দুর্নিবার ও মীনাক্ষি।
দুর্নিবার সাহা আর স্ত্রী মীনাক্ষির বিচ্ছেদের কথা ছড়িয়ে পড়তেই নানা প্রশ্ন ঘুরছে অনেকের মনে। যে জুটি সবে বছর খানেক আগে গাঁটছড়া বেঁধেছিল, সেই দাম্পত্য এত তাড়াতাড়ি ভাঙছে কী করে? এমন সুন্দরী, বন্ধুর মতো স্ত্রী থাকতে এত তাড়াতাড়ি সত্যিই কি পরকীয়ায় জড়িয়েছেন দুর্নিবার? এ কি বিশ্বাসযোগ্য? তাতে অনেকের আবার বক্তব্য, কেউ যদি শাকিরার মতো সুন্দরী সঙ্গিনীকেও ঠকিয়ে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন, তবে আর বলার কী আছে! শাকিরা আর জেরার্ড পিকের বিচ্ছেদের কারণও যে একই। শাকিরার অনুমান, পিকে অন্য কোনও নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন।
কিন্তু সুন্দরী, আকর্ষণীয় সঙ্গিনী থাকা সত্ত্বেও পুরুষরা কেন আকৃষ্ট হন অন্যের প্রতি, সে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে। এ নিয়ে আলোচনা এবং গবেষণা কম হয়নি। আমেরিকার ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে বিভিন্ন সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সেখানকার এক সেক্সোলজিস্ট জানাচ্ছেন, এই আচরণের প্রকৃত কারণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই খেয়াল করেছেন, অনেক দিনের সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা পুরুষদের মধ্যে নতুন নারীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রবণতা বেশি।
কেন এমন করে থাকেন পুরুষরা? আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে কথা বলা হল কয়েক জন মধ্য তিরিশের পুরুষ ও মহিলার সঙ্গে। তাঁদের অধিকাংশেই বেশ কয়েক বছরের বিবাহিত সম্পর্কে রয়েছেন। কারও কারও বিয়ে ভেঙেছে কিছু দিন আগে। এক এক জন, এক এক ভাবে দেখেন বিষয়টি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তথ্যপ্রযুক্তিকর্মী জানান, বিয়ের দু’বছরের মাথায় তাঁর এক সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক হয়। স্ত্রীও তা জানতে পারেন। কিন্তু পরকীয়ায় জড়িয়েছিলেন যাঁর সঙ্গে, তাঁর সঙ্গে দিনের বেশিটা সময় কাটত। রোজের খুঁটিনাটি আলোচনা হত। সব মিলিয়ে নির্ভর করতে শুরু করেন সেই সহকর্মীর উপর। যৌন আকর্ষণও বোধ করেন।
আর এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী শেখর দাসের বক্তব্য, বিবাহিত সম্পর্কে রোমাঞ্চ কমে যায়। স্ত্রী যখন বান্ধবী ছিলেন, তখন বেশি সময়ে বাইরে দেখা হত। তিনি সাজগোজ করে থাকতেন। তাঁকে দেখতে বেশি ভাল লাগত। শেখর বলেন, ‘‘সে সময়ে যৌন উত্তেজনা টের পেতাম। এখন অনেক দিনই বাড়িতে স্ত্রীকে দেখে সেই উত্তেজনা হয় না। বরং অন্য মেয়েদের রাস্তায় দেখলে তাঁদের বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়।’’
‘দ্য ইভলিউশন অব ডিজায়ার’-এ ডেভিড বাস লিখেছিলেন, যৌন চাহিদা, উত্তেজনাও জিন নির্ভর একটি বিষয়। পুরুষদের জিনে একাধিক ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
তবে মধ্য তিরিশের এক সাংবাদিক এ কথা মানেন না। তাঁর বক্তব্য, এটি ছেলে আর মেয়েদের ক্ষেত্রে আলাদা করে দেখার মতো বিষয় নয়। যে কোনও লিঙ্গের মানুষই আকৃষ্ট হতে পারেন অন্যের প্রতি। কেউ সে দিকে এগিয়ে যান, কেউ বা নিজেকে আটকে রাখেন।
এখনও বিয়ে করেননি, মধ্য কুড়ির এক যুবকের আবার বক্তব্য, মেয়েরাও যথেষ্ট অন্য ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু ছেলেদের মধ্যে বিষয়টি জাহির করার চল বেশি। তাই তাঁদের কথা বেশি প্রকাশ্যে আসে।
সামাজিক ভাবে মহিলাদের যৌন স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পেশায় স্কুল শিক্ষিকা সুনন্দা রায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মেয়েরা বিবাহিত সম্পর্কে থেকেও অনেক সময়ে নিজের যৌন চাহিদা প্রকাশ করতে পারেন না। এখনও অনেকেই এই ধারণা নিয়ে থাকেন যে, মেয়েদের যৌন ইচ্ছা প্রকাশ করতে নেই। ফলে অন্য কোনও পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হলেও তা প্রকাশ করার চল হয়তো মেয়েদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় কম।’’ সুনন্দা জানান, তাঁরও অন্য পুরুষকে ভাল লেগেছে অনেক সময়ে। কিন্তু নিজের স্বামী তো দূরে থাক, কোনও বন্ধুর কাছেও সে কথা প্রকাশ করতে পারেননি।
কিন্তু সুনন্দার মতো বহু নারীই দেখেছেন, অন্য মহিলাদের রূপ, সাজ, ব্যক্তিত্ব নিয়ে খোলাখুলি আলোচনায় মাতেন তাঁর পুরুষ সহকর্মীরা। সুনন্দা মনে করান, ‘‘তাঁরাও কিন্তু আমার মতোই বিবাহিত। অথচ ওঁদের মধ্যে যৌন আড়ষ্টতা কম।’’ আমেরিকার লেখিকা ন্যান্সি হেনেসনও সে কথাই মনে করান। তিনি লিখেছেন, ‘মেয়েদেরও ছেলেদের মতোই অন্যদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে ‘পরপুরুষ’-এর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার ইচ্ছা হয়। তাঁরাও পরকীয়ায় জড়িত হন। কিন্তু ছেলেরা এ বিষয়ে অনেক বেশি খোলাখুলি কথা বলতে পারেন। তাই মনে হয় ছেলেরা বেশি আকৃষ্ট হন ‘পরস্ত্রী’র প্রতি।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy