কলকাতায় গান গাইতে এসে দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিয়ে, হলুদ ট্যাক্সি চেপে আর কফি হাউসে কফির কাপে চুমুক দিয়ে বাংলাকে তাঁর প্রেমে পড়িয়েছেন পঞ্জাবি গায়ক দিলজিৎ দোসাঞ্জ। তাঁর কলকাতা সফরে স্পষ্ট, মানুষের ‘দিল’ কী ভাবে জিততে হয়, তা ভালই জানেন শিল্পী। সারা বছর বিদেশে বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠান করে বেড়ান। চলতি শীতে ভারতের বিভিন্ন শহরেও ঘুরছেন তাঁর ‘গানের তরী’ নিয়ে। মানুষের সঙ্গে জুড়ে থাকতে না জানলে তিনি মানুষের কাছে পৌঁছবেন কী করে! কিন্তু দিলজিৎ যখন শিল্পী নন, যখন তিনি নিজের চেনা গণ্ডির মধ্যে থাকেন, তখন কেমন কাটে তাঁর সময়? সম্প্রতি কলকাতা সফর সেরে সামান্য সময় পেয়ে পঞ্জাবে নিজের বাড়ি ফিরেছিলেন শিল্পী। সেখানে তাঁর সকাল থেকে রাত কী ভাবে কাটল, তার একটি ঝলক অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন দিলজিৎ। তবে বাঙালিরা দেখে অবাক হয়েছেন, দিলজিতের শীতের ছুটি কাটানোর সঙ্গে কিছু কিছু মিল রয়েছে বাঙালির শীতযাপনের।
শীতের ছুটির দিন মানেই পিকনিক! দিলজিতেরও সারা দিন কেটেছে চড়ুইভাতির আমেজে। দিলজিৎ আর তার ‘টিম’-এর সদস্যেরা সবুজে ঘেরা খোলা মাঠের এক পাশে বেতের চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ-খাটিয়া পেতে সাজিয়েছেন খাওয়া-দাওয়ার জায়গা। প্রাতরাশের মেনুতে ছিল পঞ্জাবের প্রিয় পরোটা, সঙ্গে মাখন, আলুর সব্জি আর চিঁড়ের পোলাও। দিলজিতের সঙ্গীরা যখন সেই পরোটায় মাখন লাগিয়ে উদরপূর্তিতে ব্যস্ত তখন গায়ককে দেখা যায় মাঠের এক পাশে শতরঞ্চি পেতে শরীরচর্চা করতে। মঞ্চে হাজার হাজার দর্শকের সামনে নিয়মিত অনুষ্ঠান করেন দিলজিৎ। অভিনয়ও করেন। চেহারা ভাল রাখা তাঁর পেশার জন্যই প্রয়োজন। তাই যেখানেই যান, নিয়মিত শরীরচর্চার শৃঙ্খলা ভাঙার উপায় নেই। যদিও ভিডিয়োয় দিলজিতের নেপথ্য কণ্ঠস্বর বলে, ‘‘যে ভাবে ওরা খাচ্ছে, তাতে বেশি দেরি করলে আমার জন্য কিছু বাঁচবে বলে মনে হয় না!’’
দিলজিতের গানের পাশাপাশি সমাজমাধ্যমে তাঁর বিভিন্ন পোস্টের রসবোধও অনুরাগীদের প্রিয়। দিলজিতের ওই ভিডিয়োয় খাঁটি পঞ্জাবি ভাষায় একটুও না থেমে একের পর এক ঘটনার বিবরণ দিয়ে গিয়েছেন দিলজিৎ। অধিকাংশ অনুরাগী, তার অর্থোদ্ধার করতে না পারলেও কমেন্ট্রি শুনে মজা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে দিলজিতের ভিডিয়ো তখনও শেষ হয়নি। শরীরচর্চা্র শেষে খোকাটা স্টিলের থালায় পরোটা আর চিঁড়ের পোলাও নিয়ে বসেছেন দিলজিৎ। তার পরে মেতেছেন ক্রিকেট খেলায়। খেলতে খেলতে দু’একটা ছক্কা হাঁকিয়ে দিলজিত নিজের প্রশংসা করেছেন 'বিরাট কোহলি' বলে।
বাঙালিদের পিকনিক কমলালেবু ছাড়া বৃথা। দিলজিৎও ক্রিকেট খেলা শেষ করে রোদে পিঠ দিয়ে খাটিয়ায় বসে একটা গোটা কমলালেবু আর পেয়ারা খেয়েছেন। তাঁর সঙ্গীদের দেখা গিয়েছে খেয়েদেয়ে পার্কের দোলনায় দোল খেতে। রাতে রাঁধুনির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন শিল্পী নিজেই। কাঠকয়লার উনুনে মাটির হাঁড়িতে আদা-রসুন-পেঁয়াজ আর অন্য মশলা সহযোগে হান্ডি চিকেন রেঁধেছেন তিনি। হাঁড়িতে চিকেন তৈরি হওয়ার অপেক্ষা করতে করতে অধৈর্য হয়ে 'শরাবি' ছবির গানও গেয়েছেন— ‘ইন্তেহা হো গয়ি ইন্তেজ়ার কি...'।’’ শেষে অবশ্য মধুরেণ সমাপয়েত হয়েছে। তৈরি হয়েছে মাংস। স্যালাড, রায়তা রুটি সহযোগে খোলা আকাশের নীচে নৈশভোজে শীতবিলাসের ইতি টেনেছেন দিলজিৎ।