ছবি : সংগৃহীত।
একসঙ্গে কোথাও যাবেন। বেরোনোর সময় আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে। যথাসময়ে পোশাক-আশাক পরে জরুরি জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে আপনি প্রস্তুত। অথচ আপনার সঙ্গীর পাত্তা নেই। হয় তিনি পথে কোথাও না কোথাও আটকে রয়েছেন। ফোনে জানাচ্ছেন, এই চলে এলেন বলে। নয়তো বন্ধ ঘরের ওপার থেকে বলছেন, ‘এই তো হয়ে গেছে’। অথচ তার পরেও আধ ঘণ্টার মধ্যে চর্মচক্ষে তাঁর দেখা পাওয়া মানে হাতে চাঁদ পাওয়া! এমন অভিজ্ঞতা যাঁদের হয়, তাঁরা এর পরবর্তী পর্যায়ের সঙ্গেও পরিচিত। বন্ধু বা সঙ্গীর দেরিতে মেজাজ খারাপ, রাগ দেখানো, অকারণ খিটিমিটি, প্রেমিক-প্রেমিকা হলে অভিমান, আবার স্বামী-স্ত্রী হলে তা কখনও-সখনও দাম্পত্য কলহেও গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তাতে পরের বারের পরিস্থিতি কিছু বদলায় কি? মনোবিদ চিকিৎসক অ্যালেক্স স্ট্র্যাটিনার বলছেন, বদলায় না। আর না বদলানোটাই স্বাভাবিক। উল্টে বার বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং তদপরবর্তী অশান্তির প্রভাব পড়তে পারে বন্ধুত্ব, প্রেম বা দাম্পত্যের সম্পর্কে। বদলে উল্টো দিকের সময়ানুবর্তী মানুষটি তিনটি পরামর্শ মেনে চলতে পারেন।
১। সঙ্গীর পরিকল্পনায় গলদ, তার সঙ্গে আপনার কোনও সম্পর্ক নেই
সঙ্গী এবং তাঁর সময়ের মর্যাদা দেন বলেই, তাঁর সঙ্গে বেরোনোর জন্য আপনি যথা সময়ে প্রস্তুত হন। কিন্তু এমনটা ভাবার কারণ নেই, তিনি নির্ধারিত সময়ে আসতে পারছেন না মানে তিনি আপনাকে গুরুত্ব দেন না। আপনার মনে হতেই পারে, সঙ্গীর কাছে আপনার সময়ের মূল্য নেই। আপনার চেষ্টারও কোনও মূল্য নেই। বিশেষ করে আপনি যদি সময়ানুবর্তী হন, তবে এ রকম ভাবনা মনে আসাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মনোবিদ স্ট্র্যাটিনার বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিষয়টা তা না-ও হতে পারে। হয়তো দেরির কারণ, আপনার সঙ্গীর জীবনে চলতে থাকা কোনও সমস্যা। হয়তো তিনি বাইরে বেরোতে ততটা পছন্দ করেন না। ওই ধরনের মানসিক সমস্যার পোশাকি নামও আছে— এডিএইচডি। সে ক্ষেত্রে বাড়ির দরজার বাইরে বেরোনোর কথা শুনলেই গায়ে জ্বর আসবে আপনার সঙ্গীর। এমনও হতে পারে তিনি খুব একটা গুছিয়ে কাজ করতে পারেন না বা তাঁকে বাড়ির আরও অনেকের খেয়াল রাখতে হয়, সাংসারিক কাজের চাপ সামলাতে হয়। দেরির কারণ নানারকম হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, তাঁরা আপনার সময়ের দাম দিচ্ছেন না বা আপনাকে অসম্মান করছেন। হয়তো তিনি নিজের সমস্যা সামলে আপনার সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব বুঝে ওঠার সময়ই পান না।
এ ক্ষেত্রে, আপনাকেই ভাবনার রাশ ঘোরাতে হবে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন মনোবিদ। তিনি বলছেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও পরিস্থিতিকে আমরা কী ভাবে দেখছি, তার উপর নির্ভর করে আমরা ওই পরিস্থিতিকে কী ভাবে সামলাতে পারবে। এ ক্ষেত্রেও সঙ্গীর দেরি হওয়া নিয়ে নিজের মনোভাব বদলানোর দিকে মন দিতে হবে। বুঝতে হবে দেরির কারণ আপনাকে গুরুত্ব না দেওয়া নয়। এতে আপনার মানসিক চাপ যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তেমনই সঙ্গীকে লক্ষ্য করে অপ্রিয় কথা বলার উপরেও লাগাম টানতে পারবেন আপনি।’’
২। নিজের প্রয়োজনের কথা জানান, তবে তাতে যেন যত্ন এবং আবেগের ছোঁয়া থাকে
সঙ্গীর দেরিতে যে আপনার মেজাজ গরম হতে থাকে, বিরক্তি আসে, রাগ হয়, তা জানাতে চাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু কী ভাবে জানাচ্ছেন, সেটাও ভেবে দেখা জরুরি। মনোবিদ বলছেন, ‘‘মনে রাখবেন ব্যক্তিগত আক্রমণ কেউ পছন্দ করেন না। তাই বন্ধু বা সঙ্গীর আচরণ নিয়ে যদি বলবেন বলে ভেবেই থাকেন, তবে মাথা গরম না করে শান্ত ভাবে জানান, দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকতে আপনার কেমন লাগে। বদলে কোনটা হলে আপনার ভাল লাগবে। যুক্তি দিয়ে বোঝাতে গেলে আবেগে ভেসে চিৎকার-চেঁচামেচি করার ঝুঁকি থাকবে কম। অশান্তিও এড়ানো যাবে।’’
চিকিৎসক স্ট্র্যাটিনার বলছেন, ‘‘আপনি বলতেই পারেন, ‘আমি দেখেছি যখনই আমাদের একসঙ্গে বেরোনোর থাকে, মাঝেমধ্যেই তোমার দেরি হয়। আর যখন দেরি হয়, তখন আমার খারাপ লাগে। আমার মনে হয়, তোমার কাছে আমার সময়ের কোনও গুরুত্ব নেই’।’’ মনোবিদের পরামর্শ, তাতে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ হয়, তবে নিজেকে আটকে রাখবেন না। যদি আপনার মনে হয়, আপনার সঙ্গীর দেরি আপনার বন্ধুত্ব বা সম্পর্ককে অসম্মানিত করছে। তিনি আপনাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তবে সেটাও জানাতে ভুলবেন না। তবে সব সময় মনে রাখবেন দোষারোপ নয়। শুধু নিজের অনুভূতির কথা বলুন। এ-ও বলতে পারেন, ‘আমরা দু’জনে মিলেও কোনও সমাধান বার করতে পারি, যদি তাতে কোনও সুবিধা হয়’। এতে আপনার সঙ্গী বুঝবেন, আপনি তাঁর জন্য ভাবেন। শুধু নিজের খারাপ লাগার কথা বলাই আপনার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়।’’
৩। ঠিক সময়ে হাজির হলে সঙ্গীকে উৎসাহ দিন, তার সময়ানুবর্তিতার প্রশংসা করুন
এর পরেও দেরি হলে মেজাজ হারাবেন না। মনে রাখতে হবে, দীর্ঘ দিনের অভ্যাস বদলাতেও সময় লাগে। সঙ্গীকে সেই সময় দিতে হবে। তাই আবার দেরি হলে সে কথা মনে করিয়ে দেওয়ার বদলে কোনও দিন ঠিক সময়ে হাজির হলে প্রশংসা করুন এবং উৎসাহ দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy