অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা। বন্ধু সময় মতো বাড়ি থেকে বেরিয়ে আপনাকে ফোন করেছেন। কিন্তু তৈরি হওয়া তো দূর, তখনও আপনি নিদ্রামগ্ন। বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছেন। বন্ধুর ফোন পেয়ে অবলীলায় বলে দিলেন, আপনিও বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছেন। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পৌঁছে যাবেন। দৈনন্দিন জীবনে এমন ছোটখাটো মিথ্যে বলে থাকেন অনেকেই। তাতে যে সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়ে, এমন নয়। অনেক সময়ে টুকটাক মিথ্যে বলেই অনেক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা যায়। কিন্তু এই মিথ্যে বলার প্রবণতা যদি অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়, তা হলেই সমস্যা বাঁধে। সম্পর্কের সমীকরণ বদলে যেতে থাকে। পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত নড়ে যায়। যিনি মিথ্যে বলছেন, তাঁর উল্টো দিকের মানুষটিও নাজেহাল হয়ে পড়েন। কিন্তু কারণ-অকারণে কেন মিথ্যে বলার প্রয়োজন হয়? গোপনীয়তা থেকেই কি জন্ম নেয় হাজার হাজার মিথ্যেরা? তার হদিস পেতেই আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব পেজে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লোকে কী বলবে’ অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ‘মিথ্যে বলার অভ্যাস’।
প্রতি বারের মতো এ পর্বেও বহু চিঠি পেয়েছেন মনোবিদ। কিন্তু প্রিয়জনের মিথ্যেতে জেরবার হয়ে যেমন অনেকে চিঠি লিখেছেন, তেমনই নিজের মিথ্যে বলার অভ্যাস নিয়েও বিপর্যস্ত হয়েও চিঠি পাঠিয়েছেন অনেকে। মিথ্যে বলতে চাইছেন না কিন্তু আটকাতেও পারছেন। এমন দ্বৈত দ্বন্দ্বে ক্রমশ অবসাদ গ্রাস করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন লিখেছেন, ‘ছোটবেলা থেকে মা, বাবা, সকলেই বলেছেন মিথ্যা বলা পাপ। একটা মিথ্যে বললে আরও একশোটা মিথ্যে বলতে হয়। আমিও চাইতাম না মিথ্যে বলতে। কিন্তু যত বড় হলাম, দেখলাম ছোটখাটো বিষয়ে একটু মিথ্যে বললে পার পেয়ে যাওয়া যায়। এমন ভাবে এগোত এগোত যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে পা রাখলাম, আমার বাবা কী কাজ করেন তা নিয়েও মিথ্যে বললাম। খুব লজ্জা করল। মনে হল আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারব তো? আজও মিথ্যে বলার পর খুব চিন্তা হয়। জানাজানির ভয় হয়। অস্বস্তি হয়। একরাশ খারাপ লাগা, অনুশোচনা জন্ম নেয়। কিন্তু পুরোপুরি আটকাতে পারি না। এর থেকে কী কোনও মুক্তির পথ আছে?’’
নিজের মিথ্যে বলার অভ্যাসে নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে প়ড়েছেন। চাইছেন এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে। কিন্তু পারছেন না। মানসিক দহনে অস্থির হয়ে প়ড়েছেন। সমস্যাটি ধরতে পারলে অনেক সময় সমাধানের পথ মসৃণ হয়। কিন্তু মুক্তি কি আদৌ সম্ভব? মনোবিদের বলেন, ‘‘দু’-একটি ছোটখাটো মিথ্যে বড় হওয়ার পথে থাকেই। কিন্তু যাঁরা চিঠি লিখেছেন, তাঁদের মনে হচ্ছে মিথ্যে বললে কিছু বাড়তি সম্ভাবনার সুযোগ থেকে যাচ্ছে। মিথ্যে দিয়ে ক্ষমতার প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে। বাবার পেশা সংক্রান্ত মিথ্যে। আসলে বহু সময় আমরা আমাদের হিনম্মন্যতা নিয়ে কষ্ট পেতে থাকি। অন্যদের থেকে বাড়তি মনোযোগ পেতে না চাইতেই মিথ্যে বেরিয়ে আসে মুখ থেকে। প্রাধান্য আর পাত্তা পাওয়ার প্রত্যাশা থেকে অনেক মিথ্যের জন্ম হয়। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা, আমার পরিবার, পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা, আমার পাড়া, আমার বন্ধুবান্ধব এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে যে আমি— সেই ‘আমি’টাকে আগে গ্রহণ করা জরুরি। আমার মিথ্যে আমিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। প্রাধ্যন্য দিলেই মিথ্যে আমিটা অকারণে বাইরে চলে আসছে। মিথ্যে সত্ত্বাকে যতটা সম্ভব ভিতরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সময় লাগলেও, চেষ্টা করলে হবে না, এমন নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy