গ্রহণ করবেন না জেনেও ভালবাসার কথা জানাতে ইচ্ছে করছে কেন? ছবি- সংগৃহীত
‘সে তো এল না, যাঁরে সঁপিলাম এই প্রাণ মন দেহ’।
রবি ঠাকুরের লেখা গানের এই পংক্তিটির অন্তর্নিহিত অর্থ নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সামনেই ভালবাসার দিন। কিন্তু এ বছরও তাঁকে ভাল লাগার কথা জানাতে পারলেন না। যিনি শয়নে-স্বপনে আপনার মনের গোপন কুঠুরিতে বিরাজ করছেন, তিনিও কি আপনাকে নিয়ে তেমনটাই ভাবেন? উত্তর জানা নেই। অনেকেই আবার জানেন, তাঁকে পাওয়া সম্ভব নয়। তবু ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা মানুষটির সঙ্গে কথা বলতে না পারলেও একটি বার দেখার জন্য মন আকুলি বিকুলি করতে থাকে।
প্রেম দিবসের আগে এ বিষয় নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘এক তরফা প্রেম’।
প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে প্রশ্ন পাঠান দর্শক। এই পর্বেও ইমেলে বেশ কিছু প্রশ্ন পেয়েছেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন লিখেছেন, প্রথম থেকে উল্টো দিকের মানুষটির প্রতি এমন মনোভাব ছিল না। প্রিয় ছিলেন ঠিকই। কিন্তু ক্রমে বুঝতে পারেন, উল্টো দিকের মানুষটি শুধু প্রিয়ই নন, দিন দিন তাঁর প্রতি গভীর এক আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। শয়নে, স্বপনে তাঁর কথাই ভেবে চলেছেন। কিন্তু সমস্যা হল, এই অনুভূতি যাঁর প্রতি, তিনি একেবারেই ধরাছোঁয়ার বাইরের এক জন। যদি এমন অনুভূতি কোনও অতি বিখ্যাত মানুষের প্রতি হত, সে ক্ষেত্রে আলাদা কথা। কিন্তু তিনি এতটাও দূরের মানুষ নন। মাঝেমধ্যেই দেখা সাক্ষাৎ হয়। তবে ব্যক্তিগত ভাবে তার সম্পর্কে কিছু না জেনে, নিজের এই অবাঞ্ছিত অনুভূতির কথা জানালে যদি সেটুকুও বন্ধ হয়ে যায়? হার নিশ্চিত জেনেও তাঁর প্রতি এই অদম্য ভাল লাগায় রাশ টানতে পারছেন না। আবার নিজের এই এক তরফা ভাল লাগার কথা জানাতেও পারছেন না। এই সমস্যার কি আদৌ কোনও সমাধান আছে? প্রশ্নের জবাবে অনুত্তমা বলেন, “গ্রহণ করবেন না জেনেও ভালবাসার কথা জানাতে ইচ্ছা করছে কেন? নিজের কাছে সেই প্রশ্নের উত্তর আছে কি? ভালবাসার কথা জানাতে পারলে কি মনের ভার লাঘব হবে? আগে এই বিষয়গুলি নিজের কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার। এমনটা কিন্তু হতেই পারে, ভালবাসার কথা জানানোর পর উল্টো দিকের মানুষটির সঙ্গে সামান্য দেখা সাক্ষাতের সুযোগটুকুও আর থাকল না। সম্পর্কের সমীকরণটাই বদলে গেল। তখন সেই খারাপ লাগা সামাল দেওয়া কিন্তু কঠিন হয়ে পড়বে। তার চেয়ে বরং ওই মানুষটির প্রতি এই তীব্র ভাল লাগাকে উদ্যাপন করুন। অনেক সময়ে সম্পর্কের পরিণতিও কিন্তু সেই আনন্দ দিতে পারে না, যা এক তরফা ভালবাসা পারে।”
পরের চিঠিতে আবার উঠে এল প্রত্যাখাত হওয়ার গল্প। প্রত্যাখানেরও তো নিজস্ব বৃত্ত থাকে সেখান থেকে কি বেরিয়ে আসা সম্ভব? যাঁর চিঠির সূত্র ধরে উঠে এল এই প্রসঙ্গ, তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক ছাত্র। তাঁর সমস্যা আবার উচ্চতা নিয়ে। তিনি লিখেছেন, যাঁদেরই প্রেমে তিনি পড়েন, তাঁরা হয় সমান উচ্চতার। না হয় তাঁর চেয়ে বেশি। প্রত্যাখাত হতে পারেন, তাই ভালবাসার কথা বলতে ভয় লাগে। কারণ, সাধারণ মানুষের চোখে উচ্চতাও তো একটা মাপকাঠি। পুরুষ হিসাবে ৫ ফুট উচ্চতা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য? মনোবিদের জবাব, “পুরুষ হিসাবে সমউচ্চতার বা তার চেয়ে একটু কম নারীর প্রেমেই পড়তে হবে কেন? এমন মানসিকতা তো সমাজের তৈরি করে দেওয়া। পিতৃতন্ত্র আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে নারী খাটো। কিন্তু ভালবাসা কি এত হিসাব মেনে চলে, না হিসাব বোঝে? তাই এত কিছু না ভেবে আগে প্রেমে পড়ুন। তা সে উল্টো দিকের মানুষটির উচ্চতা, ওজন বা গায়ের রং যেমনই হোক। তবে তার আগে নিজেকে ৫ ফুটের খোপে দেখা বন্ধ করতে হবে। শারীরিক উচ্চতা দিয়ে যদি কেউ উল্টো দিকের মানুষটির মানসিক উচ্চতা বা প্রেমের গভীরতা মাপার চেষ্টা করেন, তা হলে বোধ হয় আরও এক বার ভেবে দেখা দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy