‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা...’? এই প্রশ্ন বাঙালির মনে লেগে থাকে। তবে এক মাস ঘুমোনোর জন্য নয় অবশ্য। বাঙালি যতই শীত কাতুরে হোক না কেন, একটু ঠান্ডা পরলেই সোয়েটার-কার্ডিগান চাপিয়েই বেরিয়ে পড়ে। কোনও দিন চিড়িয়াখানা, কোনও দিন ভিক্টোরিয়া, কোনও দিন মিলেনিয়াম ঘাট। কখনও বনভোজন, তো কখনও চলচ্চিত্রোৎসব! কখনও পার্ক স্ট্রিট তো কখনও নিউ মার্কেট— শীত মানেই উৎসবের মরসুম। আর সেই উৎসবের মরসুমে নাহুমের কেক আর বো-ব্যারাকের ওয়াইনের ফাঁকে গা এলিয়ে ঢুকে পড়ে প্রেম। ধীরে ধীরে হাত ধরে ফেলে শক্ত করে, ঠোঁটে ঠোঁট রাখে ভালবাসা।
কিন্তু কেন এমন হয়? শীত এলেই সকলের প্রেমে পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায় কেন? একটু খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে এর পিছনে একাধিক যুক্তি সংগত কারণ রয়েছে। শীত এমনিতেই বাঙালির খুব প্রিয় মরসুম। একটু ঠান্ডা পড়লেই বেশ হুল্লোড় শুরু হয়। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বাইরে খাওয়া-দাওয়া কিংবা বাড়িতে মদ্যপানের আসর শুরু হয় আরও ঘন ঘন। দীর্ঘ গ্রীষ্ম পেরিয়ে বর্ষার ভ্যাপসা আবহ থাকে প্রায় পুজো পর্যন্ত। তাই কালীপুজোর পর থেকে যেই একটু একটু ঠান্ডা-ভাব হয় বাতাসে, তখনই মনটা নেচে ওঠে। শীতের ছুটিতে বাইরে বেড়াতে যাওয়া কিংবা কোথাও সন্ধ্যাভোজের আয়োজনও বাড়তে থাকে। ফলে অনেক বেশি সংখ্যায় নতুন মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করার অবকাশ বাড়ে।
শীতকালের দুপুরের রোদ যেমন মিঠে-আদুরে, তেমনই কিন্তু বিকেলগুলি খানিক বিষণ্ণ। সেই বিষণ্ণতা সঙ্গী খোঁজে। একাকিত্ব কাটিয়ে চায় হাত বাড়িয়ে দিয়ে। তাই কোথাও কোনও সঙ্গী পেলেই বিকেল কাটিয়ে রঙিন সন্ধ্যার খোঁজ করেন সকলে। ব্রডওয়ের ওল্ড মঙ্ক আর ফিশ কাটলেট কিংবা ওলি পাবের বাকার্ডি আর বিফ স্টিক— কারই বা একা খেতে ভাল লাগে!

ডিসেম্বর এলেই যেন আশার আলো দেখেন সকলে। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
ডিসেম্বর এলেই যেন আশার আলো দেখেন সকলে। পুরনো বছরের সব খারাপ স্মৃতি ঝেরে ফেলে নতুনের দিকে তাকাতে পছন্দ করেন সকলে। নতুন করে শুরু করতে চান। এই সময় নতুন বছরের পরিকল্পনা শুরু করেন সকলে, জীবনে কী কী বদল আনতে চান, তা ঠিক করেন, আগামী বছরের জন্য লক্ষ্য স্থির করেন। হয়তো সেই কারণেই মনও খোঁজে নতুন কাউকে। যাঁদের সারা বছর প্রেম-ভালবাসায় অনীহা, তাঁরাও এই সময়ে খানিক আশাবাদী হয়ে ওঠেন। নতুন কারও সঙ্গে আলাপ হলে খানিক গা ভাসিয়ে দিতে তাঁরাও খুব একটা বাধা দেন না।
শীতের সকালে ময়দানে ট্রামলাইন ধরে হাঁটছেন? হাত ঠান্ডা হয়ে এলে ইচ্ছে করবেই কারও হাতে হাত রাখতে। সন্ধেবেলা কম্বল মুড়ি দিয়ে রোমান্টিক কমেডি দেখতে দেখতে হট চকোলেট খাচ্ছেন? কেউ আপনার সঙ্গে কম্বলের নীচে ঢুকে পড়ুক, তা মন চাইবেই। আসলে শীতের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে রোম্যান্স। ঠান্ডার মধ্যে উষ্ণতার খোঁজে আপনি যে পথেই হাঁটুন, মন হয়তো অজান্তেই প্রেম খুঁজে নেবে। বিদেশে শীতের আরেক নাম ‘কাফিং সিজন’। মানে যাকে বলা যেতে পারে ‘হাতে হাত রাখার’ মরসুম।
আরও পড়ুন:

বিদেশে শীতের আরেক নাম ‘কাফিং সিজন’। মানে যাকে বলা যেতে পারে ‘হাতে হাত রাখার’ মরসুম। ছবি: সংগৃহীত
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজলে দেখা যাবে শীতে নারী-পুরুষ উভয়ের শরীরেই নানা রকম হরমোনের ক্ষরণ কম-বেশি হয়। তাতে নাকি কাউকে অল্প ভাল লাগলেও তাড়াতাড়ি মানসিক ভাবে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে প্রেম-ভালবাসার অত ব্যাখ্যা খুঁজেও যখন বার করতে পারেননি বহু বিদ্বজন, তখন সে দিকে না যাওয়াই ভাল। তার চেয়ে বরং ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে সঙ্গীর সঙ্গে ডিসেম্বর উপভোগ করুন।