Advertisement
E-Paper

কোষ্ঠকাঠিন্য ও অর্শে ভুগছেন? রেহাই পেতে এই সব মানতেই হবে

আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি মানুষ অর্শের চিকিৎসা করান। চিকিৎসা করানোর সুযোগ পান না বা হাতুড়ের কাছে যান এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়।

অর্শের সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ছবি: শাটারস্টক

অর্শের সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ছবি: শাটারস্টক

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:৫৬
Share
Save

দিনের শুরুটা হওয়া উচিত খুশি মনেই। কিন্তু এ দেশে প্রায় এক কোটি বা তারও বেশি মানুষের কাছে সকাল কার্যত বিভীষিকা। কারণ প্রাতঃকৃত্য সারার ভয়। এঁদের বেশিরভাগই অর্শের সমস্যায় কষ্ট পাচ্ছেন। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় এক কোটি মানুষ অর্শের চিকিৎসা করান। চিকিৎসা করানোর সুযোগ পান না বা হাতুড়ের কাছে যান এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়। এ দেশে প্রায় প্রত্যেক পরিবারেই এক জন অর্শ নিয়ে কষ্ট পান। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন হয়, তারপর অনেকেরই আসে অর্শের সমস্যা, এমনই মত শল্য চিকিৎসক সন্দীপ চক্রবর্তীর।

শুধু কোষ্ঠকাঠিন্যই দায়ী নয়, ক্রনিক ডায়ারিয়াতেও অর্শের ঝুঁকি বাড়ে। বাড়তি ওজন এই অসুখের আর এক অন্যতম কারণ। সন্দীপ বাবুর মত, ‘’যাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ শৌচাগারে থেকে চেষ্টা করেন তাঁদের অর্শের আশঙ্কা বেশি। পরিবারের বড়রাও বাচ্চাদের অনেক সময় জোর করে প্রাতঃকৃত্যের অভ্যাস করান। এটা ঠিক নয়। শরীর তার নিয়মমতোই কাজ করবে, বেশিক্ষণ শৌচাগারে থেকে মলত্যাগের চেষ্টাই অর্শকে ডেকে আনে। কাজেই এক দিনও যদি বাচ্চা প্রাতঃকৃত্যে না যায়, জোর করবেন না তাঁকে।‘’

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যায় ফাইবারযুক্ত খাবার খেলেই। অন্যদিকে অর্শের সমস্যা হলে অনেকেই অস্ত্রোপচারের আতঙ্কে চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পান, কিন্তু এতে কোনও লাভ নেই। বরং ক্ষতি হবে। একেবারে শেষ পর্যায়ে গেলে তবেই অস্ত্রোপচার করা হয়। নইলে অর্শের সমস্যা সহজেই সেরে যেতে পারে নানা রকম সমাধানে, জানান সন্দীপ বাবু।

আরও পড়ুন: অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় বাড়ছে এই সব রোগের আশঙ্কা, কী করবেন, কী করবেন না

অর্শের ডাক্তারি নাম হেমারয়েড। পরিবারের কারও অর্শ থাকলে হেমারয়েডের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। যাঁরা বেশি ওজন তোলেন তাঁদেরও এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। আর হবু মায়েদের নানা শারীরিক বদলের সময় অর্শের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে একটু নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করলে রোগ বাড়তে পারে না।

গ্রেড-১ থেকে গ্রেড–৪, মোট চারটি পর্যায় রয়েছে অর্শের। শুরুতে সতর্ক হলে রোগ বাড়তে পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঙ্কোচবশত অসুখ গোপন করার প্রবণতা রয়েছে। ফলে তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত করা যায় যে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অর্শকে জব্দ করতে পারে সহজেই। রোগ বেড়ে তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে অস্ত্রোপচার করা ছাড়া কোনও উপায় নেই। ডিজিটাল রেকটাল এগজামিনেশন ও প্রক্টোস্কোপ দিয়ে অর্শ নির্ণয় করা হয়।

আরও পড়ুন: শৌচাগারে পড়ে গিয়েছিলেন প্রণববাবুও, বয়স বাড়লেই কি বাড়ে ঝুঁকি?​

লেসার সার্জারিতে নিরাময়

শল্য চিকিৎসার জনক সুশ্রুতের সময় থেকেই অর্শ সারানোর জন্য অস্ত্রোপচারের সাহায্য নেওয়া হত। বিকল্প পদ্ধতির সাহায্য নিতে গিয়ে অনেকেই জ্বালাযন্ত্রণা সমেত অসুখটা বাড়িয়ে ফেলেন। প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে ওষুধ আর জীবনযাত্রার বদলে রোগের বাড়বাড়ন্ত রোধ করা যায়। কিন্তু বেড়ে গেলে রাবার ব্যান্ড লাইগেশন ও ইঞ্জেকশনের সাহায্য নেওয়া হয়। এই পদ্ধতি সেই সুশ্রুতের আমল থেকে চলে আসছে। এর পর এল অর্শকে বাদ দেওয়ার শল্য চিকিৎসা। এতে অসুখ সারলেও মল ধরে রাখার সমস্যা হয়। সেরে উঠতে অনেক সময় লাগে। তবে সাম্প্রতিক কালে ডপলার গাইডেড হেমারয়েড আর্টারি লাইগেশন এর সাহায্যে অর্শের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায় সহজেই।

আরও পড়ুন:বিখ্যাত মানুষের আত্মহত্যার খবরে কি মানুষ আরও বিপন্ন বোধ করেন? কী বলছেন মনোবিদরা​

কী করবেন কী করবেন না

এই অসুখের মূলেই আছে ভুল খাদ্যাভ্যাস। অনেকেই শাকসব্জি প্রায় খান না বললেই চলে। অনেকেরই জল খেতে অনীহা।

ফাইবারযুক্ত শাক সব্জি রাখতেই হবে ডায়েটে। ছবি: শাটারস্টক

কী মেনে চলতে হবে

• দিনে ৩–৩.৫ লিটার জল পান জরুরি, এমনই জানান সন্দীপবাবু।

• রোজকার ডায়েটে রাখুন পাঁচ রকমের শাক সব্জি। আলু-পেঁয়াজ ছাড়া সময়ের সব রকমের সব্জি খেতে হবে। ঢ্যাঁড়শ কনস্টিপেশন কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তাঁরা নিয়ম করে দুবেলা ঢ্যাঁড়শ খেলে সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।

• পালং শাক, নটে শাক সমেত সময়ের শাক থাকুক মধ্যাহ্ন ভোজনে।

• কুমড়ো, লাউ, পটল-সহ সময়ের সব্জি খেতে হবে। খোসা সমেত সব্জি খাওয়া উচিত।

• শসা খান খোসা সমেত। কলা, পেয়ারা, লেবু, আম, জাম-সহ বেশির ভাগ ফলেই ফাইবার আছে। নিয়ম করে দিনে ৩-৪টি ফল খেলে ভাল হয়।

আরও পড়ুন: আক্রান্তের সিংহভাগই মহিলা, মাইগ্রেনের সমস্যা সমাধানে এগুলি মাথায় রাখতেই হবে​

• শৌচাগারে গিয়ে অনেক ক্ষণ বসে চাপ দেবেন না। এতে সমস্যা বাড়ে।

• নিয়মিত ব্যায়াম করে ওজন ঠিক রাখুন। বাড়তি ওজন অর্শের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।

• ভারী জিনিস তুলবেন না।

• ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে।

• মদ্যপানে সমস্যা বাড়ে।

• ভাজাভুজি খাওয়া যাবে না।

• কাবাবের মতো ঝলসানো মাংস খাবেন না।

আরও পড়ুন: করোনা আবহে অন্তঃসত্ত্বাদের এই সব বিষয়ে খেয়াল রাখতেই হবে​

• ময়দার খাবার খেলে সমস্যা বাড়ে। চাউমিন ময়দায় তৈরি হয়। মোমোও তাই। সুতরাং এই ধরনের খাবার বাদ দিতে হবে।

• কেক, বিস্কুট মাত্রা রেখে খান। পরিবর্তে খই, ওটস খেতে পারেন।

• কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তা সারাবার চেষ্টা করুন।

• অর্শের সমস্যায় শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অর্শ Piles Constipation কোষ্ঠকাঠিন্য

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}