শিশুর কোন কোন আচরণ অস্বাভাবিক মনে হলে এড়িয়ে যাবেন না। প্রতীকী ছবি।
শিশুরা এক জায়গায় বসে থাকবে না, দুষ্টুমি করবেই। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুরন্তপনারও মাত্রাভেদ আছে। শিশু যদি দুষ্টুমি করতে করতে এমন কিছু কাজ করে যা সেই বয়সে স্বাভাবিক নয়, তা হলে অভিভাবকদের সাবধান হতেই হবে। কোনও কোনও শিশু হাতে-পায়ে চঞ্চল হয়। অর্থাৎ, এরা স্থির ভাবে কোথাও একটানা বসতে বা দাঁড়াতে পারে না। কোনও কোনও শিশুর মধ্যে আবার আক্রমণাত্মক আচরণ দেখতে পাওয়া যায়। পাশাপাশি, এ-ও খেয়াল রাখতে হবে যে, শিশুর আচরণ ও স্বভাবে কিছু বদল আসছে কি না। হঠাৎই খুব চুপচাপ হয়ে গেল, কারও সঙ্গে মিশতে চাইছে না অথবা কোনও কথা বললেই অস্বাভাবিক আচরণ করছে, ভয় পাচ্ছে— তা হলেও মা-বাবাকে সতর্ক থাকতে হবে। এ বিষয়ে মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকার বলছেন, “ছোট থেকে শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ এড়িয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে গিয়ে তা-ই অপরাধমনস্কতার জন্ম দিতে পারে। নেশা করাও শুরু করতে পারে শিশু। জড়িয়ে পড়তে পারে কোনও অপরাধমূলক কাজে। এই ধরনের ব্যবহারের বদলকে বলা হয় ‘কনডাক্ট ডিজ়অর্ডার’। মা-বাবাদের এড়িয়ে গেলে চলবে না।”
শিশুর কোন কোন আচরণ এড়িয়ে যাবেন না?
ভাঙচুর, মারপিট
অনেক শিশুই রেগে গেলে জিনিসপত্র ছোড়ে, ভাঙচুর করে, অযত্ন করে অথবা আচমকা কাউকে আঁচড়ে, কামড়ে দেয়, মারধর করে, থুতু দেয়। এমন যদি বার বার হতে থাকে, তা হলে মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে। শর্মিলার কথায়, শিশুর মধ্যে আক্রমণাত্মক আচরণ স্বাভাবিক নয়। যদি কথায় কথায় বড়দের গায়ে হাত তোলে, সমবয়সিদের সঙ্গে মারপিটে জড়িয়ে পড়ে, স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ও বাড়িতে বড়দের অসম্মান করে, তা হলে তখন থেকেই শিশুকে শাসন করতে হবে। ‘কনডাক্ট ডিজ়অর্ডার’-এর কারণে এমন আক্রমণাত্মক আচরণ হতে পারে, তার জন্য সময় থাকতেই মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পশুপাখিকে আঘাত করে আনন্দ
বাড়ির পোষ্যের প্রতি খুদের আচরণ ঠিক কেমন খেয়াল করতে হবে। যদি দেখা যায়, শিশু পশুপাখিকে আঘাত করে, তাদের কষ্ট দেখে আনন্দ পাচ্ছে, তা হলে বুঝতে হবে এই আচরণ স্বাভাবিক নয়।
অহেতুক মিথ্যা বলছে
শিশুরা অনেক সময়ে মনোযোগ আকর্ষণ করতে মিথ্যা বলে, কখনও বা কল্পনার আশ্রয় নিয়ে আবার কখনও বকুনির ভয়ে মিথ্যা বলতে বাধ্য হয় তারা। অনেক সময়ে তার ছোটখাটো মিথ্যা অভিভাবকেরা বিশেষ গুরুত্ব না দিলে পরবর্তী সময়ে তা-ই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। শর্মিলার কথায়, “শিশু বয়সে ছোট ছোট মিথ্যাকে প্রশ্রয় দিলে পরবর্তী সময়ে গিয়ে কোনও বড়সড় ভুল করলেও তা গোপন করার চেষ্টা করবে তারা।” এই বিষয়ে মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মত, স্কুল থেকে ফিরলে বা কোনও বন্ধুর সঙ্গে মিশলে, লক্ষ রাখুন তার চারপাশের বন্ধুরা কেমন। তাদের মধ্যে কারও মিথ্যা বলার প্রবণতা থাকলে, তা যেন আপনার শিশুকে প্রভাবিত করতে না পারে, সে বিষয়ে যত্নবান হোন। কোনও কারণে আপনার শিশু কি নিজের উপর আস্থা হারাচ্ছে বা অবহেলিত হচ্ছে কোথাও, সে দিকে নজর রাখুন। এমন হলেও শিশু অনেক সময়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়।
চুরি করছে না তো?
পাশে বসা বন্ধুটির জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে আনছে কি না, খেয়াল করা জরুরি। বন্ধুদের জিনিস লুকিয়ে নিয়ে আসা, বাড়ি ফিরে মিথ্যা বলার প্রবণতা পরবর্তী সময়ে গিয়ে সমস্যার কারণ হতে পারে। শর্মিলার বলছেন, “এমন অনেক শিশুকে মা-বাবা নিয়ে আসেন, যারা বাড়ির ছোটখাটো জিনিসও চুরি করার চেষ্টা করে। টাকাপয়সা সরিয়ে নিজের জন্য জিনিস কিনে নেয়। অথবা মা বা বাবার ব্যাগ থেকে টাকা সরিয়ে ফোনে রিচার্জ করে গেম খেলে। এই সব অভ্যাস যে ঠিক নয়, তা ছোট থেকেই বোঝাতে হবে।”
সকলকে সম্মান করে তো?
সব কথাতেই ‘না’ করে দেওয়া, বিদ্রোহ করার মানসিকতা থাকে অনেক শিশুরই। এই আচরণও স্বাভাবিক নয়। বাড়ির সকলকে তো বটেই, বাইরের লোকজনকেও অসম্মান করছে কি না, তা খেয়াল করতে হবে। শর্মিলা জানাচ্ছেন, এমন অনেক শিশুকেই মা-বাবারা নিয়ে আসেন, যারা বাড়ির পরিচারক বা পরিচারিকাদের সম্মান করে না, অথবা হয়তো মা-কেই ভালবাসে না। আঘাত দিয়ে কথা বলে। এ সবই ‘কনডাক্ট ডিজ়অর্ডার’-এর লক্ষণ হতে পারে। তাই শুরু থেকেই সঠিক চিকিৎসা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy