ভাইরালের হানায় জ্বরের প্রকোপ ঘরে ঘরে। ছবি: শাটারস্টক।
হেমন্ত যেন শীতের খবর আনা ডাকপিওন। এই সময় আবহাওয়ায় হিমেল ভাব আসে। তার হাত ধরেই সক্রিয় হয়ে ওঠে জীবাণুরা। আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়ে তাই জ্বরের হানায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকেই। আর এখন ডেঙ্গির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ‘অজানা’ জ্বর। দোসর হয়েছে স্ক্রাব ভাইরাস। শীতের মরসুমে এদের দাপটও বাড়ে।
কিন্তু শীতেই কেন বাড়াবাড়ি?
শীতে হাওয়া ভারী থাকার কারণে জীবাণুরাও হাওয়ার নীচের স্তরে নেমে আসতে পারে। তাই সহজেই নাগালের মধ্যে পেয়ে যায় মানবদেহ। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁরা সহজেই আক্রান্ত হন অসুখে। শিশু ও বয়স্করাই এ ক্ষেত্রে ‘সফ্ট টার্গেট’। বিভিন্ন ভাইরাস যেমন-অ্যাডিনো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনো ভাইরাসরাই এই জ্বরের জন্য দায়ী। যাঁরা ডায়াবেটিস, ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে ভোগেন তাঁরাও এর শিকার হন সহজে।
শিশুদের ক্ষেত্রে ভাইরাল জ্বরের সঙ্গে দেখা দিচ্ছে পেটের সমস্যা। হচ্ছে ভাইরাল ডায়রিয়া, যা সাধারণত রোটা ভাইরাস থেকে হয়। এই ভাইরাস মুখ দিয়ে ঢুকে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। সংক্রামিত হওয়ার পর ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রোগের লক্ষণ ধরা পড়তে শুরু করে। এর উৎস পানীয় জল ও খাবার।
আরও পড়ুন: জটিল হচ্ছে ডেঙ্গি-আতঙ্ক, যৌন সম্পর্কও এই রোগ ছড়ায় কি? কী করেই বা রুখবেন অসুখ?
ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা শুরু করলে ও নিয়ম মানলে এই জ্বর কমানো যায়।
এই জ্বরের বিশেষ কোনও লক্ষণ আছে কি?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, এই রোগের হানা এক এক জনের শরীরে এক এক রকম। কখনও হু হু করে বাড়ে জ্বর, এক ধাক্কায় ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর ওঠে। কখনও আবার ঘুষঘুষে জ্বর থেকেই যায় দীর্ঘ দিন ধরে। সঙ্গে পেটের অসুখ, শ্বাসকষ্ট, প্রবল কাশি সঙ্গে থাকতে পারে। প্যারাসিটামল খেয়েও জ্বর স্থায়ী ভাবে সারে না। ঘুরেফিরে আসে এবং তাপমাত্রা বেড়ে জ্ঞানও হারাতে পারে রোগী।
কেন ‘অজানা’ এই জ্বর?
সুবর্ণবাবুর মতে, “অকারণ ও অত্যধিক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারও এর অন্যতম কারণ। অ্যান্টিবায়োটিক নিতে নিতে শরীরে তৈরি হচ্ছে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ (এএমআর)। ফলে শুধু যে জ্বরের জীবাণুকে মারতে না পেরে তাকে ‘অজানা’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে তা-ই নয়, অন্যান্য অসুখের ক্ষেত্রেও চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছে। ভাইরাসগুলোও অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রস্তুত করে নিতে পারছে। ফলে কোনও ওষুধই প্রায় কাজ করে না। ভাইরাসের প্রকৃতি বদলে যাওয়ায় তাদের চিনতেও অসুবিধা হয়। তাই জীবাণু চেনা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে চিকিৎসাও কোন পথে এগোবে বোঝা যায় না।’’
পরিসংখ্যানের হিসেব ধরলে, আমাদের রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। তার পরেই এই ‘অজানা’ ভাইরাল ও টাইফয়েডের ভাগ বেশি। তবে রোগীর বাড়ির পরিজন ওয়াকিবহাল হলে ও রোগী নিজে একটু সতর্ক থাকলেই জ্বরের ধরন সহজে বুঝে চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায়।
আরও পড়ুন: করিনা কপূরের ছিপছিপে চেহারা তাঁর বুদ্ধিতেই, রুজুতা দিওয়েকর ফাঁস করলেন ওজন কমানোর কৌশল!
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
এই ধরনের ভাইরালে কী করণীয়?
সুবর্ণবাবুর মতে, এই ধরনের জ্বরে শরীরে জলের ভাগ কমতে থাকে। তাই প্রচুর জল খান, ডাল জাতীয় খাবার, ফলের রস, স্যুপ ইত্যাদি থাকুক মেনুতে। সহজপাচ্য খাবার খান, যাতে লিভারকে বেশি পরিশ্রম করতে না হয়। সচেতনতা যেমন প্রয়োজন, তেমনই সেরে উঠতে চাইলে মনের জোরও দরকার। ‘অজানা’ জ্বর বলে অকারণ আতঙ্কিত হবেন না। ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা শুরু করলে ও নিয়ম মানলে এই জ্বর কমানো যায়। শিশু ও বয়স্কদের দিকে বাড়তি নজর রাখুন। তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। দেখতে হবে যেন গায়ে গরম জামা-কাপড় থাকে। ধূমপান ছাড়তেই হবে। খুব প্রয়োজন না পড়লে গা গরম থাকলে বাইরে বেরবেন না। জ্বর হলে তা নিয়ে অফিস করতে যাবেন না। অনেকেই কাজের চাপে বাধ্য হয়ে প্যারাসিটামল খেয়ে অফিস যান। বাইরের আবহাওয়ায় এই সব জ্বর বাড়ে। তাই বাড়িতে বিশ্রাম নিন। জ্বর সারলেও ‘পোস্ট ভাইরাল এফেক্ট’-এর প্রভাবে ক্লান্ত থাকাটাই স্বাভাবিক। গায়ে জোর আনতে প্রচুর শাক-সব্জি, চিকেন স্টু রাখুন পাতে। অনেক ক্ষেত্রেই সর্দি-কাশি থেকে রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে সংক্রমণ ঘটছে। সেখান থেকেই ধেয়ে আসছে জ্বর। তাই ফ্রিজের জল, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিঙ্ক যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন এই সময়। অ্যালার্জি থেকেও সর্দি-কাশি বাড়ে। তাই যে সবে অ্যালার্জি আছে, সে সব থেকে দূরে থাকা জরুরি। প্রয়োজনে অ্যালার্জির হানা বুঝলে বাজারচলতি স্প্রে, ড্রপে ভরসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy