সৌরসেনী মৈত্র।
খুব মনখারাপের দিনেও পছন্দসই রঙের পোশাক পরে সেজেগুজে বেরোলে দেখবেন মনটা ভাল হয়ে গিয়েছে। আর সাজগোজের মূল উপকরণই হল রং। লিপস্টিক, আইশ্যাডো, নেলপলিশ, ব্লাশ... বেশির ভাগ প্রসাধনীতেই রঙের ব্যবহার। এ অবশ্য নতুন নয়, যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। পান পাতার রসে ঠোঁট রাঙানো বা কাজলে চোখের টান তো সেই কবে থেকেই... প্রাচীন সভ্যতার দিকে তাকালে দেখা যায়, দামি রঙিন পাথরের গুঁড়ো মেশানো হত প্রসাধনীতে। তার সঙ্গে থাকত রঙিন মণিমাণিক্য। প্রিয় রং, প্রিয় বন্ধুর মতো। পোশাক, মেকআপে নিজের প্রিয় রংই সকলে খুঁজে বেড়ায়।
আর কালার থেরাপিও কিন্তু নতুন কিছু নয়। মিশরীয় সভ্যতার সময় থেকে বড় বড় বদ্যিরা কালার মেডিসিনের ব্যবহার করতেন। প্রাচীন মিশরে, আলো ও রং ব্যবহার করা হত মনের রোগে। ঘরের জানালার উপরে লাল, নীল, সবুজ রঙের কাচের ব্যবহারও সেই ধারণা থেকে। সূর্যালোক রঙিন কাচের জানালায় প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসত যে ঘরে, সেখানে চলত মন ভাল রাখার চেষ্টা।
দীর্ঘ অতিমারিতে পৃথিবীর মন ভাল নেই। এ দিকে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। সামনেই দীপাবলি। আলোর উৎসবে রঙের মেলবন্ধনে মন ভাল রাখার চেষ্টাটুকু করা যেতে পারে।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অতিমারি-পরবর্তী জগতে সাজগোজে রঙের ব্যবহার বেড়েছে। দীর্ঘদিন গৃহবন্দি সাজহীন দুনিয়ায় থাকার পরে এখন মানুষ রংকে স্বাগত জানাচ্ছে। যেমন চুলে ব্রাইট কালার শেড দেখা যাচ্ছে, তেমনই মেকআপেও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও দেখা যায়, ফ্যাশন ও মেকআপ দুনিয়ায় রঙের ছড়াছড়ি। পোশাকে যেমন উজ্জ্বল, সলিড কালারের ব্লক প্রিন্ট বা প্যাটার্ন, তেমন সাজের জগতেও নতুন রঙের ছোঁয়া। সে সময়ের মেকআপের দিকে তাকালে উজ্জ্বল ও গ্লসি রঙের আধিক্য চোখে পড়ে। কিন্তু সাজগোজের সময়ে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার করতে হবে ব্যাকরণ মেনে। না হলে কিন্তু ‘অড-উওম্যান আউট’। এ ক্ষেত্রে পোশাকের রংও গুরুত্বপূর্ণ।
পোশাক ও মেকআপে রঙের সমতা
সাজগোজে, বিশেষত চোখের মেকআপে উজ্জ্বল রং ব্যবহারের দিকে ঝোঁক বাড়ছে। যেহেতু মুখের নিম্নাংশ মাস্কেই আবৃত থাকছে, তাই চোখ রাঙানোর চল বাড়ছে। নীল, সবুজ, ফুশিয়া, টারকয়েজ় আইলাইনারের যেমন চাহিদা বাড়ছে, তেমন এই ধরনের শেডের আইশ্যাডো কেনার ঝোঁকও ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু রঙিন মেকআপ কিনলেই তো হল না। পরিমিতি বোধও জরুরি।
নীল, সবুজের মতো গাঢ় রঙের আই মেকআপ করলে, পোশাকের বেস কালার হতে হবে হালকা। তার মধ্যে কোনও রঙের প্রিন্ট থাকলে সেই রংটা বেছে নিতে পারেন চোখের মেকআপে। যেমন ছবিতে সাদা পোশাকের উপরে সবুজরঙা প্রকৃতি দেখা যাচ্ছে, তাই চোখের ইনার কর্নারেও সবুজের ছোঁয়া।
আবার ধূসর ও নীল রঙের কনট্রাস্টের পোশাকের সঙ্গে চোখে রয়েছে উজ্জ্বল নীল মেকআপ। চোখ হাইলাইট করতে চুলে জেল লাগিয়ে নিট লুক দেওয়া হয়েছে। উজ্জ্বল রঙের সাজের সঙ্গে আলুথালু পোশাক বা উসকোখুসকো চুল মানায় না। সব মিলিয়ে লুকটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। তাই খুব উজ্জ্বল রং ব্যবহার করতে চাইলে চুল পরিষ্কার করে বেঁধে নিট লুক বজায় রাখার চেষ্টা করবেন।
অড কালার বেছে নিলে তার ব্যবহার হবে লাইনের মতো। যেমন নিয়ন পিঙ্ক আইলাইনার ব্যবহার করা হয়েছে। এই রং খুব উজ্জ্বল। আইশ্যাডো হিসেবে প্রয়োগ করলে মেকআপ খুব লাউড হয়ে যেত। তাই সাজের ভারসাম্য বজায় রাখতে, নিয়ন রঙের আইলাইনার দিয়ে চোখের বর্ডার করা হয়েছে। এতে চোখদু’টির আকর্ষণ বেড়েছে, কিন্তু অতিরিক্ত সাজ মনে হচ্ছে না।
রং মানেই লাল, নীল, হলুদ নয়, চোখের মেকআপে সাদা রঙের আবেদনও অনস্বীকার্য। সাদা আউটলাইনের ভিতরে অন্য রং দিয়ে ভরাট করতে পারেন। যেমন ছবিতে সাদা আউটলাইনের মধ্যে গোলাপি দিয়ে ফিল-ইন করা হয়েছে। চোখের কোণেও সাদা লাইনারের ছোঁয়া ট্রেন্ডি।
সাজের শর্ত
প্রাথমিক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হল নিজেকে ভাল লাগা। সাজার সময়ে যে রংটা নিজের পছন্দ হবে, সেই রংটাই মেকআপে ব্যবহার করুন। কিন্তু গাত্রবর্ণ ও রঙের গভীরতা অনুযায়ী তার ব্লেন্ডিং ঠিক করতে হবে।
চোখে উজ্জ্বল রং থাকলে হালকা রঙের লিপস্টিক বাছুন। পোশাকের রংও খুব গুরুত্বপূর্ণ। চোখ ও ঠোঁটের শেড যেন পোশাকের রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সাজগোজ শুধু বহিরাঙ্গের সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং মনের স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও সহায়ক। সুন্দর করে সাজলে দিনটাও যেন ঝলমলে হয়ে যায়। তাই মেকআপ প্যালেট ভরে উঠুক নানা রঙে। শুধু সাজতুলির নিয়ন্ত্রণ থাকুক নিজের হাতে।
ছবি: দেবর্ষি সরকার
মেকআপ: অভিজিৎ পাল
পোশাক: রিমি নায়েক, ইন্ডিয়া
গয়না: তারাশা, আঁচল লয়ালকা
লোকেশন ও হসপিটালিটি: ফেয়ারফিল্ড বাই ম্যারিয়ট, কলকাতা
ফুড পার্টনার: ৩৭ রেলিশ রুট, সাদার্ন অ্যাভিনিউ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy