প্রতীকী ছবি।
ফুসফুস ক্যানসার সচেতনতা মাসে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার ডাক দিয়ে ধূমপানকে গুডবাই করে দূষণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিলেন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিউটের রেডিয়েশন অঙ্কোলজির চিকিৎসক তাপস মাজি। বিশ্বের প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। কোভিড-১৯ অতিমারিতে বেশির ভাগ মানুষই কাশি বা জ্বর হলেই আতঙ্কিত হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। কিন্তু অন্য সময় সর্দিকাশি বা জ্বর হলে কেউই খুব একটা আমল দেন না। শ্বাসযন্ত্রের কর্কট রোগের মূল উপসর্গ কাশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগী যখন ডাক্তারের কাছে পৌঁছন তখন অসুখ প্রায় তৃতীয় স্টেজে পৌঁছে গেছে, বললেন তাপস মাজি। আর এই কারণেই ফুসফুসের ক্যানসার আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ১ বছরের মধ্যেই মারা যান।
আমাদের দেশের শহরাঞ্চলে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ২০২০-তে প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রোগ্রাম (এনসিআরপি) রিপোর্টে জানা গেছে, দিল্লি, কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের ৯টি প্রধান শহরে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা একেবারে ১ নম্বরে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড রিসার্চ (এনসিডিআইআর) ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের ৫৮টি ক্যানসার হাসপাতালের রোগীদের উপর দীর্ঘ ৫ বছর সমীক্ষা করে দেখেছে, আমাদের দেশের প্রতি ৪ জন মানুষের ১ জন ক্যানসারে আক্রান্ত। শহরাঞ্চলের পুরুষরা সব থেকে বেশি ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তাপস মাজি জানালেন যে, ফুসফুসের ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে নভেম্বর মাসে পৃথিবী জুড়ে লাং ক্যানসার অ্যাওয়ারনেস মান্থ পালন করা হয়। এবছরের থিম ‘আই ক্যান আই উইল’, ‘আমি পারি, পারবও’। অর্থাৎ ক্যানসার আটকাতে সক্রিয় হলে একে আটকে দেওয়া খুব কঠিন নয়। প্রত্যেক মানুষ যদি এই শপথ নেন, তা হলে শ্বাসযন্ত্রের কর্কট রোগকে নির্মূল করা সহজ হবে। এই প্রসঙ্গে তাপস জানালেন যে, অন্যান্য অসুখের মতো প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা গেলে চিকিৎসার সাহায্যে রোগের বিস্তার আটকে দেওয়া যায়। তাই উপসর্গের শুরুতেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে এই ক্ষেত্রে প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর— এই আপ্তবাক্য মেনে চলাই শ্রেয়। ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী তামাকের ধোঁয়া। সিগারেট বিড়ির নেশা থাকলে এই অসুখের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। এমনকি সেকেন্ড হ্যান্ড বা প্যাসিভ স্মোকিং থেকেও ফুসফুসের ক্যানসার হয়, বললেন তাপস।
আরও পড়ুন: আতঙ্ক নয়, জ্বর-সর্দিতে প্রয়োজন ডাক্তারের পরামর্শ
প্যাসিভ স্মোকিং এবং দূষিত পরিবেশ এবং লাগাতার ধোঁয়া ও অন্যান্য রাসায়ানিকের ধোঁয়ার প্রভাবে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে, বললেন রেডিয়েশন অঙ্কোলজিস্ট দেবর্ষি লাহিড়ী। আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, নিকেল, ইউরেনিয়াম-সহ কিছু পেট্রোলিয়ামজাত রাসায়ানিক ফুসফুসের ক্যানসার ডেকে আনতে পারে। জানা গেছে, যাঁদের শরীরে অঙ্কোজিন আছে অর্থাৎ এমন এক জিন আছে যেগুলি বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্যানসার যুক্ত টিউমার সেল তৈরি করতে সাহায্য করে বা মোদ্দা কথায়, যাঁদের বংশে ক্যানসার রয়েছে, তাঁরা যদি ধুমপায়ী হন তা হলে তাঁদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি খুব বেশি। অন্য দিকে, জীবনে একটিও সিগারেট টানেননি এমন মানুষের লাং ক্যানসারের আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং, ডিজেল সহ গাড়ির ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়াকে।
সাধারণত দুই ধরনের ফুসফুসের ক্যানসার দেখা যায়, স্মল সেল লাং ক্যানসার ও নন স্মল সেল লাং ক্যানসার। যাঁরা অতিরিক্ত ধুমপান করেন তাঁদের মধ্যে স্মল সেল ক্যানসার বেশি দেখা যায়, বললেন দেবর্ষি। অসুখটা কোন পর্যায়ে আছে, নির্ণয় করার পর ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল ঠিক করা হয়। ক্যানসার যুক্ত টিউমার একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকলে প্রয়োজন হলে সার্জারির সাহায্য নেওয়া হয়। ছড়িয়ে পড়লে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি করা হয়। ইদানীং টার্গেটেড থেরাপির সাহায্যে ফুসফুসের ক্যানসারের রোগীদের আয়ুষ্কাল বাড়ানোর পাশাপাশি কষ্ট অনেক কমানো গেছে, বললেন তাপস মাজি। অসুখ সন্দেহ হলে এক্সরে, স্পুটাম সাইটোলজি, বায়োপ্সি, সিটি স্ক্যান, পেট সিটি, বোন স্ক্যান, ব্রঙ্কোস্কোপি, এমআরআই-সহ নানান পরীক্ষা করতে হয়।
তাপস জানালেন, ফুসফুসের কর্কট রোগের প্রধান উপসর্গ কাশি। কোভিড আবহে কাশি হলে অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ফুসফুসের ক্যানসার হলে কাশির সঙ্গে বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই শব্দ, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে পড়া, কাশির সঙ্গে রক্ত, নাগাড়ে মাথার যন্ত্রণা, গলা ধরে যাওয়া, কোনও কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। ধুমপায়ীদের তো বটেই, যে কোনও কারওরই এই ধরনের উপসর্গ শুরু হলে মনের জোরে সিগারেট টানা বন্ধ করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যথযথ চিকিৎসা শুরু করতে হবে। ইদানীং টার্গেটেড থেরাপির সাহায্যে রোগীর কষ্ট লাঘব করে মৃত্যুহার কমানো গেছে বললেন তাপস। বলিউড তারকা সঞ্জয় দত্ত টার্গেটেড থেরাপির সাহায্য নিয়ে ভাল আছেন বলে শোনা যাচ্ছে। লাং ক্যানসার অ্যাওয়্যারনেস মাসে ধুমপান ছাড়ার শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাইরে বেরলেই মাস্ক পরা উচিত, এর ফলে বাতাসে ভাসমান দূষণের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। দূষণ প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে সবাইকে।
ছবি: শাটারস্টক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy