Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Physiotherapy

Relationship: মনোবিদের প্রেমে পড়েছেন? বাস্তবে কি হতে পারে ‘ডিয়ার জিন্দেগি’

কখনও মনোবিদের কাছে গিয়ে মনে হয়, তিনিই সবচেয়ে কাছের মানুষ। তিনিই শুধু তাঁর কথা শোনেন মন দিয়ে। নির্ভরশীল হয়ে পড়ার প্রবণতাও দেখা দেয়।

এমন কি সত্যিই হয়?

এমন কি সত্যিই হয়? ফাইল চিত্র

সুচন্দ্রা ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২১ ১৬:০৭
Share: Save:

শাহরুখ খানের মতো সুদর্শন মনোবিদ হলে কেউ কী করে প্রেমে না পড়ে থাকবেন? ‘ডিয়ার জিন্দেগি’ ছবিতে আলিয়া ভট্ট তাঁর মনোবিদ শাহরুখ খানের প্রেমে পড়েন। ছবি দেখে অনেকেই রসিকতা করে বলেছিলেন, তাঁদের এমনই এক মনোবিদ প্রয়োজন। তা হলে জীবনের সব সমস্যা মিটে যাবে। বাস্তবেও এমন ঘটনা কিন্তু বিরল নয়।

অবসাদে ভুগছিলেন বছর চল্লিশের যুবক। বিবাহ বিচ্ছেদের পরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকছিল। মনোবিদের সাহায্য নিতে শুরু করেন কয়েক মাস পরে। ধীরে ধীরে খানিক সুস্থ বোধ করেন। টের পান, মনোবিদের চেয়ে ভাল বন্ধু তাঁর জীবনে তখন আর একজনও নেই।

কখন যে মনোবিদের উপরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায় নামের সেই ব্যক্তি, তা নিজেও টের পাননি। অর্ঘ্য পেশায় স্কুল শিক্ষক। ছাত্রদের পথ দেখান তিনি। ‘‘কিন্তু আমাকে পথ দেখাচ্ছিল মনোবিদ। ওর কাছে যাওয়া যে কোনও এক সময়ে বন্ধ করতে হবে, তা ভাবতেই পারছিলাম না’’, বলেন অর্ঘ্য। মাস কয়েকের মধ্যে টের পান মনোবিদের প্রেমে পড়েছেন তিনি।

এমন ঘটনা একা অর্ঘ্যর জীবনে ঘটেছে, এমন নয়। শহরের মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, এমন অনেক সময়েই হয়ে থাকে। কাউন্সেলিংয়ের জন্য কোনও মনোবিদের কাছে গিয়ে মনে হয় তিনিই সবচেয়ে কাছের মানুষ। তিনিই শুধু তাঁর কথা শোনেন মন দিয়ে। বোঝেন সবটা। এমন ভাবে আর কেউ তো করেন না। ফলে নির্ভরশীল হয়ে পড়ার প্রবণতাও দেখা দেয়। কার না ইচ্ছা করে এমন মানুষের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে!

যেমন হয়েছে নীল কর্মকারের সঙ্গেও। এ শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করেন নীল। মনোবিদের সঙ্গে কথা বলছিলেন মাস পাঁচেক ধরে। অতিমারির এই সময়ে সে কাজ হচ্ছিল নেটমাধ্যমেই। কিন্তু একদিন আর ধরে রাখতে পারলেন না নিজেকে। বলেই বসলেন, মনোবিদকে না দেখে থাকতে পারছেন না। দিনভর শুধু নিজের মনোবিদের কথাই ভাবেন। তাঁর সঙ্গেই আগামী দিনে সুখে থাকতে চান।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

এই দুই সম্পর্ক কি এগিয়েছিল? না। একটিও নয়। এক ক্ষেত্রে, অন্য কারও সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মনোবিদ। কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছেন। আর এক ক্ষেত্রে মনোবিদ অন্য দিকে মন চালনা করার চেষ্টা করেছেন। নিজের এক সহকর্মীর কাছে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছেন রোগীকে। তবে এই পদক্ষেপে মন ভেঙে গিয়েছে রোগীদের। নীল বলেন, ‘‘এত দিন আমার সঙ্গে ভাল ভাবে কথা বললেন কেন তা হলে? আমি তো ভাবলাম মনোবিদও আমাকে পছন্দ করেন।’’

কেউ কারও প্রেমে পড়তেই পারেন। সে প্রেম না-ই এগোতে পারে। তা নিয়ে এত কথা বলা কেন?

কারণ একটাই। এ প্রেম কিছুটা অন্য রকম। মনোবিদের প্রেমে পড়া আর পরিচিত কোনও মানুষের প্রেমে পড়া, এক নয়। বাস্তবে মনোবিদের প্রেমে পড়লে সে সম্পর্ক কোন দিকে এগোতে পারে, তার খেয়াল রাখেন ক’জন!

কিন্তু এর মানে মনোবিদেরা কি কখনও প্রেমে পড়েন না? এমন সরল ধারণা তৈরির আগে জানা প্রয়োজন কিছু কথা।

মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, রোগীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান‌ো নীতির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘‘মনোবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনার এ এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রোগী দেখার নীতি-নিয়ম শিখতে হয়। মন ভাঙা কোনও মনোবিদেরই উদ্দেশ্য নয়। বরং একজন মনোবিদ রোগীর সার্বিক ভাল থাকার কথা মাথায় রেখেই থেরাপির নিয়ম স্মরণ করানোর দায়িত্ব পালন করেন।’’ বাস্তব জীবনে যে ‘ডিয়ার জিনদেগি’-র শাহরুখ খান হয়ে যাওয়া উচিত নয়, সে কথাও মনে করান মনোবিদ।

কোনও রোগী প্রেমে পড়লে কী করেন তাঁরা? নিয়মের কথা মাথায় রেখে চললে, তখনই সেই রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব কোনও সহকর্মীর হাতে তুলে দিতে পারেন বলে জানান মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ।

অনুত্তমা ও মোহিতের মত, এই নীতি তৈরি হয়েছে প্রয়োজনেই। ব্যক্তিগত কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে চিকিৎসায় বাধা সৃষ্টি হতে পারে। প্রেম তো দূরের কথা। বন্ধুত্ব বা কোনও ধরনের সামাজিক আদানপ্রদানেই জড়ানোর নিয়ম নেই রোগী এবং মনোবিদের। রোগী সে কথা খেয়াল নাও রাখতে পারেন। মনোবিদেরা রাখেন। অনুত্তমা সাইকোডায়নামিক প্রক্রিয়ায় থেরাপি করে থাকেন। তাতে রোগীর যখন মনোবিদের প্রতি আকর্ষণ বা প্রেম জন্মায়, সেটিকে ‘ট্রান্সফারেন্স’ বলা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তখনই তাঁকে অন্যত্র রেফার করার কথা নয়। তাঁর আবেগ এবং প্রেমের ভাষার মধ্যে দিয়ে, তাঁকে নতুন করে বোঝার একটা অবকাশ থেকে যায়। তবে উদ্দেশ্য তাঁর সঙ্গে প্রেম করা নয়। বরং এই প্রেমের সংজ্ঞা তাঁর কাছেই নতুন করে তুলে ধরতে পারেন মনোবিদ। তার মাধ্যমে সেই রোগীকে সামাজের সঙ্গে নতুন ভাবে যুক্ত হতে সাহায্য করা যেতে পারে।

তার মানে কি কখনও মনোবিদের প্রেমে প়ড়লে এগনোই যাবে না? মোহিত বলেন, ‘‘মাস ছয়েক যোগাযোগ ছিন্ন করতে হয়। তার পরেও যদি সেই সম্পর্ক এগনোর সুযোগ আসে, তখন ভেবে দেখা যেতে পারে। তার আগে নয়।’’ অন্য রকম পদক্ষেপ কি কেউ কখনও নেননি? তেমন নয়। তবে মোহিত জানান, সে কাজ নিয়মের বিরুদ্ধে।

অনুত্তমা মনে করান, ‘‘আমরা মূলত মনোবিদের ভূমিকার প্রেমে পড়ি। এই ভূমিকার অন্তরালে সেই মানুষটি কেমন? তাঁর সঙ্গে সত্যিই আমার প্রেম করতে কেমন লাগবে, অনেক সময়ে রোগী সে কথা না-ও বুঝতে পারেন। এ কথা তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও মনোবিদের।’’

মনোবিদের প্রেমে পড়লে এ সব কথা মনে রাখা যেতে পারে। তবে আর মন ভাঙার প্রসঙ্গ উঠবে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy