দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় প্রোবায়োটিক যোগ করতে বলছেন চিকিৎসক ও ডায়াটিশিয়ানরা। কিন্তু এই প্রোবায়োটিক আসলে কী? প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্টও অনেক সময়ে নেওয়ার দরকার পড়ে। তা কি আদৌ জরুরি? একে একে উত্তর খোঁজার পালা।
প্রোবায়োটিক কী?
আমাদের শরীরে দু’ধরনের ব্যাকটিরিয়া থাকে— ভাল ব্যাকটিরিয়া ও খারাপ ব্যাকটিরিয়া। এই ভাল ব্যাকটিরিয়াই হল প্রোবায়োটিক। ইনটেস্টাইনে এই দু’ধরনের ব্যাকটিরিয়ার সর্বক্ষণ যুদ্ধ চলে। খারাপ ব্যাকটিরিয়া জিতে গেলেই শরীর খারাপ আর উপকারী ব্যাকটিরিয়া জিততে থাকলে সুস্থ থাকা যায়। এই ভাল ব্যাকটিরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে প্রোবায়োটিক। গাট অর্থাৎ কোষ্ঠের স্বাস্থ্য রক্ষা করাও এর অন্যতম কাজ। সমগ্র শরীর কিন্তু এই পাচনতন্ত্রের উপরেই নির্ভরশীল। কারণ খাবার থেকে পুষ্টির জোগান সুনিশ্চিত করে ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট। তাই নিজেদের সুস্থ রাখতে রোজকার খাবারে প্রোবায়োটিক জরুরি।
প্রোবায়োটিক উপকারী কেন?
ডায়াটিশিয়ান প্রিয়া আগরওয়াল বললেন, ‘‘গাট ব্যাকটিরিয়ার সমতা বজায় রেখে প্রোবায়োটিক ইমিউনিটি বাড়ায়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। অনেক সময়ে ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকেরাও প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রাইব করে থাকেন। অন্ত্রে তা ভাল ব্যাকটিরিয়ার সমতা বজায় রেখে শরীর সুস্থ করে তোলে।’’
ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট সুস্থ থাকলে খাদ্য থেকে শক্তি সরবরাহও দ্রুত হয়। ফলে এনার্জি লেভেলও বেশি থাকে। শরীরে ক্যালশিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে প্রোবায়োটিক। ফলে ওরাল ক্যাভিটির মতো সমস্যাও দূরে থাকে। অনেকেরই হয়তো খিদে পায় না। কিন্তু প্রোবায়োটিকের জোগান ঠিক থাকলে অ্যাপেটাইট ঠিক থাকে। শরীর কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল... এই পাঁচটি স্তম্ভের উপরেই নির্ভরশীল। আর খাবার থেকে এই পুষ্টিগুণ শরীরে শোষণ করতে সাহায্য করে উপকারী ব্যাকটিরিয়া। আর তার ভারসাম্য বজায় রাখে প্রোবায়োটিক। ঘুরপথে হলেও সমগ্র শরীরকে সুস্থ ভাবে চালনা করতে এর অবদান অনস্বীকার্য।
প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক
প্রিবায়োটিক এক ধরনের ফাইবার। সাধারণত আনাজপাতিতেই পাওয়া যায়। শরীর সরাসরি প্রিবায়োটিক হজম করতে পারে না। বরং প্রোবায়োটিকের খাবার জোগায় এই প্রিবায়োটিক। কাঁচা শাক, আনাজে এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। বিশেষত কাঁচকলা, গাঁঠি কচু ও রসুনে প্রিবায়োটিক পাওয়া যায়। তবে তা কাঁচা অবস্থায় অনেক বেশি পরিমাণে মেলে। প্রিবায়োটিকের জোগান বজায় রাখতে রোজ সকালে উঠে খালি পেটে রসুনের কোয়া খেতে হবে। রান্নায় রসুন দিয়ে খেলে কিন্তু হবে না। আর প্রিবায়োটিকের জোগান বজায় রাখতে পারলে প্রোবায়োটিকের ভারসাম্যও বজায় থাকবে।
কোন খাবারে প্রোবায়োটিক পাবেন?
টক দই প্রোবায়োটিকের সবচেয়ে ভাল উৎস। রোজ খাবারে টক দই তো রাখাই যায়। বাটারমিল্কও খেতে পারেন। এতেও প্রোবায়োটিক থাকে ভাল পরিমাণে। টক দই দিয়ে লস্যি বা ঘোল বানিয়েও খাওয়া যায়। কিছু ধরনের চিজ়েও প্রোবায়োটিক থাকে। কেনার আগে তার সোর্স ভাল করে দেখে নিতে হবে। এ ছাড়া মিল্ক কেফির, কিমচির মতো ফারমেন্টেড ফুডও খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।
প্রোবায়োটিকের শত্রু
• দীর্ঘদিন অ্যান্টি-বায়োটিকের কোর্স করলে শরীরে প্রোবায়োটিকের সমতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ডায়রিয়া বা পেটের গোলমাল দেখা দিতে পারে। তখন কিছু দিনের জন্য সাপ্লিমেন্ট খেতে হতে পারে।
• যে সব আনাজপাতিতে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, সেই ধরনের শাক-আনাজ খেলেও প্রোবায়োটিকের ক্ষতি হয়।
• প্রিয়ার মতে, ‘‘হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারও অন্যতম শত্রু। স্যানিটাইজ়ারের অনেকটাই খাবারের মাধ্যমে ডাইজেস্টিভ সিস্টেম পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সেটাও কিন্তু প্রোবায়োটিক ধ্বংস করে।’’
• শেষ হলেও খুব দরকারি হল চিনি। মনে রাখতে হবে, খারাপ ব্যাকটিরিয়ার গ্রোথ নির্ভর করে মিষ্টির উপরে। তাই যত বেশি সাদা চিনি খাবেন, ততই খারাপ ব্যাকটিরিয়া পরিমাণে বাড়বে। স্বাভাবিক ভাবেই দুর্বল হতে থাকবে প্রোবায়োটিক।
প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে সতর্কতা জরুির
প্রোবায়োটিক যেহেতু লাইভ ব্যাকটিরিয়া, তাই সাপ্লিমেন্ট নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় স্টোর করতে হয়। সাপ্লিমেন্ট কেনার আগে তা অ্যাপ্রুভড কি না, যাচাই করে নিন।
ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পালচৌধুরী জানালেন, ‘‘সাপ্লিমেন্টের চেয়ে ন্যাচারাল সোর্সে ভরসা রাখাই ভাল। এগুলিকে মডিউলার ফরমুলা বলে। সাপ্লিমেন্টের বদলে ন্যাচারাল সোর্স থেকে গ্রহণ করলে শরীর নিজেই প্রোবায়োটিক উৎপাদন করে শরীরের হরমোনাল ফাংশান, মেটাবলিজ়ম ঠিক রাখে। সাপ্লিমেন্ট নর্মাল সাইকল বা মেটাবলিজ়মে অ্যাডপ্ট না-ও করতে পারে।’’
তাই সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জরুরি। ক’দিনের জন্য সাপ্লিমেন্টের কোর্স করবেন, তা-ও জেনে নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy