‘তারে জমিন পর’ ছবির দৃশ্য। যেখানে প্রতিনিয়ত ছেলেটিকে তার বাবার ধমকের মুখে পড়তে হত। ছবি: সংগৃহীত।
৫ বছরের ঋষি। ক্রিকেট শেখার জন্য ক্লাবে ভর্তি হয়েছে। এক মাস হয়ে গিয়েছে। এখনও ঠিক ভাবে ব্যাট ধরাটা রপ্ত হয়নি। খেলা শেষে বেরোনোর সময় রোহনের মা বলে বসলেন, কী রে ঋষি, এতদিন তো হয়ে গেল এখনও ব্যাট ধরে উঠতে পারলি না! রোহন তো ব্যাট-বল দুটোই এক সপ্তাহে দারুণ করছে।
কথাটা মনে লেগেছিল ঋষির মায়ের। সকলের সামনে ছেলের সম্পর্কে এমন কথা শুনে বাড়ি এসেও ধমক দিলেন। তার পর থেকেই বেঁকে বসেছে ঋষি। কিছুতেই তাকে আর ক্রিকেট খেলার জন্য নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।
ঋষি আর রোহনের মা প্রতীকি মাত্র। খেলা থেকে পড়াশোনার জগত, এমনকি চেহারা নিয়েও শিশুদের অনেক সময়ে নিজের পরিবার বা বাইরের জগতের কারও কাছ থেকে কটাক্ষের শিকার হতে হয়। বড়রা হয়তো অনেকেই বোঝেন না শিশুমন অত্যন্ত সংবেদনশীল। কখনও বাবা-মা-ও অজান্তে এমন কিছু কথা বলে ফেলেন, যা তাদের আত্মবিশ্বাসকে তলানিতে নিয়ে যায়। সুস্থ ভাবে সে বেড়ে উঠতেই পারে না। ফলে, কয়েকটি কাজ কোনও শিশুর সঙ্গে কখনও করবেন না।
ব্যঙ্গ নয়-
সন্তান বা অন্য কোনও শিশুর দুর্বলতার জায়গা নিয়ে কখনও ব্যঙ্গ বা খোঁচা দিয়ে কোনও কথা বলা উচিত নয়। এতে তার মনে যথেষ্ট চাপ পড়তে পারে। এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে আত্মবিশ্বাস দরকার, তাতে শুরুতেই ঘা খেলে ভবিষ্যতের জন্য তা যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
চেহারা নিয়ে কটাক্ষ নয়-
তুই কি রোগা রে, বাড়িতে খেতে দেয় না নাকি! ছোটবেলায় যারা খুব রোগা ছিলেন, তাঁদের বোধ হয় প্রত্যেককে এমন শুনতে হয়েছে। ভাবতে হবে, দিনের পর দিন লোকমুখে সেটা শুনতে ভাল লেগেছিল কি! তা হলে কোনও শিশুকেই তার চেহারা নিয়ে নেহাত মজা করেও কিছু বলা উচিত নয়। মোটা নিয়ে কটাক্ষ, এমনকি গায়ের রং কালো হলেও বাচ্চাদের তা নিয়ে কথা শুনতে হয়। এমনটা করা কিন্তু একেবারেই উচিত নয়।
সামাজিক দক্ষতা নিয়ে সমালোচনা নয়-
কোনও বাচ্চা হয়তো ছোটখাটো নানা কাজে পটু। কোনও শিশু সেটা নয়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল বাচ্চাকে সকলের সামনে নিচু করে কোনও কথা বলা উচিত নয়। এতে সে নিজেকে আরও গুটিয়ে নেবে। ‘আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ সমীক্ষা করে দেখেছে, সামাজিক দক্ষতা নিয়ে ব্যঙ্গের শিকার হওয়া শিশুদের মনে এ নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ তৈরি হয়। যা পরবর্তী জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলে।
পড়াশোনা নিয়ে তির্যক মন্তব্য নয়-
সব শিশুর মেধা সমান নয়। কেউ হয়তো খুব ভাল, আবার কেউ পড়াশোনায় তেমন ভাল ফল করে না। তা নিয়ে বাড়িতে বা বাইরে শিশুদের কম কটাক্ষের শিকার হতে হয় না। অনেক সময়ে হয়তো বাবা বলে বসেন, ‘আমি অমুক ফল করেছি নিজের যোগ্যতায়, তুই কেন পারিস না? করে দেখা, তার পর বলবি!’ এগুলি কিন্তু ভুলেও করা যাবে না। সমীক্ষা বলছে, পড়াশোনা সংক্রান্ত কটাক্ষ বা মানসিক চাপ ভবিষ্যতে বাচ্চাদের উদ্বেগ ও হতাশার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
ভাল লাগার বিষয় নিয়ে কটাক্ষ নয়-
প্রতিটি শিশুর ভাল লাগার বিষয় আলাদা। কেউ আঁকতে ভালবাসে, কেউ খুব নাচতে। কেউ বা খেলতে। কেউ প্রকৃতি দেখতে। তাদের ভাল লাগা নিয়ে কটাক্ষ করা উচিত নয়। এটা তাকে বলা কখনও ঠিক নয়, এঁকে কী হবে? মন দিয়ে শুধু পড়াশোনা কর। এতে শিশুরা তাদের ভাল লাগার বিষয়ের প্রতি আগ্রহ হারাবে ও হতাশ হয়ে পড়বে।
স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তিতে বাধা নয়-
শিশুরা তাদের মতো করে মনের ভাব প্রকাশ করে। কিন্তু নানা রকম কথা বলে তাদের সেই ভাব প্রকাশ বন্ধ করা দেওয়া বা তাকে কাঁদিয়ে দেওয়া উচিত নয়। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা বাচ্চার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী।
শারীরিক দক্ষতা নিয়ে কটাক্ষ নয়-
কোনও শিশু হয়তো খেলাধূলায় তত দর নয়। সেই দুর্বলতা নিয়ে খোঁচা দিলে তারা কিন্তু গুটিয়ে যেতে পারে। খেলার প্রতি উৎসাহ হারাতে পারে।
ভয় দেখাবেন না-
অন্ধকার, পোকামাকড় বা ভূতের ভয় দেখানো হয় বাচ্চাদের। এটা ভীষণ অস্বাস্থ্যকর শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য। বার বার ভয় দেখালে শিশুর মনে তা গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ভবিষ্যতে সে স্থায়ী উদ্বেগের শিকার হতে পারে।
দুর্বল শিশুকে কটাক্ষ নয়-
বহু শিশুরই শেখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তাদের প্রতি ধৈর্য হারিয়ে বকুনি বা কটাক্ষ করা উচিত নয়। এতে তাদের নিজের উপর থেকে বিশ্বাস টলে যাবে। সেটা হলে ভবিষ্যতের শেখার প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy