পাকন পিঠে।
শীত আবার ফিরেছে। পাখা চালিয়ে পৌষপার্বণের পিঠে খেতে হবে না। এমন ভাবনায় সব বাঙালিরই মন ভাল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পিঠে যে শুধু বাঙালিদের একচেটিয়া, তা নয়। মহাভারতের সময়েও পূর্বভারতের নানা জায়গায় নলেন গুড়, নারকেল, ঘন দুধ আর চালের গুঁড়ো দিয়ে পিঠে বানানোর প্রমাণ আছে। ব্রহ্মপুরাণ অনুযায়ী, দক্ষযজ্ঞের সময় সতীর টুকরো টুকরো দেহ যে সব জায়গায় পড়েছিল সেই ৫১ পিঠই পিঠের উৎপত্তিস্থল। মহাভারতে প্রায় ১০৮ রকমের পিঠের উল্লেখ আছে। বাংলা ছাড়াও অসম, ওড়িশা, বিহার-সহ সমগ্র পূর্বভারতের মানুষই পিঠেপ্রেমী। পিঠে সাধারণত নিরামিষ হয়। তবে কালের নিয়মে বদলে গিয়েছে পিঠে বানানোর ধরন। কখনও সাহেবি কায়দার স্বাদ আনতে মেশানো হয়েছে ডিম, কখনও বা মিষ্টির বদলে হয়েছে নোনতা পিঠে। বাংলাদেশের সিগনেচার ডিশ পাকন পিঠের রেসিপি জানালেন বাংলাদেশের খুলনা জেলার মেয়ে শম্পা পাল।
পাকন পিঠে
এপার বাংলার পিঠে সাধারণত নিরামিষ হয়। যদিও সেকালের নিয়ম অনুযায়ী পিঠের মূল উপাদান চাল গুঁড়ো হওয়ায় পিঠেকে এঁটো বা ভাতের পর্যায়ে ফেলা হয়। তাই স্বামী হীনাদের সেকালে রাতের বেলায় ও একাদশীতে পিঠে খাওয়া মানা ছিল। তবে পাকন পিঠের ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। সাহেবদের মতই এই পিঠের উপকরণে আছে ডিম। ময়দা, চাল গুঁড়ো আর ডিমের মিশেলে ডুবো তেলে ভাজা পাকন পিঠে খেজুর গুড় আর চিনির রসে মজে এক অসাধারণ স্বাদ। খাঁটি বাংলাদেশি পাকন পিঠের রেসিপি দিলেন শম্পা পাল।
উপকরণ
ময়দা—২ কাপ
চালের আটা—২ কাপ
নারকেল কোরা—১/২ কাপ
জল—৪ কাপ
নুন—১/২ চা চামচ
ডিম—৪ টি
ঘি—১/২ কাপ
রসের জন্য:
জল—১০ কাপ
খেজুর গুড়—২০০ গ্রাম
চিনি—১ কাপ
বড় এলাচ—২টি
ডালচিনি—১ ইঞ্চি
ভাজবার জন্যে ঘি বা সাদা তেল
প্রণালী
জলে নারকেল কোরা ও নুন দিয়ে ফুটতে দিন। চাল গুঁড়ো ও ময়দা এক সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে ফোটানো জলে ভিজিয়ে রাখুন। এ বারে ডিম ফেটিয়ে ১/৪ কাপ ঘি ভাল করে মিশিয়ে নিন। এর মধ্যে এলাচ গুঁড়ো ও ডালচিনি গুঁড়ো দিন। এর মধ্যে ময়দা ও চালের আটা মিশিয়ে নিয়ে রুটি করার মতো মণ্ড বানিয়ে নিতে হবে। একটি আলাদা পাত্রে পাটালি চিনি ও জল মিশিয়ে ঘন সিরাপ বানিয়ে রাখুন। এবারে আটার মণ্ড থেকে লুচির মতো লেচি কেটে পুরু করে বেলে নিয়ে ছাঁচে ফেলে সুন্দর ডিজাইন করে রাখুন। ছাঁচ না থাকলে ফর্ক দিয়ে মনের মত নকশা করে নিন। এবারে ছাঁকা ঘি বা সাদা তেলে ভেজে নিন। অল্প আঁচে বেশি সময় ধরে ভাজতে হবে। ভাজা হলে রসে ডুবিয়ে থালায় তুলে রাখুন। রেডি মুচমুচে মিষ্টি পাকন পিঠে।
কড়াইশুঁটির পুলি
শীতে কড়াইশুঁটির কচুরি প্রায় সকলেরই মনপসন্দ। নোনতা স্বাদের পুলি পিঠের স্বাদ সম্পূর্ণ অন্য রকম। চাল আর আলুর মুচমুচে আবরণে মোড়া গরম মশলা আর আদার গন্ধে মাখা কড়াইশুঁটির পুর মুখে দিলে এক অনির্বচনীয় তৃপ্তি।
উপকরণ ( ১৫ টি কচুরির জন্যে)
ছাড়ানো কড়াইশুঁটি—২৫০ গ্রাম
কাঁচা লঙ্কা—২ টি
আদা—১ ইঞ্চি
গোটা জিরে—অল্প
লবঙ্গ, ডালচিনি ও ছোট এলাচ গুঁড়ো—১/৪ চামচ
নুন, চিনি—স্বাদ অনুযায়ী
মাঝারি আলু সেদ্ধ—৬ টি
চাল গুঁড়ো—আধ কাপ
ভাজবার জন্যে সর্ষে তেল
প্রণালী
কড়াইশুঁটি, কাঁচা লঙ্কা ও আদা এক সঙ্গে মিহি করে বেটে নিন। কড়াইয়ে সর্ষে তেলে জিরে ফোড়ন দিয়ে বাটা কড়াইশুঁটি দিন। ভাল করে নেড়ে চেড়ে নুন ও চিনি মেশান। শুকনো হয়ে এলে নামানোর আগে ভাজা গরম মশলা গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে নিন। পুর তৈরি।
এ বারে আলুসেদ্ধ ভাল করে নুন দিয়ে চটকে নিয়ে চালের গুঁড়ো মিশিয়ে মেখে মণ্ড তৈরি করুন। ছোট ছোট লেচি বানিয়ে রাখুন। লেচির মধ্যে অল্প করে পুর ভরে পুলির আকারে গড়ে রাখুন। বেশি পুর দিলে ভেঙে যেতে পারে। আন্দাজ মতো, অল্প পুর দেবেন। এ বারে আঁচ কমিয়ে সর্ষের তেলে দু’টি করে পুলি ভাজুন। এক সঙ্গে বেশি পুলি ভাজলে ভেঙে যাবার আশঙ্কা থাকে। গরমাগরম কড়াইশুঁটির পুলি পিঠে পরিবেশন করুন। এই পিঠের বৈশিষ্ট্য সর্ষে তেলে ভাজা। তবে ইচ্ছে হলে সাদা তেলেও ভাজতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy