এআই সঙ্গীর সঙ্গে প্রেম করা কি পরকীয়ার লক্ষণ? গ্রাফিক: সনৎ সিংহ। (ছবিটিতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে)
তরুণদের উপর আস্থা হারাচ্ছেন তরুণীরা, বদলে বেছে নিচ্ছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি প্রেমিকদের। বিশ্ব জুড়ে এআই প্রেমিকদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সম্প্রতি চিনের ২৫ বছর বয়সি তরুণী টুফেই সমাজমাধ্যমে ভাগ করে নিয়েছিলেন এআই প্রেমিককে পেয়ে কী ভাবে তাঁর জীবন বদলে গিয়েছে, তার বর্ণনা। টুফেই জানিয়েছেন, তাঁর প্রেমিক তাঁকে ভীষণ ভালবাসেন, তাঁর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করেন। সাংহাই প্রদেশের একটি স্টার্টআপ সংস্থা ‘মিনিম্যাক্স’-এর ‘গ্লো’ অ্যাপে পাওয়া যাবে মানুষরূপী রোবটের খোঁজ, যারা সম্পর্কে জড়াতেও রাজি হবে। সম্প্রতি টুফেইয়ের খবর সমাজমাধ্যমে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিল।
টুফেই একা নন, এআই সঙ্গীর সঙ্গে প্রেমে মজেছেন অনেক তরুণ-তরুণী। প্রবল কর্মব্যস্ততা, আরও বেশি অর্থ উপার্জনের আকাঙ্ক্ষার কারণে অফিসে দীর্ঘ ক্ষণ সময় কাটানোর পর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ কমই পান তরুণেরা। সারা দিনের পরিশ্রমের পর এআই প্রেমিকদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা ভাগ করে নিতেই বেশি আগ্রহী হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। ইচ্ছে করলে এআই সঙ্গীদের সঙ্গে যৌনগন্ধী কথা বলতেও স্বচ্ছন্দ হচ্ছেন তাঁরা। এই প্রকার এআই সঙ্গীদের সঙ্গে তরুণ-তরুণীরা মানসিক ভাবে জড়িয়ে পড়ছেন। মনখারাপ হলেই এআই সঙ্গীদের ‘ভয়েস কল’ করে নিজেদের সুখদুঃখের কথা ভাগ করে নিচ্ছেন তাঁরা।
দিন দিন এআই সঙ্গীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, প্রেমের সম্পর্কের সমীকরণ খানিকটা বদলে দিচ্ছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, একটি সম্পর্কে থেকেও যাঁরা এআই সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন, তাঁরা কী আদৌ পরকীয়া করছেন? আসল সঙ্গীর সঙ্গে কি তাঁরা প্রতারণা করছেন? আগামী সময়ে মানুষ স্বচ্ছন্দ হয়ে এআই সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা জনসমক্ষে স্বীকার করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। আমেরিকান এক মহিলা ইতিমধ্যেই এইআই চ্যাটবটের সঙ্গে বিয়ে সেরেছেন, এমন খবরও বেরিয়েছে সংবাদমাধ্যমে।
প্রেম কিংবা বিবাহের সম্পর্কে থেকে যখন কোনও পুরুষ কিংবা মহিলা সঙ্গীকে না জানিয়েই মানসিক ভাবে কিংবা শারীরিক সম্পর্ক তৈরির জন্য অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তখন ধরা হয় যে তিনি প্রতারণা করছেন। এআই সঙ্গীর ক্ষেত্রেও তো বিষয়টা সেই রকমই। আপনি যদি একটি সম্পর্কের ছোট ছোট চাহিদাগুলি পূরণ করার জন্য এআইয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন এবং আপনার সঙ্গী যদি তাতে স্বচ্ছন্দ বোধ না করেন, তা হলে এটি প্রতারণা করাই হবে, এমনটাই মত মনোবিদদের। যদি কোনও ব্যক্তি প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্বামী কিংবা স্ত্রীকে ছেড়ে চ্যাটবটের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী হন, তার মানে কিন্তু তিনি নিজের সম্পর্ক নিয়ে খুশি নন। বার বার নানা অছিলায় এআই সঙ্গীর সঙ্গেই বেশি সময় কাটানো, নিজের সম্পর্কে সেরাটা না দেওয়া— এ সব কিন্তু এক অর্থে সম্পর্কের প্রতি অবিচার করাই হয়।
এআই-এর প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাকে কিন্তু মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না মনোবিদেরা। এই ধরনের সম্পর্কে থাকলে আপনার প্রত্যাশা অনেক বেড়ে যাবে, বাস্তবে যে সেই সব প্রত্যাশা পূরণ হবেই, এমন কোনও আশ্বাস নেই। আর তখনই তৈরি হবে একাকিত্ব। বাস্তব সঙ্গীর মধ্যে এআই সঙ্গীর গুণগুলি খোঁজার একটা প্রবণতা তৈরি হবে সে ক্ষেত্রে। আর সেইগুলি না মিললেই মনের মধ্যে তৈরি হবে হতাশা, কমবে আত্মবিশ্বাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy