Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
‘নিউ নর্ম্যাল’-এ কতটা ধাক্কা খাচ্ছে শিক্ষা?
Special Children

অস্থির হয়ে উঠছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা, বাড়ছে চিন্তা

বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে অনলাইনে থেরাপি, স্পেশ্যাল এডুকেশন বা ভোকেশনাল ট্রেনিং দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা যথেষ্ট নয়। 

ব্যাহত: লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রশিক্ষণ।

ব্যাহত: লকডাউনে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের প্রশিক্ষণ।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০ ০০:৩৪
Share: Save:

কেউ একাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে স্কুলে যাবে বলে। কারও অস্থির ভাব গত পনেরো দিনে এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, জোরে আওয়াজ শুনলে নিজেকেই খিমচে রক্ত বার করে ফেলছে। আমহার্স্ট স্ট্রিটের এক কিশোর আবার গত কয়েক দিন ধরে আগে যে সময়ে সে স্কুলে যেত, সেই সময়েই স্কুলের পোশাক পরার জন্য দেওয়ালে মাথা ঠুকছে!

অতিমারির এই পরিস্থিতিতে বিশেষ স্কুলগুলি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের অনেকের মধ্যেই এমন অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। শহরের বিশেষ শিক্ষকেরা (স্পেশ্যাল এডুকেটর) জানাচ্ছেন, টানা ঘরবন্দি থাকায় ব্যবহারিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের মধ্যে। তাঁদের দাবি, অটিজ়ম, ডাউন সিন্ড্রোম ও মেন্টাল রিটার্ডেশনের মতো বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যাদের, তারা নির্দিষ্ট নিয়মে চলতেই স্বচ্ছন্দ। যে কোনও বিষয় আগে থেকে জানা থাকলে তাদের কাজ করতে সুবিধা হয়। কিন্তু গত কয়েক মাসে হঠাৎই বদলে গিয়েছে সব। স্কুলের পাশাপাশি সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা পার্কে খেলাও এখন বন্ধ। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে অনলাইনে থেরাপি, স্পেশ্যাল এডুকেশন বা ভোকেশনাল ট্রেনিং দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা যথেষ্ট নয়।

ওই শিক্ষকেরা বলছেন, “অনলাইনে ওদের শিক্ষা পর্যাপ্ত হয় না। কাছে থেকে যোগাযোগ তৈরি করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল বন্ধ থাকার প্রভাব অন্যদের তুলনায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের উপরে অনেক বেশি পড়ছে।” ‘প্রদীপ সেন্টার ফর অটিজ়ম ম্যানেজমেন্ট’-এর প্রোগ্রাম হেড তথা রিহ্যাবিলিটেশন সাইকোলজিস্ট অমৃতা পণ্ডা বলেন, “বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সঙ্গে সমাজের দূরত্ব এমনিই বেশি। সেই দূরত্ব আরও বেড়েছে, কারও ওরা এখন সীমিত পরিসরে বন্দি।”

বাগুইআটির অটিস্টিক কিশোর তন্ময় সরকারের বাবা বললেন, “লকডাউনের প্রথম দু’মাস স্কুল কেন বন্ধ, তা কিছুতেই বোঝাতে পারিনি। পরে একটু শান্ত হলেও মাসখানেক ধরে খুব অস্থির হয়ে রয়েছে। এখন দিনে ওকে শান্ত রাখা যায় না। খিমচে শরীরের রক্ত বার করে ফেলছে।” বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর দেবায়ন দত্তের মা সুমিতা দত্ত জানান, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্কুলের পোশাক পরাটা অভ্যাস ছিল ছেলের। এখন স্কুলের পোশাক দেখলেই চিৎকার করছে সে। মহিলা বলেন, “স্কুল সম্পর্কিত কিছু দেখলেই ওকে ধরে রাখা যায় না। শিক্ষিকা অনলাইন ক্লাসে ওর সামনে আসতে পারেননি। দুটো ফোন ছুড়ে ভেঙেছে।”

আর এক অভিভাবকের কথায়, “বিশেষ চাহিদাসম্পন্নেরা একটা বৃত্তের মধ্যে ঘোরে। সেখান থেকে বার করে ওদের স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে পরিচয় করাতে হয়। এতে স্কুলের ভূমিকা অনেকটাই। এখন ওরা যেটুকু শিখেছিল, সবটাই ভুলে যাবে। এর মধ্যে মোবাইল-কম্পিউটারে ব্যস্ত থেকে ‘স্ক্রিন টাইম’ যাতে বেড়ে না যায়, সেটাও দেখা দরকার। এই ধরনের একমুখী যোগাযোগে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে ওরা আরও বেশি করে নিজের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে।”

বিশেষ শিক্ষক কাকলি করের পরামর্শ, “যে ভাবে হোক, ওদের ব্যস্ত রাখুন। আরও সময় দিন। বাড়ির সকলে বসে পরিবারের ছবি দেখিয়ে কে কোনটা জানতে চান। খুব অস্থির হচ্ছে যারা, তাদের বাড়ির কাছেই ঘুরিয়ে আনুন।” আর এক বিশেষ শিক্ষক বললেন, “বেরোতে না পেরে এমনিতেই ওদের মনখারাপ। কিছুতেই জোর করা চলবে না। খেলাচ্ছলেই ওদের নিজের কাজ নিজেকে করতে শেখাতে হবে।’’

‘অটিজ়ম সোসাইটি ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর প্রধান ইন্দ্রাণী বসু যদিও বললেন, “এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা পারিবারিক বা বৈবাহিক সমস্যার কারণে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানকে হয়তো এত দিন হোমে রেখেছিলেন। এখন হোম বন্ধ থাকায় সন্তান বাড়িতে ফিরেছে। দূরে ঠেলে না দিয়ে ওদের কাছে টেনে নেওয়া প্রয়োজন।” কিন্তু স্কুল বা হোম ছাড়া ওই বিশেষ পরিচর্যা তারা পাবে কি? প্রশ্ন থেকেই যায়।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy