Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

‘ত্রাতা’ কে জানুন সকলে, প্রচার চাইছেন বিশেষজ্ঞেরা

গবেষণার ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেওয়ার তিন দিনের মধ্যে এই প্লাজ়মা চিকিৎসা হলে রোগ থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৩৫ শতাংশ কমে যায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২০ ০৫:১২
Share: Save:

করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্লাজ়মা থেরাপির সাফল্য ইদানীং একাধিক ক্ষেত্রে সামনে আসছে। কিন্তু এই থেরাপি আদতে কী, কেন করোনার চিকিৎসায় এর প্রয়োজন— সাধারণ মানুষের বেশির ভাগই তা নিয়ে অন্ধকারে। সেই কারণেই এই থেরাপির ব্যবহার অনেকটা থমকে আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধের ক্ষেত্রে এই ‘ত্রাতা অ্যান্টিবডি’র গুরুত্ব ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি।

তথ্য বলছে, প্রায় ৭০ হাজার মানুষের উপরে করা গবেষণার ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা দেওয়ার তিন দিনের মধ্যে এই প্লাজ়মা চিকিৎসা হলে রোগ থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৩৫ শতাংশ কমে যায়। এই গবেষণার ফলাফলের উপরে নির্ভর করেই মার্কিন স্বীকৃতি এসেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থা ‘দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের রক্তরস বা কনভালেসেন্ট প্লাজ়মা থেরাপিকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব জুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে।

এই ‘ত্রাতা অ্যান্টিবডি’ কী?

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, কনভালেসেন্ট প্লাজ়মায় থাকা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের ‘রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেন’-এর বিরুদ্ধে মানুষের শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিই হল ‘ত্রাতা অ্যান্টিবডি’। এমনিতে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের অনেকগুলি প্রোটিনের বিরুদ্ধেই সংক্রমিতের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু দেখা গিয়েছে, কেবলমাত্র ‘রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেন’ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডিগুলিই সংক্রমিত হওয়ার পরে বড় ক্ষতির হাত থেকে সংশ্লিষ্ট রোগীকে রক্ষা করে। এই বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডিকেই বলা হয় ‘ত্রাতা অ্যান্টিবডি’।

সার্স-কোভ-২ শরীরে কী ভাবে প্রবেশ করে ও তার পরে কী ভাবে ক্ষতি করে, তা ব্যাখ্যা করে দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এর সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সায়ন্তন বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে গেলে তাকে শরীরেরই একটি গ্রাহক প্রোটিন বা রিসেপটরের গায়ে আটকাতে হয়। মানুষের শ্বাসনালীতে থাকা ‘অ্যাঞ্জিয়োটেনসিন কনভার্টিং এনজ়াইম-২’ (এসিই-২) নামে একটি প্রোটিন এই ভাইরাসের গ্রাহক বা রিসেপটর। এই

ভাইরাসের ত্বকের উপরে থাকা বর্শার ফলার মতো কতগুলি ধারালো প্রোটিন, যাকে স্পাইক প্রোটিন বলা হয়, তার বিশেষ অংশ এসিই-২ রিসেপটরের গায়ে আটকে যায় এবং শ্বাসনালীর কোষে ভাইরাসটির অনুপ্রবেশ ঘটায়। সংক্রমণের পরে দেখা গিয়েছে, শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির মধ্যে ‘রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেন’ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডিই সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে সব চেয়ে কার্যকর।

কিন্তু বয়স্ক বা কো-মর্বিডিটি রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই যথেষ্ট পরিমাণে এই ত্রাতা অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না। ফলে তাঁদের অবস্থাই সঙ্কটজনক (ক্রিটিক্যাল) হয় এবং অনেক সময়ে তাঁদের মৃত্যু পর্যন্ত হয়।

সায়ন্তনবাবুর কথায়, ‘‘যাঁরা কোভিড-১৯ সংক্রমণে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কোভিডের লক্ষণ দেখার তিন দিনের মধ্যে পরিপূর্ণ কনভালেসেন্ট প্লাজ়মা প্রয়োগ করলে মৃত্যু এবং বড় ক্ষতি এড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।’’ ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অর্পণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্লাজ়মা থেরাপির ক্ষেত্রে সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সংক্রমণের প্রাথমিক পর্বে এই থেরাপি কাজ করে। কিন্তু দেরি হয়ে গেলে এতে কোনও লাভ হওয়ার কথা নয়।’’

এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে যেটা চাই তা হল, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়া অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের রক্তরস এবং সেই রক্তরস সংগ্রহ করার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্র। এ ছাড়াও চাই সেই রক্তরসের পরীক্ষা করার জন্য উপযুক্ত গবেষণাগার। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সে দিকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Coronavirus in India Plasma Therapy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE