Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
arthritis

Psoriatic arthritis: সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস থেকে হতে পারে অন্যান্য সমস্যাও

সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের নিরাময়ে ধাপে ধাপে চিকিৎসা প্রয়োজন। সঙ্গে দরকার কোনও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

সুবর্ণ বসু 
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:১৫
Share: Save:

সোরিয়াসিস হল এক ধরনের চর্মরোগ, যাতে ত্বকে রক্তবর্ণের বা কালচে ছোপ দেখা যায় এবং সেই স্থানের চামড়া খসখসে আঁশের মতো হয়ে পড়ে। আর সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস হল, সোরিয়াসিস আক্রান্ত রোগীদের গাঁট ফুলে গিয়ে যন্ত্রণা হওয়া। যাদের সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস থাকে, তাদের আর্থ্রাইটিসের উপসর্গগুলি বেড়ে ওঠার বেশ কিছু বছর আগে থেকেই সোরিয়াসিস থাকে।

প্রধান কারণ

বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জেন ডা. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “আর্থ্রাইটিস সাধারণত দু’ধরনের, অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস এবং ইনফ্ল্যামেটরি আর্থ্রাইটিস। যে ধরনের অটো ইমিউন ডিজ়অর্ডারের জন্য জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাকে বলে ইনফ্লামেটরি আর্থ্রাইটিস। যেমন গাউটি আর্থ্রাইটিস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস। আবার ছোটবেলায় লাগা কোনও চোট থেকে হতে পারে পোস্ট ট্রম্যাটিক আর্থ্রাইটিস। কিংবা জয়েন্টে কোনও ইনফেকশন থেকে পরে হতে পারে পোস্ট ইনফেকটিভ আর্থ্রাইটিস। এগুলোও আবার পরে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসে পরিণত হয়। তখন সেটি সেকেন্ডারি অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস। কোনও কারণ ছাড়াই যে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস, সেটি প্রাইমারি অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের পর্যায়ভুক্ত।”

দীর্ঘ দিন ধরে সোরিয়াসিসে ভুগছেন, এমন মানুষের ক্ষেত্রেই সাধারণত এই সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস দেখা যায়। সোরিয়াসিস যেমন একটি অটোইমিউন ডিসঅর্ডার, অর্থাৎ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের সুস্থ কলাকোষকে আক্রমণ করলে এই রোগ হয়। অনেকের মতে, ঠিক তেমন করেই সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস রোগটিরও সৃষ্টি হয়।

তবে ঠিক কেমন করে এই রোগের উৎপত্তি, তা কিন্তু নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। এ নিয়ে মতপার্থক্য লক্ষ করা যায়। সাধারণভাবে মনে করা হয়, জিনগত কিংবা পরিবেশগত বিভিন্ন ফ্যাক্টর যেমন, স্ট্রেস বা চাপ, ভাইরাস কিংবা কোনও আঘাত থেকেও এই রোগের উৎপত্তি হতে পারে।

এই সমস্যায় সাধারণ ভাবে—

* গাঁট ফুলে শক্ত হয়ে ওঠে।

* সংলগ্ন পেশিতেও যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে।

* সকালে ঘুম থেকে উঠে কোমরে বা হাঁটুতে ব্যথা। হাঁটলে, চললে কমে যায়, কিন্তু বিশ্রামে আবার বাড়ে।

* সকালের দিকে প্রায় আধ ঘণ্টা বা চল্লিশ মিনিট অস্থিসন্ধি কঠিন বা অনমনীয় হয়ে থাকা।

* আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৯০ শতাংশের মধ্যেই নখের ভঙ্গুরতা, গোড়া থেকে নখ ভেঙে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়।

* কোনও নির্দিষ্ট আঙুল হঠাৎ ফুলে গিয়ে সসেজের আকার ধারণ করা, যাকে ডাক্টালাইটিসও বলা হয়।

তবে এই লক্ষণগুলো থাকলেই যে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন।

রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা

গাঁটের সমস্যা, কাঠিন্যের উপসর্গের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষার সাহায্য নেওয়া হয়। আর্থ্রাইটিসের প্রকার নির্ণয়ের জন্য সাধারণত যে সব পরীক্ষা করা হয়, তার মধ্যে প্রধান হল এক্স রে এবং রক্ত পরীক্ষা, যার মাধ্যমে এরিথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশন রেট এবং সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিনের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

একটি নির্দিষ্ট ওষুধ যেহেতু সব ধরনের আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়, তাই শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া উচিত। শারীরিক চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যায় অ্যান্টি রিউম্যাটিক অথবা অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি মেডিসিন দেওয়া হতে পারে।

সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের বিভিন্ন ধরন

* ডিস্টাল আর্থ্রাইটিস: আঙুলের শেষ জয়েন্টের আর্থ্রাইটিস।

* অলিগো-আর্থ্রাইটিস: দুই থেকে চারটি জয়েন্টে আর্থ্রাইটিস।

* পলি-আর্থ্রাইটিস: পাঁচটিরও বেশি অস্থিসন্ধির আর্থ্রাইটিস। এক্ষেত্রে সাধারণত দেহের দুই পাশের একই অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হয় এবং রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো লক্ষণ তৈরি হয়।

* আর্থ্রাইটিস মিউটিলেন্স: এতে বেশির ভাগ সময়েই গোড়ালির অস্থিসন্ধি বিকৃত হয়ে পড়ে। এতে হাতের ও পায়ের বিভিন্ন আঙুলও কুঁকড়ে যায়।

* স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস: মেরুদণ্ডের সংযোগস্থলগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস থেকে সম্ভাব্য অন্যান্য সমস্যা

সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে যেখানে লিগামেন্ট বা টেন্ডন হাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, সেখানেও ইনফ্ল্যামেশন হতে পারে। একে বলে সোরিয়াটিক এনথেসাইটিস। এগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত গোড়ালির পিছনে অ্যাকিলিসের টেন্ডনের সংযুক্তিস্থলে, পায়ের তলার প্ল্যান্টার ফ্যাসার সংযুক্তির স্থানে ইনফ্ল্যামেশন হয়ে থাকে। এর ফলে সকালে বা বিশ্রামের পর এই স্থানগুলিতে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।

সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস রোগীরা চোখের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এর ফলে কোনও একটি বা দু’টি চোখই লাল হয়ে গিয়ে দেখতে অসুবিধে হতে পারে। একে বলে ইউভিআইটিস।

সোরিয়াসিসের রোগীদের মতো সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট ওষুধ খেয়ে এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে এই ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।

সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের সাধারণ চিকিৎসা

সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য রোগীর গাঁটের ব্যথা এবং অনমনীয়তা। পাশাপাশি সোরিয়াসিসের অন্যান্য লক্ষণ উপশমে সাহায্য করে রোগীকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।

* ওজন কমানো: সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ৪০ শতাংশ রোগী স্থূলকায় বা মেদবহুল। ওজন নিয়ন্ত্রণে এনে ফেললে, সোরিয়াসিস এবং যে কোনও ধরনের আর্থ্রাইটিসের জন্যই চিকিৎসা প্রক্রিয়া সহজতর হতে পারে।

* ব্যায়াম এবং থেরাপি: ব্যায়াম এ রোগের জন্য খুবই জরুরি। সাঁতার কাটা বা এই ধরনের কার্ডিয়ো ভাস্কুলার ব্যায়াম শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী সইয়ে সইয়ে করতে পারলে অনেকটাই উপকার পাওয়া যায়। শুধুমাত্র শারীরিক ব্যায়াম সোরিয়াটিক এবং স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিসের ব্যথা এবং অস্থিসন্ধির অনমনীয়তা অনেকাংশে দূর করতে সহায়তা করে।

* ভ্যাকসিন বা টিকা: যেহেতু সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস রোগের রোগ নিয়ন্ত্রণকারী অ্যান্টিরিউম্যাটিক ড্রাগ খেলে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে দমন করে (ইমিউনোসাপ্রেশন), এর ফলে শরীরে অন্যান্য জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নিউমোনিয়া-সহ হেপাটাইটিস বি টিকা গ্রহণ করা সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের রোগীর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় বলে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন।

* ব্যথা কমানোর ওষুধ: নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (এনএসএআইডি) ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমায়। এই মেডিসিনের অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব পাওয়ার জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণে ও নির্দিষ্ট সময় ধরে ওষুধটি গ্রহণ করা প্রয়োজন। যদি এই ধরনের ওষুধের প্রাথমিক ডোজ় উপসর্গগুলি উপশম না করে, তা হলে চিকিৎসক ধীরে ধীরে ডোজ় বৃদ্ধি করেন বা অন্য এনএসএআইডি রোগীকে দেন।

সার্জারি এবং রিপ্লেসমেন্ট

একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে সার্জারি বা রিপ্লেসমেন্টের সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। তবে তা অবশ্যই নিতে হবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে। রোগটি কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা বিচার করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ডা. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বলছেন, “৪৫-৫০ বছর বয়স থেকে প্রায় সব মানুষেরই এক্স-রে করলে আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ ধরা পড়ে। কিন্তু বাইরে হয়তো তার কোনও লক্ষণ নেই। সেই সমস্ত মানুষের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষের হয়তো উপসর্গ প্রকাশ পায়। এদের মধ্যে আবার মাত্র ২ শতাংশ রোগীর হয়তো সার্জারির দরকার হয়। এখানে বলে রাখা দরকার, সার্জারি মানেই কিন্তু রিপ্লেসমেন্ট নয়। সার্জারির নেপথ্যে সার্জেনের কিছু নির্দিষ্ট দর্শন কাজ করে। মানুষের জীবন চিরস্থায়ী নয়। সেখানে যখন আমরা ছুরি-কাঁচির সাহায্যে কিছু করছি, তার উদ্দেশ্য সব সময় হবে সেই রোগীকে একটা উন্নততর জীবনযাত্রায় নিয়ে যাওয়া। সেই কারণে রোগের ব্যাপকতা যদি এত বেশি হয় যে, সেখানে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, তা হলেই সার্জারির মাধ্যমে তাকে আর একটু ভাল অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করা হয়।’’ রোগীর বয়স, তার জীবনযাত্রা এবং কাজকর্মের ধরন, রোগের ব্যাপকতা— এই সব কিছু বিবেচনা করে তার পরেই সার্জারির প্রশ্ন ওঠে।

অন্য বিষয়গুলি:

arthritis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy