Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
foot

ডায়াবিটিস মারাত্মক থাবা বসায় পায়ে, এ ভাবে যত্ন না নিলে বাদ পর্যন্ত যেতে পারে

পায়ের কতটা ক্ষতি হতে পারে এই অসুখে? কী করণীয়?

ডায়াবিটিসে আক্রান্তরা অনেকেই জানেন না ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি সম্পর্কে। ছবি: শাটারস্টক।

ডায়াবিটিসে আক্রান্তরা অনেকেই জানেন না ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি সম্পর্কে। ছবি: শাটারস্টক।

মনীষা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:১৭
Share: Save:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য আগেই ছিল। এ বার তাতে সায় দিল ‘রিসার্চ সোসাইটি ফর দ্য স্টাডি অব ডায়াবিটিস ইন ইন্ডিয়া’। তারাও জানিয়েছে, ডায়াবিটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার নিরিখে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয়। ডায়াবিটিস নিয়ে যথেষ্ট সচেতনতা ও প্রচারের এখনও অভাব আছে বলে মনে করেন এসএসকেএম-এর এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের চিকিৎসকরাও।

ডায়াবিটিস ও সেই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় নিয়ে সচেতনতা অল্পবিস্তর থাকলেও ডায়াবিটিসের হাত ধরে যে সব সমস্যা শরীরে প্রবেশ করে, তা নিয়ে অনেকেরই তেমন সম্যক ধারণা নেই। তাই ডায়াবিটিসে আক্রান্তরা অনেকেই জানেন না ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বা ডায়াবেটিক ফুট সম্পর্কে।

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি কী?

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, ডায়াবিটিস থাকলে বিশেষ ভাবে পায়ের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। নিয়ম করে ত্বকের যত্ন নেওয়ার মতো করেই এটা করতে হবে। সঙ্গে দরকার নিয়মে থেকে রোগ নিয়ন্ত্রণ। না হলে ডায়াবিটিস থাবা বসাবে স্নায়ুতেও। স্নায়ু কমজোর হয়ে পায়ের সাড় কমে যেতে পারে, একেই বলে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি৷ ডায়াবিটিস হলে এমনিতেই যে কোনও ঘা শুকোতে দেরি হয়। তার উপর পায়ে সাড় কমে গেলে কাটা-ছড়া থেকে হওয়া ঘায়ের চিকিৎসায় অবহেলা করলে তা বাড়াবাড়ির আকার নিয়ে অস্ত্রোপচারের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

আরও পড়ুন: নিশ্চিন্তে পাতে রাখুন এই খাবার, দূরে থাকবে হৃদরোগ-ক্যানসারের মতো হাজারো অসুখ

নিজেই রোজ পায়ের পরীক্ষা করুন।

ডায়াবেটিক ফিটের উপসর্গ

ডায়াবিটিসের কারণে স্নায়ুর সমস্যা থেকে পায়ে দেখা দিতে পারে অসাড় বা ঝিমঝিম ভাব। অনেক সময় পা নাড়ানোর ক্ষমতাও কমতে থাকে। হাঁটতে গেলেও পায়ে ব্যথা হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে পায়ের হাড়ে ব্যথা হয় বা জায়গায় জায়গায় ফুলে গিয়েও ব্যথা শুরু হয়। আক্রান্ত পা বা পায়ের অস্থিসন্ধি হঠাৎ লাল হয়ে ফুলে যাওয়াও এই রোগের অন্যতম লক্ষণ। পায়ে কোনও ভাবে কেটে বা ছড়ে গেলে তা শুকোতে দেরি হওয়া, তাতে অল্প দিনেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেখলেও সচেতন হতে হবে। পায়ের আঙুলের খাঁজে খাঁজেও ঘা দেখা যেতে পারে।

পায়ের যত্ন

প্রতি দিন ত্বকের যত্নের মতো করে পায়ের যত্ন নিতে হবে। দিনে এক বার ভাল করে নিজেকেই পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে পায়ের কোথাও কোনও ঘা দেখা দিচ্ছে কি না। কাটা, ছড়া বা কোনও রকম প্রদাহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। পায়ে ঘা না থাকলে ঘুমনোর আগে হালকা গরম জল ও ত্বক বিশেষজ্ঞের থেকে পরামর্শ নিয়ে তাঁর বেছে দেওয়া শ্যাম্পু দিয়ে পা পরিষ্কার করে শুকনো করে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগান। তবে ঘা হলে কোনও রকম ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের আগে ডায়াবিটিস ও ত্বক, দুই বিশেষজ্ঞের সঙ্গেই আলোচনা করে নেবেন। পায়ের তলা ঘামার ধাত থাকলে আঙুলের খাঁজে ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন না।

কী করবেন, কী করবেন না

ডায়াবিটিসে আক্রান্ত মানুষ কখনও বাড়িতেও খালি পায়ে হাঁটবেন না৷ আরামদায়ক চটি পড়ুন। বাথরুমের চটি, ঘরের চটি সাধারণত আলাদাই থাকে। সেই নিয়ম মেনে চলুন। বাইরে বেরলে মোজা ছাড়া জুতো পরবেন না। সেলাই না করা মোজা পরলে বেশি ভাল, কারণ এতে সেলাইয়ের খাঁজে ময়লা জমে থাকার আশঙ্কা থাকে না। পায়ের নখ একটু বাড়লেই তা কেটে ফেলতে হবে। ত্বকে সহ্য হয় এমন নেলপালিশ ব্যবহার করুন। নখের কোণা চামড়ার মধ্যে ঢুকে গেলে নিজে কিছু না করে বা পার্লারে না গিয়ে বরং পোডিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিন৷ পেডিকিওর করার বিষয়েও খুব সাবধান থাকতে হবে ডায়াবেটিক রোগীকে।

আরও পড়ুন: মেদ ঝরাতে সময় দিন মোটে ১০ মিনিট! স্রেফ এই উপায়ে লাফালেই কমবে ওজন

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পায়ে ঘা হলে কী করণীয়

প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। একান্তই তা সম্ভব না হলে আক্রান্ত স্থান স্যালাইন জলে ধুয়ে স্টেরিলাইজড গজ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বা মলম লাগিয়ে জায়গাটা ঢেকে দিন। ঘা না শুকোনো অবধি মোজা পরবেন না। বাইরেও বেশি বেরনোর দরকার নেই। বেরলেও আরামদায়ক পা ঢাকা জুতো পরুন যাতে বাইরের ধুলো-বালি সরাসরি লাগতে না পারে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মতো অ্যান্টিবায়োটিক খান। কোনও কোনও সময় রোগীর প্রয়োজন বুঝে ডায়াবেটিক জুতো কেনার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। নজর রাখুন পা ফুলে যাচ্ছে কি না বা নখের চার পাশের রং বদলে যাচ্ছে কি না। বছরে এক বার পোডিয়াট্রিস্টের কাছে পায়ের চেক আপ করাতে যান৷

পেডিকিওরের বিপদ

পার্লারে কখন কেমন যন্ত্রপাতি দিয়ে পরিচর্যা করা হয় তা আপনার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। পার্লারের কর্মীরও ডায়াবেটিক আক্রান্ত পায়ের যত্ন নেওয়ার ঠিক নিয়ম জানা আছে কি না বা প্রয়োজনীয় ট্রেনিং আছে কি না তার ঠিক তথ্য জানা সম্ভব নয়। তাই সবচেয়ে ভাল হয় পেডিকিওর এড়িয়ে যেতে পারলে। পেডিকিওরের সময় গরম জলে পা ডোবানো বা ঝামা দিয়ে ঘষার সময় সচেতন না হলে কেটে–ছড়ে গিয়ে বিপদ ঘটতে পারে। কড়া বা মৃত চামড়া কাটার সময় কাঁচি ঠিকমতো জীবাণুমুক্ত কি না সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। পুরো নখ সমান ভাবে কাটুন। তা না করে সরু কাঁচি ঢুকিয়ে নখের কোনা কেটে রুপটান দিতে গেলে কিন্তু সংক্রমণ হতে পারে।

আরও পড়ুন: বুকে ব্যথা হলেই জিভের তলায় জীবনদায়ী ওষুধ! না জেনেই হার্টের ক্ষতি করছেন কিন্তু

জুতো বাছুন খুব সাবধানে।

ডায়াবেটিক জুতো

এর ভিতরের দিকের সোল সাধারণ জুতোর চেয়ে ৮–১০ মিলিমিটার বেশি মোটা হয়। তাই পায়ের তলার মাধ্যমে সারা শরীরের চাপটাই ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। এতে প্রেশার পয়েন্টে ঘায়ের সুযোগ কমে যায়। জুতো কেনার সময় পায়ের আঙুলগুলো জড়ো করে রাখতে হয় এমন পাঞ্জার জুতো কিনবেন না। এতে ঘাম জমে গা হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। জুতোর হিল কাউন্টার যেন শক্ত ও উঁচু হয়। এমন জুতো কিনুন যা পায়ে ড্রেসিং করেও পরতে অসুবিধা না হয়। পা ফুলে গেলে জুতো ঢিলে করা যায় এমন পদ্ধতির জুতো কিনতে পারলে ভাল।

অন্য বিষয়গুলি:

Diabetes Health Tips Foot Care Diabetic Foot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy