Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Anuttama Bandyopadhyay

গবেষণাস্তরে পড়াশোনা করতে গিয়েও ইংরেজি বলায় আড়ষ্টতা রয়ে গিয়েছে, আলোচনায় মনোবিদ

ছোট থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার সুযোগ হয়নি। বড় হয়ে ‘স্পোকেন ইংলিশ’-এর প্রশিক্ষণ নিয়েও যে খুব সুবিধা করতে পেরেছেন, তা-ও নয়। ‘লোকে কী বলবে? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিষয় ‘ইংরেজি বলতে পারি না’।

Image of Anuttama Bandyopadhyay

ছবি: প্রতীকী।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৩ ২০:৩৮
Share: Save:

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরেও কাজেকর্মে এখনও বিদেশি প্রভাব রয়ে গিয়েছে। ছোটবেলায় না হলেও বড় হয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইংরেজি বলতে না পারা নিয়ে বিদ্রুপের শিকার হওয়ার ঘটনা বিরল নয়। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় অনেকেই নামীদামি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করার সুযোগ পান না। অনেক অভিভাবক আবার বাংলা মাধ্যমে সন্তানকে ভর্তি করিয়ে বেশ গর্ব বোধ করেন। স্বাজাত্যবোধ জাগ্রত হওয়া ভাল। তবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার কারণে বিপাকে পড়তে হয় অনেককেই। ইংরেজি ভাষা বুঝতে পারেন না, এমন নয়। লিখতেও অসুবিধে হয় না। তবু কারও সামনে বলতে গেলে জিভ জড়িয়ে যায়। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি করার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক লাইভ এবং ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লোকে কী বলবে? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘ইংরেজি বলতে পারি না’।

ব্যক্তিগত সমস্যার কথা উল্লেখ করে প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে প্রশ্ন পাঠানো যায়। ‘ইংরেজি’ ভাষা বলতে না পারা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন এসেছিল। এই পর্বের প্রথম চিঠিটি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং এই অনুষ্ঠানের নিয়মিত দর্শক অয়ন্তিকার। বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করলেও অয়ন্তিকা জানেন, পড়াশোনা বা কাজের ক্ষেত্রে ভাষা বা মাধ্যম কোনও বাধা হতে পারে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনর্গল নির্ভুল ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারা অয়ন্তিকার সমস্যা অন্য জায়গায়। অয়ন্তিকা বলছেন, “কারও সামনে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে গেলে কেমন যেন সব গুলিয়ে যায়। কোথাও যেন সাহসের অভাব বোধ করি। এই সমস্যা কি শুধু আমার সঙ্গেই হয়?” অয়ন্তিকা, দেবস্মিতা, পৃথার মতো আবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেরই প্রশ্ন এটি।

নিত্য দিন নানা ক্ষেত্রে ইংরেজি বলতে না পারা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন, এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। নিজেরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে পারেননি। তাই সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ভর্তি করাতে গিয়ে অভিভাবকদের ইন্টারভিউয়ের সময়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেককেই। বন্ধুবান্ধব, কর্মক্ষেত্র তো বটেই, সামাজিক পরিসরেও হাসির খোরাক হচ্ছেন অনেকে। শুধু কি তাই? ইংরেজিতে পড়াশোনা করেছেন। ওই ভাষা ও সাহিত্য স্কুলে পড়ান। ইংরেজির শিক্ষক হয়েও ওই ভাষায় কথা বলতে না পারার লজ্জা রয়েছে।

সমাধানে অনুত্তমা জানালেন, “একটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে গেলে সেই ভাষার আভিধানিক অর্থ বা ওই ভাষার ব্যাকরণের কাঠামো জানাই যথেষ্ট নয়। সঙ্গে ওই ভাষা নিয়ে ভিতর থেকে স্বাচ্ছন্দ্যের প্রয়োজন রয়েছে। ছোট বাচ্চা যখন প্রথম কথা বলতে শেখে, তখন তো ভাঙা ভাঙা শব্দই বলে। খাতা-কলমে লিখে ‘মা’ ডাক শেখাতে হয় না তাকে। ক্রমে বিভিন্ন শব্দ নিয়ে না বুঝেই অনর্গল কথা বলতে চেষ্টা করে সে। বাচ্চাটির অস্পষ্ট কথা নিয়ে বড়রা মজা করেন ঠিকই, কিন্তু বিদ্রুপ বা ব্যঙ্গ করেন না। তাই সে ওই ভাষায় সড়গড় হতে শেখে। দেবস্মিতা, পৃথার মতো অনেকেই ইংরেজি ভাষা শুধু বোঝেন না, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একা একা কথাও বলেন। তখন কোনও সমস্যা হয় না। কারণ, আয়না তাঁদের সমালোচক নয়। যে মুহূর্তে কারও সামনে কথা বলতে যাচ্ছি, মাথায় ঘুরতে থাকছে উল্টো দিকের মানুষটি কী ভাবছেন, এই চিন্তা। সাহসের খামতি হচ্ছে। কথা শুরু করা আগেই নিজেদের গুটিয়ে ফেলেন অনেকেই। এমন ভাবনা অনর্থক নয়।”

এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠারও উপায় রয়েছে। মনোবিদ বলেন, “প্রথমত, নিজেকে বুঝতে হবে, কোনও ভাষা জানা বা না জানা সেই ব্যক্তির পরিচয় বা মাপকাঠি হতে না পারে না। দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনে বিদেশি ভাষা যখন শিখতেই হয়, তার প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কারণ, সেটি আমাদের মাতৃভাষা নয়। তৃতীয়ত, কথা বলতে গিয়ে আটকাচ্ছে। কারণ, কথা বলার পাশাপাশি মনের কোথাও যেন আত্মমূল্যায়নও চলছে। সে ক্ষেত্রে বিদেশি ভাষায় প্রশিক্ষণ থাকলেও যে কেউ দুর্বল হয়ে পড়বেন। চতুর্থত, অ্যাংজ়াইটি বা উদ্বেগ থেকেও অনেক সময়ে এমনটা হয়। সঠিক উচ্চারণ করতে পারছি কি না। উল্টো দিকের মানুষটি আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছেন কি না, এ ভাবনাও মন থেকে তাড়াতে হবে। পঞ্চমত, ইন্টারভিউ বা প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময়ে ইংরেজিতে কথা বলতে না পারলে, নিজের বক্তব্য মাতৃভাষাতেই উল্টো দিকের মানুষগুলোর সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে কাগজ-কলমের সাহায্য নিন। কিন্তু ইংরেজি বলতে পারছেন কি না, সেই বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব না দেওয়াই ভাল।”

অন্য বিষয়গুলি:

Anuttama Bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE