Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Millennials Struggle with Relationship

বন্ধুত্ব বা প্রেম, তরুণদের কাছে সম্পর্ক কি পদ্মপাতায় জলের মতো? না কি সময়ই ‘ভিলেন’?

সমীক্ষা বলছে, আধুনিক প্রজন্ম বন্ধুত্বহীনতায় ভুগছে। প্রেমের সম্পর্কের মেয়াদও নাকি ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। প্রজন্ম না কি সময়, দায় কার?

Symbolic Image.

টিকিয়ে রাখতে চাইলে সব সম্পর্কেরই যত্ন প্রয়োজন। প্রতীকী ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৩ ১১:০৬
Share: Save:

স্কুল-কলেজে অনেক বন্ধু ছিল, ইদানীং সকলেই কোথায় যেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছে। অনেককেই এমন বলতে শোনা যায়। আসলে সম্পর্ক কখনও হারিয়ে যায় না। সম্পর্কের মলাটে ধুলোর স্তর জমতে থাকে। টিকিয়ে রাখতে চাইলে সব সম্পর্কেরই যত্ন প্রয়োজন। যত্নের অভাবে ধুলো জমে পাহাড় তৈরি হয়ে গেলে, তা ডিঙিয়ে বন্ধুত্বের কাছে ফেরা সহজ নয়। সে কারণে একা হয়ে পড়ছেন অনেকেই। মাধ্যমিক পাশ করা ১৬ বছরের কিশোরী থেকে কর্পোরেটে কাজ করা ৩৫-এর তরুণ, সদ্য গোঁফের রেখা ওঠা কিশোর থেকে প্রৌঢ়ত্বের পথে হাঁটতে থাকা কোনও ব্যক্তি— সমস্যার শিকড় ধীরে ধীরে আরও গভীরে পৌঁছচ্ছে।

সমস্যার উৎস খুঁজতে তাই একটি সমীক্ষার আয়োজন করেছিলেন আমেরিকার ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। ১৯৭২ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের মধ্যেই এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। গবেষকরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গিয়ে নিজেদের মতো করে সমীক্ষা করেছেন। তাতে স্পষ্ট হয়েছে যে, জীবনে ব্যস্ততা, কাজের চাপ, কর্মক্ষেত্রে উন্নতি আর্থিক সচ্ছলতা এবং আরও অনেক স্বাচ্ছন্দ্য থাকলেও, হাত বাড়ালেই বন্ধুত্বের ছোঁয়া পাচ্ছেন না। তবে শুধু বন্ধুত্বহীনতা নয়। সমীক্ষায় উঠে এসেছে প্রেমের প্রসঙ্গও। সম্পর্কের জালে নিজেকে জড়িয়ে নিতে না নিতেই, সেই জাল কেটে বেরোনোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন অনেকেই।

Symbolic Image.

সম্পর্ক হারিয়ে যায় না, সম্পর্কের মলাটে ধুলোর স্তর জমতে থাকে। ছবি সৌজন্য: পিক্সাবে।

প্রেমে পড়ছেন, সম্পর্ক এগোচ্ছে, কয়েক দিনের পরিচয়ে ঘর বাঁধার কথাও ভাবছেন, কিন্তু হঠাৎ সব কিছু আবার তাসের ঘরের মতো ভেঙেও পড়ছে। অনেকটা পদ্মপাতায় জলের মতো। এই আছে, এই নেই। স্বল্পমেয়াদি সম্পর্কের নেপথ্যে ব্যস্ততা একটা বড় কারণ হতে পারে। কারণ, সঙ্গী নির্বাচন এবং সম্পর্কের মেয়াদ গোটাটাই অত‍্যন্ত ব‍্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু বার বার দাঁড়ি টানার নেপথ‍্যে ঠিক কোন অস্থিরতা কাজ করছে? কেন এই দোলাচল? এমন কিছু প্রশ্নও তো উঠে আসে।

এ প্রসঙ্গে মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কে দীর্ঘ দিন থাকা মানেই সম্পর্কের অভ‍্যন্তরীণ চিত্রটি শুরুর মতোই অনব‍দ‍্য আছে, এমন না-ও হতে পারে। সম্পর্কে কে কতটা আদতে নিমজ্জিত, তা বাইরে থেকে দেখে কখনওই বোঝা যায় না। আমি বরং বলব, কমবয়সিরা যখন সম্পর্কে রয়েছেন, তখন তাঁরা কিন্তু সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে পারস্পরিক সংলাপে নিযুক্ত থাকছেন। কিন্তু তাঁদের যদি মনে হয় পরস্পরের সঙ্গে ভাল থাকতে পারলেন না এবং পারস্পরিক বোঝাপড়াও ততটা মসৃণ হল না, সেখানে কিন্তু একটা সম্মানজনক বিচ্ছেদ শ্রেয়। এটা একটা দিক। পাশাপাশি, আরও একটা বিষয় ভেবে দেখা জরুরি, কাজ, ব‍্যস্ততা সব মিলিয়ে এখন জীবনও তো বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। ফলে ক্ষয়ে যাওয়া সম্পর্ক মেরামতির জন্য যে সময়ের প্রয়োজন, সেটা ইচ্ছে থাকলেও দেওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। তাই যখন কেউ বুঝতে পারছেন, তাঁর সামগ্রিক ভাল থাকাটা ব‍্যাহত হচ্ছে, তখনই হয়তো কোনও সিদ্ধান্তে আসছেন। যেনতেনপ্রকারেণ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গিয়ে জীবনের বাকি দিকগুলিকে লাটে তুলে দেওয়ার মানসিকতাকে হয়তো চ‍্যালেঞ্জ জানাচ্ছে নতুন প্রজন্ম।’’

সম্পর্ক বহমান। স্থান, কাল, পরিবেশ, পরিস্থিতি ভেদে তা সংজ্ঞায়িত হয়। সম্পর্ক মানেই তার মেয়াদ আজীবনের, তা না-ও হতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের ছবিও তো বদলাতে থাকে। তা ছাড়া, সময়টা অস্থির। সময় নিয়ে ভাবনাচিন্তার অবকাশও কম। সেই অস্থিরতার প্রভাব সম্পর্কেও কিছুটা পড়তে পারে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঠিক যে, কমবয়সিরা যখন সম্পর্কে রয়েছেন, তখন আবেগের কিন্তু কোনও খামতি নেই। বরং আরও বেশি করে আগলে রাখা, আঁকড়ে ধরা আছে। স্বপ্ন দেখা, প্রেমের পদ‍্য লেখা আছে। খুনসুটি আর ঝগড়াঝাঁটি আছে। প্রজন্ম নয়, তবে কি সময়ই আসল ‘ভিলেন’?

অন্য বিষয়গুলি:

Friend Relationship New Generation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy