Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪
Mental Health

দ্বিতীয় বছরে পা দিল ‘প্রত্যয়’, মনোরোগ পেরিয়ে মূলস্রোতে ফেরানোর প্রতিজ্ঞায় হল উদ্‌যাপন

বছর দুয়েক আগে শুরু হয়েছিল পথচলা। সোমবার সেই ‘প্রত্যয়’-এর দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন হল। ঘরোয়া আয়োজনে পালিত হল জন্মদিন।

দ্বিতীয় জন্মদিনে ‘প্রত্যয়’-এর সাজ।

দ্বিতীয় জন্মদিনে ‘প্রত্যয়’-এর সাজ। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ১৯:৪৮
Share: Save:

পরিজনদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকতেন। কিন্তু মনের রোগ বদলে দিয়েছে অনেক কিছু। জীবনের বেশ খানিকটা সময় কেটেছে লুম্বিনী পার্ক কিংবা পাভলভ হাসপাতালে। সঠিক চিকিৎসায় মনের রোগের শিকল ছিন্ন হয়েছে। কিন্তু সেরে উঠেও বিভিন্ন কারণে নিজের বাড়ি ফেরা হয়নি। তাঁদের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টায় মগ্ন ‘প্রত্যয়’। সে বাড়ি, সেরে ওঠা মনোরোগীদের জন্য, সমাজ ও মানসিক হাসপাতালের মাঝের সেতু হিসাবে কাজ করে চলেছে বছর দুই ধরে। সেই ‘প্রত্যয়’-এর দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে হল উদ্‌যাপন। সোমবার ঘরোয়া আয়োজনে পালিত হল জন্মদিন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন রাজ্যের নারী সুরক্ষা এবং শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এ বাড়িতেই থাকতেন। তবে এখন ফিরেছেন নিজের বাড়ি। এমনই এক প্রাক্তন আবাসিকের গান দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বাড়ির মহিলা আবাসিকেরা নাচ-গানে উদ্‌যাপন করলেন। পাশাপাশি, বাড়ির আবাসিকদের হাতে তৈরি নানা জিনিসের প্রদর্শনীও ছিল। বিছানার চাদর থেকে হাতে তৈরি সাবান— প্রদর্শনী ঘুরে দেখলেন ‘প্রত্যয়’-এর কাছের মানুষ, স্বজনেরা। বুধবার পর্যন্ত চলবে এই উদ্‌যাপন।

জন্মদিন পালনের সিংহভাগ দায়িত্ব ছিল আবাসিকদের হাতে। তাঁদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। সেই উৎসাহ, উদ্যোগ অত্যন্ত ইতিবাচক ভাবে দেখছেন ‘অঞ্জলি’-র অধিকর্তা মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায়। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে অনুপ্রাণিত করেন তিনি। পুতুল বানানোর কর্মশালা থেকে চলচ্চিত্র উৎসব— আবাসিকদের নিয়ে সারা বছর নানা ধরনের কাজ চলে ‘প্রত্যয়’-এ।

আবাসিকদের হাতের কাজ দেখছেন মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং ‘প্রত্যয়’-এর স্বজনেরা।

আবাসিকদের হাতের কাজ দেখছেন মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং ‘প্রত্যয়’-এর স্বজনেরা। নিজস্ব চিত্র।

‘অঞ্জলি’ পাশে থাকে ‘প্রত্যয়’-এর। সুস্থ হয়ে ওঠে মনোরোগীদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। রত্নাবলী জানান, কলকাতা প্রত্যয় জীবন সহায়তা কেন্দ্র পরিচালনায় দায়িত্ব পাওয়ার পরে অঞ্জলির যেটা মূল কাজ, লুম্বিনী পার্ক আর পাভলভ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠা মনোরোগীদের সামাজিক পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করা। এখনও পর্যন্ত, প্রত্যয় থেকে মোট ছত্রিশজন আবাসিকের সামাজিক পুনর্বাসন সম্ভব হয়েছে। এঁদের মধ্যে আটজন উপার্জন করছেন এবং স্বনির্ভর স্বাধীন জীবনযাপন করছেন। বাকি আঠাশ জন পরিবারের কাছে ফিরেছেন। কিন্তু তাঁদের অনেকেই এখন পরিবারে থেকে বা পরিবারের থেকে দূরে শুধু নিজেদের জন্য রোজগার করছেন এমন নয়, পরিবারের দায়িত্বও নিয়েছেন। সব মিলিয়ে দু’বছরে ছত্রিশজন সংখ্যাটা খুব কম নয়।

রত্নাবলী বলেন, ‘‘এই সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারত। যে যে শর্ত পূরণ হলে সেটা সম্ভব হত, সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বেশির ভাগটাই নীতি সম্পর্কিত। যেমন ধরুন, যে সকল আবাসিকের প্রামাণ্য কোনও পরিচয়পত্র নেই, হয়তো ছিল কখনও, কিন্তু এখন নেই, বা পরিবার বিচ্ছিন্ন আবাসিকের সব কাগজ, তাঁর পরিবারের সঙ্গেই রয়ে গিয়েছে, বা কখনও হয়নি, এঁদের নাগরিক পরিচয়টাই প্রশ্নের মুখে। দেশের আইনকানুন ক্রমশ যেমন নজরদারি বাড়াচ্ছে, তাতে এই পরিচয়পত্রহীন মানুষগুলির জীবনে প্রতিবন্ধকতা বাড়ছে। এর সমাধান আমাদের হাতে নেই, কাদের কাছে আছে, সেটাও আমরা দু’বছর ধরে বিভিন্ন দফতরে ঘুরে ঘুরেও বুঝে উঠতে পারিনি। যদি পরিচয়পত্র না থাকলে সেই মানুষের জন্য কোনও উপার্জনের সুযোগ না থাকে, তা হলে তাঁকে কেন প্রত্যয়ে পাঠানো হচ্ছে, সেটাও আমাদের কাছে খুব পরিষ্কার নয়।’’

‘প্রত্যয়’-এর আবাসিকেরা।

‘প্রত্যয়’-এর আবাসিকেরা। নিজস্ব চিত্র।

চেষ্টার খামতি না থাকলেও, কিছু সমস্যা রয়েছে। সর্বত্র যেমন থাকে। এখানেও আছে। প্রত্যয়ে যে আবাসিকরা এসেছেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ মহিলারই হাসপাতাল পূর্ব জীবনে কোনও উপার্জনের অভিজ্ঞতা নেই। উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছেন, কিন্তু সেটা মূলত সংসার সামলাতে। এখন এই মধ্য বয়সে পেশাদার জীবনে অভ্যস্ত হতে তাঁদের সময় লাগছে। বিষয়টি স্পষ্ট করলেন রত্নাবলী। তিনি আরও বলেন, ‘‘এমন একটা সময়ে তাঁদের স্বনির্ভর জীবনে পুনর্বাসন দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যেখানে কোনও সনাতনী ধর্মপ্রচারক উচ্চকোটির পেশাদারদের সম্মেলনে এসে মহিলাদেরকে তাঁর দৃষ্টিসীমার বাইরে গিয়ে বসতে বলেন। এবং এই দাবিটা কারও অপ্রকৃতিস্থ মনে হয় না। তাঁর আবদার মিটিয়েই সম্মেলন চলতে থাকে। স্বাভাবিকতার ধারণাটা তো বুঝতেই পারছেন আপেক্ষিক। এ বার সমস্যা হচ্ছে যে, ক্ষমতার বিন্যাসে একটু উপর দিকে থাকতে পারলে, আবাসিক মহিলাদের পেশাদারি অনভিজ্ঞতাকে মেনে নিতে সমাজের ততটা অভিযোগ থাকত না। কিন্তু সেটা না হওয়ার ফলে, তাঁদের কাজের বন্দোবস্ত হতে সময় লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mental Mind
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE