও অ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দেওয়া হয়। যে কোনও অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। অনেকে আবার শিশুর জামাকাপড় অ্যান্টিসেপটিকে ধুয়ে রাখেন। এর থেকেও স্কিন র্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। র্যাশে অ্যান্টিসেপ্টিক লাগালে র্যাশের জ্বালা ব্যথা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন:রসুন কি রোজ খাওয়া উচিত? খেলে কী পরিমাণে, কীভাবে
প্রয়োজনে জিঙ্ক অক্সাইড, টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইড, ওয়াটার রিপেলেন্ট ডাইমেন্টিকোন ইত্যাদি বেরিয়ার ক্রিম লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় ইমোলিয়েন্ট জাতীয় ক্রিম বা লোশন লাগালে ভাল কাজ হয়, পরামর্শ সন্দীপনের। খেয়াল রাখুন শিশু যেন মল-মূত্রের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ শুয়ে না থাকে। বাচ্চাকে পরিচ্ছন্ন রাখুন।
একটু ভাল স্বাস্থ্য যে বাচ্চাদের, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে হাঁটু, উরু-সহ সব ভাঁজ পরিষ্কার করে সাবান দিয়ে ধুয়ে দিন। নিয়ম করে স্নান করাবেন। বৃষ্টি বা মেঘলা হলেও স্নান বন্ধ দেবেন না। পাতলা নরম তোয়ালে দিয়ে মুছিয়ে দেবেন, পাউডার লাগানোর দরকার নেই, কিন্তু অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল মাখানো যেতে পারে। তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে বাচ্চার শরীর ও ত্বক দুইই ভাল থাকবে। সদ্যোজাতকে পরিচ্ছন্ন রাখুন, যত্নে রাখুন, ভাল থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy