শারীরচর্চা জরুরি।
অতিমারির ফলে গৃহবন্দি দশায় আমরা শিখেছি অনেক কিছুই। পড়াশোনা থেকে বাজার করা, ডাক্তার দেখানো... জীবন চলছে অনলাইনে! টিভির চেয়ে এখন জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া! এতে বাড়িতে বসে মস্তিষ্ক চালনায় বাধা না পড়লেও, কম বেশি প্রায় সকলেরই ক্ষতি হয়েছে শরীরে। যদিও শরীর ঠিক রাখতে অনেকেই বাড়িতে ওয়ার্কআউট, যোগাসন ইত্যাদি করছেন। কিন্তু বাড়িতে একা ব্যায়াম করার সময়ে হুট করে চোট লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোন ব্যায়াম আপনার শরীরের জন্য ঠিক তা ঠিকমতো না জেনে ব্যায়াম করলে বড়সড় আঘাত লাগতে পারে পেশি বা শিরায়। কোনও একটা পোজ়ে হাত বা পা মচকেও যেতে পারে।
‘‘ব্যায়াম করার সময় অ্যাঙ্গল ঠিক থাকা জরুরি। অ্যাঙ্গল উল্টোপাল্টা হয়ে গেলেই ব্যথা পেতে হবে। তাই শারীরচর্চা শুরু করুন একজন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে,’’ বললেন ফিটনেস এক্সপার্ট সৌমেন দাস। একই পরামর্শ, যোগাসন শিক্ষক তাপস মণ্ডলের, ‘‘যিনি ভিডিয়োয় আসন করে দেখাচ্ছেন তিনি পারছেন বলে সেটা আপনিও পারবেন, এমনটা না-ও হতে পারে। দু’জনের যে একই রকমের ফ্লেক্সিবিলিটি থাকবে তা নয়! আপনার শরীরের জন্য কোন আসন উপযুক্ত তা বলতে পারবেন যোগাসনের শিক্ষকই।’’
ছিপছিপে চেহারা হলেই বা ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলেই যে কোনও ধরনের আসন করতে সক্ষম হবেন এই ধারণা ভুল। অনেকেই নিজের সমস্যা অনুয়ায়ী ইউটিউব থেকে আসনের ভিডিয়ো বেছে নিয়ে নিজে নিজেই অভ্যেস করেন। কিন্তু সেটা কতটা উচিত? ‘‘নিয়মিত যোগাসন অভ্যেস করছেন এমন ব্যক্তিও সব আসন করতে পারেন না, শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটির তারতম্যের জন্য। এমন অনেকেই আছেন যিনি জীবনে পদ্মাসন, ভুজঙ্গাসন, বজ্রাসন করেননি, কিন্তু চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন পূর্ণচক্রাসনের! তিনি চেষ্টা করতে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হবেনই! যোগ এবং যোগাসন দু’টি কিন্তু আলাদা বিষয়। যোগ হল শাস্ত্র, একটা জীবনশৈলী। তার একটা অংশ যোগাসন। আবার যোগাসনের ট্রেনার ও শিক্ষকের মধ্যেও পার্থক্য আছে। যিনি শিক্ষক তিনি ট্রেনার হতে পারেন, কিন্তু সব ট্রেনার শিক্ষক নন। ট্রেনার আপনাকে সাহায্য করবেন ঠিকমতো আসনটি করতে, কিন্তু শিক্ষক আপনার শরীরের সমস্যা, ওজন, গঠন ইত্যাদি দেখে বলবেন আপনার পক্ষে কোন কোন আসন উপযুক্ত। তাই শুরু শিক্ষকের হাতেই হওয়া উচিত,’’ বললেন তাপস মণ্ডল। হাঁপানি, লোয়ার অ্যাবডোমেনের সমস্যা, বেশ কিছু পেটের সমস্যা নিয়মিত যোগাসনে নিরাময় হয়। যোগাসন করলে অবশ্যই শরীর ফ্লেক্সিবল হয়, কিন্তু অধিকাংশেরই অজানা অতিরিক্ত যোগাসন শরীরে পক্ষে ক্ষতিকর। বিশেষ করে যাঁরা প্রতিযোগিতার জন্য রাত-দিন এক করে আসন অভ্যেস করেন, পরবর্তীকালে আসন ছেড়ে দিলে তাঁদের সমস্যা হয়। ‘‘ধরুন কেউ দিনের পর দিন চক্রাসন করছেন, তার পেটের পেশির ইলাস্টিসিটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছেড়ে দিলে পেট বাড়তে থাকবে। আমাশয় ও নানাবিধ পেটের সমস্যা হবে,’’ বললেন তাপস। টানা একই যোগাসন নয়, তাই মাঝেমধ্যেই শিক্ষকের পরামর্শে আসন বদলে বদলে করতে হবে।
কোনও এক্সপার্টের পরামর্শ না নিয়েই, দ্রুত রোগা হওয়ার জন্য ইউটিউব দেখে নানারকম ব্যায়াম শুরু করে দেন অনেকেই! ডাক্তার রোজ হাঁটতে বলেছেন, প্রথমদিনই একঘণ্টা জোরে হেঁটে এতটাই কাবু হয়ে পড়েন যে পরের তিনদিন আর হাঁটতে পারলেন না। এই বিষয়ে সৌমেন দাসের পরামর্শ, ‘‘শারীরচর্চা বিজ্ঞান, কোনও ম্যাজিক নয়। আমার কাছে কেউ ওজন কমাতে এলে তাঁর শারীরিক সমস্যাগুলি খুঁটিয়ে দেখি। তাঁকে ডাক্তার যদি কোনও পরামর্শ দিয়ে থাকেন সেটাও জেনে নিই। রোগ বুঝে এক্সারসাইজ় দেওয়া হয়। সব ধরনের শারীরচর্চা সকলের জন্য নয়। এক্সারসাইজ় শুরু করার আগে ওর্য়ামআপ করানো হয়। তার পর হালকা এক্সারসাইজ়, এ ভাবে ১৫ দিন করার পরে শরীর কিছুটা ফ্লেক্সিবেল হলে তার পর তাঁর প্রয়োজন অনুসারে ওয়েট ট্রেনিং, কার্ডিয়ো, স্কোয়াট ইত্যাদি দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রেও প্রথমে অল্প করে, পরে ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে হয়। তাড়াহুড়ো করে ওজন কমাতে গেলে ক্ষতি হবেই।’’ তিনি জোর দিলেন এক্সারসাইজ়ের পাশাপাশি ডায়েটের উপরে। না ঘুমিয়ে, রাতভর পার্টি করে, প্রচুর খাওয়াদাওয়া করে সকালে ট্রেডমিলে দৌড়তে গিয়ে হার্টঅ্যাটাকের মতো বিপদের সম্ভাবনাও কিন্তু দেখা দিতে পারে। তাই সাবধান। নিজের শরীর সম্পর্কে ও জীবনযাপন নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।মনে রাখতে হবে
* যাঁরা নিয়মিত শারীরচর্চা করতে অভ্যস্ত নন বা সবেই এক্সারসাইজ় শুরু করেছেন, তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও ফিটনেস চ্যালেঞ্জ দেখে করতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আচমকা কোমরে বা পেশিতে চোটলাগতে পারে।
* ঘনঘন অফিস টুর থাকলে শারীরচর্চায় ছেদ পড়ে। বর্ষাকালেও সকালে হয়তো বেরোনোর সমস্যা থাকে। জিমে যাওয়া বা সকালে হাঁটার সময় থাকে নির্দিষ্ট। সে সময়ে বৃষ্টি হলে বেরোনো যায় না। এই পরিস্থিতির জন্য ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা সাধারণত ২০ মিনিটের এমন কিছু এক্সারসাইজ় দেখিয়ে দেন যা অভ্যেস করতে বেশি জায়গা বা যন্ত্রপাতি লাগে না, আঘাত লাগার ভয় থাকে না, শরীরও ঝরঝরে হয়ে যায়। যোগাসনের ক্ষেত্রেও সপ্তাহে দু’-তিনদিন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ব্যায়াম করে বাকি দিনগুলো বাড়িতে অভ্যেস করে নিতেই পারেন।
* একান্তই যদি অনলাইনে শারীরচর্চা করতে হয় তা হলে কোনও ফিটনেস বিশেষজ্ঞের অনলাইন ক্লাসে ভর্তি হন। তা হলে স্টেপ বাই স্টেপ এগোতে পারবেন। আবার কোনও সমস্যা হলেও সেই বিশেষজ্ঞকে জানাতে পারবেন। রোজ এক্সারসাইজ় শুরু করার আগে ওয়ার্মআপ করা জরুরি।
* শারীরচর্চা করতে গিয়ে আঘাত পেলে সুস্থ না হয়ে ওঠা অবধি কোনও ধরনের এক্সারসাইজ় না করাই ভাল। ‘‘ব্যথা পেলে সেই জায়গায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বরফের সেঁক ও ব্যথা কমানোর মলম দিতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যাতে ফোলা ভাবটা কমানো যায়। এক্সারসাইজ়ের ফলে শরীর থেকে ঘামের মধ্য দিয়ে অনেকটা জল বেরিয়ে যায়, তাই রোজ ব্যায়াম শুরু করার আগে জল বা ফলের রস খেয়ে নিলে মাসল ক্র্যাম্প ধরে না,’’ পরামর্শ দিলেন ফিজিয়োথেরাপিস্ট সুরজিৎ রায়।
* ওবেসিটি, ডায়াবিটিস, থাইরয়েড ইত্যাদি সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা পৃথিবী জুড়ে ক্রমবর্ধমান। তাই শারীরচর্চা জরুরি। কার্ডিয়ো, স্কোয়াট বা যোগাসন, পন্থা যা-ই হোক না কেন শারীরচর্চা শুরু করতে হবে কোনও একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে, এর কিন্তু কোনওবিকল্প নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy