একাধিক প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন রণবীর। অনেকে ভেবেছিলেন, আলিয়ার সঙ্গে তাঁর প্রেমও টিকবে না বেশি দিন। কিন্তু আগামী ১৪ এপ্রিল নাকি তাঁদের বিয়ে। বলিউডে এর আগেও অনেক সফল সম্পর্ক ছিল অসম জুটির।
রণবীর কপূর-আলিয়া ভট্ট ছবি: সংগৃহীত
বলিউডের প্রথম সারির জুটি রণবীর কপূর এবং আলিয়া ভট্ট। আগামী ১৪ এপ্রিল যে তাঁদের বিয়ে, সে খবর ছেয়ে গিয়েছে বলি-পাড়ায়। যদিও বিয়ের তারিখ ছা়ড়া অন্য কোনও তথ্য সে ভাবে এখনও পাওয়া যায়নি, তবে এই জনপ্রিয় জুটির বিয়ে নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে সকলের। অবশ্য শুধু বিয়েই নয়, শুরু থেকেই তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল ছিল।
২০০৭ সালে সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘সওয়ারিয়া’ দিয়ে রণবীর ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন। প্রথম থেকেই তিনি ‘প্লেবয়’ হিসাবেই পরিচিত। আলিয়া ভট্টের আগে একাধিক প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন রণবীর। কোনও কোনও সময়ে আবার একাধিক সম্পর্কে একসঙ্গেও জড়িয়েও প়ড়েছেন। অবন্তিকা মল্লিক, দীপিকা পাড়ুকোন, ক্যাটরিনা কইফ ছাড়াও সোনম কপূর, নার্গিস ফকরি, নন্দিতা মহতানি, মাহিরা খানের মতো আরও নানা জন রয়েছে তাঁর প্রেমিকার তালিকায়। সব শেষে আলিয়া ভট্টের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে খবর পাওয়া যাচ্ছিল এ দিক-ও দিক। বহু দিন অবশ্য তা গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন দু’জনেই। সোনম কপূর এবং আনন্দ আহুজার বিয়েতে যখন হাতে হাত ধরে প্রবেশ করেন দু’জনে, তখন বলি-পাড়া বুঝল যে সম্পর্ক আর আড়াল করতে চান না তাঁরা। তার পর বহু সাক্ষাৎকারে তাঁদের কথা শুনে স্পষ্ট হয়েছিল যে, খুব তাড়াতাড়ি বিয়ের কথা ভাবছেন দু’জনে।
আলিয়া-রণবীরের সম্পর্ক কত দিন টিকবে, তা নিয়ে জোর চর্চা হয়েছিল শুরুতে। রণবীরের ঘন ঘন প্রেমে পড়ার স্বভাবই তার মূল কারণ। তবে রণবীর-আলিয়ার বিশাল বয়সের ফারাকও এক বিশেষ আলোচনার বিষয় ছিল সে সময়ে। দু’জনের বয়সের ব্যবধান প্রায় ১১ বছরের। আলিয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকার রণবীরকে তাঁর ছেলেবেলার ‘প্রেম’ও বলেছিলেন। তবে দেখা গেল, সেই সম্পর্কই টিকে গেল বহু দিন। ধীরে ধীরে দু’জনের সম্পর্ক আরও গভীর হল। এবং সব ঠিক থাকলে আগামী ১৪ এপ্রিল তাঁরা বিয়েটাও সেরে ফেলবেন। বিয়ের আগে তাঁদের বয়সের ফারাক নিয়ে ফের নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, বয়সের ফারাক বেশি বলেই নাকি রণবীরে-আলিয়ার সম্পর্ক এতটা মজবুত হয়েছে।
তবে বলিউডে অসল সফল প্রেমের উদাহরণ প্রচুর। গত বছরই বিয়ে সেরে ফেললন ভিকি কৌশল ও ক্যাটরিনা কইফ। ক্যাটরিনা ভিকির চেয়ে ৫ বছরের বড়। নিক জোনাস-প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার বয়সের ব্যবধানও ১০ বছরের। সদ্য তাঁরা কন্যা সন্তানের অভিভাবক হয়েছেন সারোগেসির মাধ্যমে। রণবীরের তুতো বোন করিনা কপূর খানও বিয়ে করেন সইফ আলি খানকে। সইফ তাঁর চেয়ে ১১ বছরের বড়। এরও আগে সঞ্জয় দত্ত বিয়ে করেছিলেন ১৯ বছরের ছোট মান্যতাকে। ধর্মেন্দ্র ও হেমা মালিনির বয়সের ফারাক ১৩ বছরের, শ্রীদেবী-বনি কপূরের ৮ বছর, দিলিপ কুমার সায়রা বানুর ২২! লক্ষ্যণীয় বিষয়, এঁদের প্রত্যেকের দাম্পত্য জীবনই বেশ সুখের। তা হলে কি অসম প্রেমই সুখী সম্পর্কের চাবিকাঠি?
এ নিয়ে নানা রকম মত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, বয়সের ফারাক বেশি হলে ভালবাসা বেশি গভীর হয়। অপরের প্রতি বেশি মনোযোগী এবং যত্নবান হয় এমন জুটি। আবার অনেকে বলেন, একটি সময়ের পর, যখন এক জনের অনেকটা বয়স হয়ে যায়, অন্য জনকে হয়তো তখনও বার্ধক্য সে ভাবে স্পর্শ করেনি, তখন দু’জনের জীবনযাপনে অনেক ফারাক হয়ে যায়। সাধ-অভ্যাস বদলে যায়। খাদ্যভ্যাসেও বদলে আসে। সেই সময়ে সময় কাটানো মুশকিল হয়ে যায়। বয়সে খুব ছোট হলে, পরিণত চিন্তাভাবনার অভাব হবে কি না, সে বিষয়ও সন্দিহান হন অনেকে।
বাস্তবে কিন্তু এমন জুটির ভাল-মন্দ দুই-ই দেখা যায়। ৫৪ বছরের সম্রাট পেশায় অধ্যাপক। ছাত্রী মিতালি প্রেম করে বিয়ে। বিয়ের সময়ে স্ত্রীয়ের সঙ্গে বয়সের ফারাক ছিল প্রায় ১৯ বছরের। তবে এখন তাঁদের ১০ বছরের সুখের সংসার। বয়সের ফারাকের জন্য চিন্তাভাবনায় অমিল হচ্ছে, এমনকি কখনও মনে হয়েছে? এক মুহূর্তও কোনও কিছু না ভেবে সম্রাট বললেন, ‘‘মিতালি বরাবরই পরিণত। কিছু ক্ষেত্রে আমার চেয়ে অনেক বেশি। ও-ই সংসারের সব কিছু দেখে। আবার কখনও কোনও মনোমালিন্য হলে ও যত পরিণত ভাবে বিবাদ মেটায়, তেমনটা আমিও পারি না। বয়সের ফারাক নিয়ে সত্যিই কখনও ভাবিনি সে ভাবে।’’
একই রকম কথা বললেন সঞ্চারীও। বছর ৩২-এর আইটি কর্মীর সঙ্গী এখন সবে স্নাতকোত্তর স্তরে লেখাপড়া করছে। বন্ধুমহলে সে নিয়ে কম বিস্তর হাসিঠাট্টা এবং নির্যক মন্তব্য শুনতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু সে সব নিয়ে মাথা ঘামান না সঞ্চারী। তাঁর কথায়, ‘‘এর আগে যে দুটো সম্পর্ক আমার জীবনে এসেছিল, কোনওটাই খুব সুখকর ছিল না। আনন্দে জীবন উপভোগ করতে ভুলেই গিয়েছিলাম। সুজন আসায় আমরা জীবনটা বদলে গেল। আমার তো মনে হয় বয়সে ছোট হলে ছেলেরা অনেক বেশি মনোযোগী হয়। সুজনের জীবনে আমার একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রয়েছে। যে কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার মতামত নেয়। আমি সেটা উপভোগ করি।’’
বছর ২৮-এর কুহু আবার অন্য কথা বললেন। তাঁর স্বামী তাঁর চেয়ে ৯ বছরের বড়। পেশায় চিত্রশিল্পী। কুহু বললেন, ‘‘কুন্তককে বিয়ে করে আমার জীবনে যে নিশ্চয়তা এসেছে, সেটা কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কত কিছু ওর কাছ থেকে রোজ শিখতে পারছি। আমার নিজের বুটিক খোলার ইচ্ছা। আমাদের যে রকম আর্থিক স্বচ্ছন্দ রয়েছে, তাতে আমি সহজেই ১০টা-৫টার চাকরি ছেড়ে ব্যবসার কথা ভাবতে পারছি। যদি একই বয়সি কাউকে বিয়ে করতাম, তা হলে হয়তো এতটা স্বাধীনতা পেতাম না। বলছি না তা হলে জীবনটা খুব কঠিন হত, কিন্তু এখন যে মানসিক শান্তি রয়েছে, সেটা হয়তো থাকত না।’’
আবার উল্টো দিকের কথাও উঠে এলে তৃণার গল্পে। তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে বয়সের তফাত প্রায় ১৩ বছরের। সমকামী সম্পর্ক নিয়ে আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে এক সময়ে। কিন্তু এখন তাঁর মনে হচ্ছে, হয়তো এই সম্পর্ক নিয়ে ততটা গভীর ভাবে ভাবছেন না তাঁর সঙ্গী। তিনি বললেন, ‘‘আসলে ওর বয়স তো অনেকটা ছোট। আমি এখন জীবনে নতুন অধ্যায়ের জন্য তৈরি। সংসার করতে চাই। ও হয়তো সেটা চাইছে না।’’
বয়সের ফারাক থাকলে এমনটা জীবনের বেশ কিছু মুহূর্তে হতেই পারে বলে মত অনেকের। কেউ হয়তো মা হতে চান, কিন্তু তাঁর সঙ্গী চান না, কেউ হয়তো শহরের কোলাহল ছেড়ে কোনও পাহাড়ি গ্রামে গিয়ে অবসর জীবন কাটাতে চান, কিন্তু তাঁর সঙ্গীর এখনও চুটিয়ে কর্পোরেট কেরিয়ায় উপভোগ করছেন। এমন অনেক ঘটনাই উঠে আসবে আশপাশের অসম প্রেমের গল্প শুনতে গিয়ে। তাই অসম প্রেম হলেই যে সে সম্পর্ক সুখের হবে, তেমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। বরং দু’জন মানুষের মধ্যে সমীকরণই বলে দেবে, তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy