অন্যান্য মশা বাহিত রোগের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ম্যালেরিয়াকে এ বছরে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন—ছবি:শাটারস্টক
এডস ডে, হার্ট ডে, হেপাটাইটিস ডে, টিবি ডে, ক্যানসার ডে… সব পেরিয়ে আজ মশা দিবস। না টাইপের ভুল নয়, সত্যিই আজ, ২০ অগস্ট বিশ্ব মশা দিবস (ওয়ার্ল্ড মসকিউটো ডে)। করোনা-বর্ষে বিশ্ব মশা দিবসের শপথ আগামী দিনের ম্যালেরিয়া মুক্ত বিশ্ব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর হিসেবে কোভিড ১৯-এর থেকেও মারাত্মক হল ম্যালেরিয়া। মেরু অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার মানুষ মারা যান।
আর আমাদের দেশ-সহ বিশ্বের প্রায় ২২ কোটি মানুষ প্রতি বছর ম্যালেরিয়ার জ্বরে ভোগেন। অবশ্য কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ এমনকি ভারত জুড়ে মশার কামড়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাও খুব কম নয়। অন্যান্য মশা বাহিত রোগের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ম্যালেরিয়াকে এ বছরে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। অবশ্য মশা দিবসের ধারণার শুরু এই ম্যালেরিয়া থেকেই।
পৃথিবীতে মানুষের বিবর্তনের আগে থেকেই ম্যালেরিয়ার জীবাণুরা বহাল তবিয়তে বেঁচে বর্তে আছে। প্রায় ৩ কোটি বছর আগে প্যালিওজেন যুগে মশার শরীরে প্লাসমোডিয়াম জীবাণুর হদিশ মিলেছে। আফ্রিকায় গোরিলা ও শিম্পাঞ্জিদের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ও প্লাসমোডিয়াম ভাইভাক্স জীবাণুর অস্তিত্ব প্রমাণিত। সে কালের মানুষ সিঙ্কোনা গাছের ছাল খেয়ে ম্যালেরিয়ার মোকাবিলা করতেন। এখন থেকে ১২৩ বছর আগে ১৮৯৭ সালের ২০ অগস্ট কলকাতার প্রেসিডেন্ট জেনারেল (পিজি) হাসপাতালে প্রবাদপ্রতিম বিজ্ঞানী স্যার রোনাল্ড রস প্রমাণ করেন, স্ত্রী মশার লালাবাহিত হয়ে ম্যালেরিয়া জ্বরের জীবাণুরা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। মারাত্মক ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী মশার কামড়।
এই যুগান্তকারী আবিষ্কারকে স্মরণ করে একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন ১৯৩০ সালে ২০ অগস্ট দিনটিকে ওয়ার্ল্ড মসকিউটো ডে অর্থাৎ বিশ্ব মশা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। পিঁপড়ে বা অন্যান্য পোকামাকড়দের সঙ্গে মশাদের প্রধান তফাত হল, এরা বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করে মানুষের মধ্যে ছড়ায়।ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, পীত জ্বর, ফাইলেরিয়া, বিভিন্ন ধরনের এনসেফেলাইটিসের মতো অসুখের জীবাণু ছড়িয়ে দেয় সুস্থ মানুষের শরীরে।
মেরু অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা যায়—ছবি:শাটারস্টক
আরও পড়ুন: অশ্বগন্ধা, আমলকি, কালমেঘ, গুলঞ্চ, কোন ভেষজ উপাদান কখন খাবেন, কেন
মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানালেন, কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন শহর মফঃস্বলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। ওড়িশার জঙ্গলে ফ্যালসিপেরাম জীবাণুবাহী অ্যানোফিলিস শুন্ডিকাস মশার প্রকোপ খুব বেশি। অন্যান্য বছরে জঙ্গলে বেড়াতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জীবাণু নিয়ে আসতেন। এ বারে কোভিড ১৯-এর কারণে বেড়ানো বন্ধ থাকায় সেই ফ্যালসিপেরাম জীবাণুর প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে চিকিৎসকদের আশা। অরিন্দমবাবুর মতে, এ বারে করোনার কারণে মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা আগের থেকে অনেকটা বেড়েছে। তাই ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হলেও আশা করা যায় অন্যান্য বছরের তুলনায় কমই থাকবে। অরিন্দমবাবু জানালেন, এ বারে এখনও পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার রোগী সে ভাবে পাওয়া যায়নি। তাঁর পরামর্শ, শুধু কর্পোরেশন বা সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকলে চলবে না। নিজ নিজ এলাকায় জল জমা প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকেই। তবেই বিশ্ব মশা দিবস পালন সার্থক হবে। আসলে মশাদের সঙ্গে সঙ্গে মশাবাহিত জীবাণুরাও নিজেদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে অনেকাংশেই সফল। বিভিন্ন চার্ট ও পোস্টারের প্রদর্শনী করে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলাই বিশ্ব মশা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। ম্যালেরিয়া সংক্রমণের কারণ আবিষ্কারের পর জানা গেল যে, শুধু ম্যালেরিয়াই নয় ফাইলেরিয়া (বাংলায় যাকে বলে গোদ হওয়া), নানান ধরনের মারাত্মক এনসেফেলাইটিস (মস্তিষ্কের ঝিল্লিতে সংক্রমণ), এক সময়ের ভয়ানক সমস্যা পীত জ্বর (ইয়োলো ফিভার), চিকুনগুনিয়া আর এখনকার কলকাতা তথা দেশের এক জ্বলন্ত সমস্যা ডেঙ্গির জন্যেও দায়ী বিভিন্ন প্রজাতির স্ত্রী মশা। আক্রান্তকে কামড়ানোর পর এক জন সুস্থ মানুষকে কামড়ালে তা শরীরে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়ার জীবাণু চলে গিয়ে তিনিও সংক্রমিত হয়ে পড়েন। তাই মশার বংশ বৃদ্ধি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে আমাদেরই। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ৭০ কোটি মানুষ মশার কামড়ে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, এনসেফেলাইটিস-সহ নানান অসুখে ভোগেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। এ ছাড়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থেকে কাজের দিন নষ্ট হয়, এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রতিটি মানুষ সচেতন হয়ে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে মশাবাহিত অসুখ বিসুখ হয়ত আগামী দিনে গুটি বসন্ত বা পোলিয়োর মতো পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: সত্যিই অ্যাসিডিটি হয়েছে কিনা জানেন? মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড খাচ্ছেন যে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy