Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Shraddha Walkar Murder Case

খুনের ভয় নিয়েও দু’বছর আফতাবের সঙ্গে কাটিয়ে দেন শ্রদ্ধা! কিসের আশায় থেকে গিয়েছিলেন?

মাঝেমধ্যে নির্যাতনের শিকার হলেও সম্পর্কে থেকে যায় মানুষ। ঠিক যেমনটা হয়েছিল শ্রদ্ধার সঙ্গে। কিন্তু কেন সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি তরুণী?

২০১৯ সালে যখন শ্রদ্ধা কল সেন্টারে কাজ করতেন তখনই আফতাবের সঙ্গে ডেটিং অ্যাপে আলাপ হয় তাঁর।

২০১৯ সালে যখন শ্রদ্ধা কল সেন্টারে কাজ করতেন তখনই আফতাবের সঙ্গে ডেটিং অ্যাপে আলাপ হয় তাঁর। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২২ ১৪:০৪
Share: Save:

১৮ মে প্রেমিকা শ্রদ্ধা ওয়ালকারকে গলা টিপে খুন করেছিলেন অভিযুক্ত প্রেমিক আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। কিন্তু তার ১০ দিন আগে অর্থাৎ, ৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করার আসল ছক কষেছিলেন তিনি। তবে ওই দিন শ্রদ্ধা ‘আবেগপ্রবণ’ হয়ে পড়ায় আফতাব পিছিয়ে দেন খুনের পরিকল্পনা। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে ওই ঘটনার পর পুলিশি তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদে।

শ্রদ্ধা ও আফতাব দু’জনেরই পরিচিত লক্ষ্মণ নাদার পুলিশকে জানায়, ২০১৯ সালে যখন শ্রদ্ধা কল সেন্টারে কাজ করতেন তখনই আফতাবের সঙ্গে ডেটিং অ্যাপে আলাপ হয় তাঁর। তার পর কিছু দিন একসঙ্গে একটি ফিটনেসের যন্ত্রপাতির দোকানে কাজ করে দু’জনে। পরিবারকে সম্পর্কের কথা জানানোর পর দু’জনের পরিবারই তাঁদের সম্পর্ক মেনে নেয়নি। তার পরেই শ্রদ্ধা-আফতাব একটি ভাড়াবাড়িতে ‘লিভ-ইন’-এ থাকতে শুরু করেন। প্রায় দু’বছর একত্রবাসে থাকেন তাঁরা। নানাবিধ বিষয় দু’জনের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা হত। ২০২০ সালে এমন এক ঘটনা ঘটে যখন শ্রদ্ধার বন্ধুরা আফতাব সম্পর্কে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েই ফেলেছিলেন। তবে শেষে পিছু হটেন তাঁরা।

লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘২০২০ সালে শ্রদ্ধা আমাকে হোয়াট্‌সঅ্যাপে জানায় আমি যদি ওঁকে বাড়ি থেকে বার করে না আনি তা হলে আফতাব শ্রদ্ধাকে মেরে ফেলবে। আমরা, ওঁর বন্ধুরা এই কথা শুনে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে চাইলে শ্রদ্ধা আমাদের বারণ করে দেয়। আমরা শ্রদ্ধার মতামতকে তখন সমর্থন করি।’’

শ্রদ্ধার আর এক বন্ধু রজত শুক্ল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘প্রথম দিকে ২০১৯ সালে শ্রদ্ধা আর আফতাবের সম্পর্ক ভালই ছিল। কিন্তু কিছু দিন পর থেকে শ্রদ্ধা বলতে শুরু করে আফতাব ওর উপর হাত ওঠায়। ও আফতাবের সঙ্গে আর সম্পর্কে থাকতে পারছে না, কিন্তু সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসাও সম্ভব হচ্ছে না শ্রদ্ধার পক্ষে।’’

সম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা চলে এলেও কেন সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না অনেকে?

সুখী জীবনের জন্য সঙ্গী দরকার হয় অধিকাংশ মানুষেরই। সম্পর্ক সুখের রাখতেও চান সকলে। তবু দেখা যায়, অনেকেই এমন কিছু মানুষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন যে, সেই সম্পর্ক বেশ অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠে। ছোটখাটো বিষয় নিয়েও অশান্তি লেগে থাকে। তবু এমন বহু সম্পর্কই ভাঙে না। থেকে যায় বছরের পর বছর।

বহু কষ্ট হলেও সমস্যায় ভরা সম্পর্কের মায়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না অনেকে? এমন দাম্পত্য অথবা প্রেমে জড়িতদের পরিজনেরা বহু সময়ে সতর্ক করলেও, তাতে সব সময় কাজ হয় না। মাঝেমধ্যে নির্যাতনের শিকার হলেও সম্পর্কে থেকে যায় মানুষ। ঠিক যেমনটা হয়েছিল শ্রদ্ধার সঙ্গে। কিন্তু কেন সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি শ্রদ্ধা?

বহু কষ্ট হলেও সমস্যায় ভরা সম্পর্কের মায়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না অনেকে?

বহু কষ্ট হলেও সমস্যায় ভরা সম্পর্কের মায়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না অনেকে? ছবি: ফাইল ছবি।

এর অন্যতম কারণ অনেকের মনেই আশা থাকে, তাঁদের ভালবাসায় একেবারে বদলে যাবে সঙ্গীর তিক্ত মনোভাব। শ্রদ্ধাও কি তাই মনে করেছিলেন? এ ছাড়াও কারণ হতে পারে অভ্যাস। সম্পর্কে থাকার অভ্যাস থেকে বেরোতেই পারেন না বহু মানুষ, এমনটাই মনে করেন মনোবিদরা। ফলে নিয়মিত মানসিক অত্যাচার চলতে থাকলেও আফতাবের জীবনের সঙ্গে হয়তো নিজেকে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ফেলেছিলেন শ্রদ্ধা। মনোবিদদের মতে, অনেকেই আবার সম্পর্কে নিরাপত্তা খোঁজেন। আরও একটি মানুষ জীবনে থাকলে একা লাগবে না, এমনও ভাবেন অনেকে। ফলে সে মানুষটি যেমনই ব্যবহার করুন না কেন, থেকে যান তাঁর সঙ্গে। শ্রদ্ধার ক্ষেত্রেও হয়তো এমনই হয়েছে। মনোবিদদের মতে, এ ক্ষেত্রে সমাজের চোখরাঙানিও বড় কারণ হতে পারে। বিশেষ করে দাম্পত্য বা লিভ-ইনের ক্ষেত্রে সমাজ মাঝে এসে যায়। অশান্তি যতই থাক, তবু সম্পর্ক ভেঙে গেলে লোকে কী বলবে মনের মধ্যে এই আশঙ্কা কাজ করে প্রতিনিয়ত। সমাজের চোখরাঙানি বড় হয়ে দাঁড়ায় নিজের সুখের তুলনায়। কে বলতে পারে শ্রদ্ধার ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়নি?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE