গ্রীষ্মাবকাশ:
এই একটা শব্দে মনে হয় ঘুম ছুটেছে অভিভাবকদের। একরত্তিকে সামলাতে নাজেহাল তারা
অবকাশ কোথায় পাবেন? অবসরই নেই। এক ঘর পরিষ্কার করতে করতে, অন্য ঘরে অঘটন বাধিয়ে বসে থাকছে বাড়ির খুদে সদস্যটি। আসলে তাদেরও যে কিছু
কাজ চাই। মনের খোরাক চাই। মুঠোফোন আর টিভির পর্দার থেকে দূরে রাখতে নানা রকম হাতের
কাজে ওদের ব্যস্ত রাখতে পারেন।
৪ থেকে ৬
বছরের বাচ্চাদের জন্য
-
সিকুইন, গ্লিটার, স্টোন, বাটন: সাধারণ দোকানেই
এই জিনিসগুলো পেয়ে যাবেন। শক্ত পিচবোর্ডের বাক্স থেকে ফুল, গাছ, কচ্ছপ, মাছের আকারে কেটে
নিন। তার উপরে সেই মাপের সাদা কাগজ আঠা দিয়ে সেঁটে বড় বড় মোটিফ বানিয়ে
রাখুন। এ বার তার মধ্যে পেন দিয়ে ভাগ করে দিন। যেমন ধরুন মাছের মাথার অংশ, লেজ, ডানা সব আলাদা
ভাগ করে বাচ্চাকে বুঝিয়ে দিন কোথায় কোন রঙের সিকুইন লাগাবে। আঁশের জায়গায়
বাটন লাগাতে পারে। অনেকটা সময় কাটবে এই কাজে। ওরা আগ্রহও পাবে। এই ধরনের
ক্রাফ্ট সেট কিনে দিতেও পারেন।
-
রং করি আনন্দে: ছবির বই কিনে
সেগুলো রং দিয়ে ভরাট করতে দিন। আবার কাগজের কাপ, প্লেট, কোস্টার কিনে
সেগুলোও রং করতে দিন, ছবি
আঁকতে দিন। না হয়, দুটো
বাঁকা মানুষই আঁকল বা একটা ন্যাড়া গাছ। তা-ই করতে দিন। সময়ও কাটবে, ক্রমশ দেখে দেখে
আঁকতেও শিখবে।
-
মাটি বা ডো: বাড়িতে ভাল মাটি
বা গঙ্গামাটির আমদানি থাকলে তো কথাই নেই। নরম মাটির তাল আর জল দিয়ে বারান্দা
বা ছাদের এক পাশে বসিয়ে দিন। মাটির কড়াই, উনুন, হাতা, খুন্তি বানাবে। আবার বাজারচলতি ডো কিনে
দিতে পারেন।
-
প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ: বাড়ির বাগান বা
বারান্দা থেকে ওর ইচ্ছেমতো কিছু গাছের পাতা সংগ্রহ করতে দিন। সেগুলো কাগজে
আঠা দিয়ে সেঁটে কোনও মোটিফ বানানোর টাস্ক দিতে পারেন। আবার ছোট ছোট চারটে গাছ
এঁকে এক-একটা গাছ, এক-এক
ধরনের পাতা দিয়ে ভরাতে বলুন। তার পর সেই গাছের নাম লিখে দিন। এতে ও গাছ
চিনতেও শিখবে। বারান্দার এক কোণে পাখির জন্য জল আর খাবার রাখতে দিন। দুপুরে
পাখিরা এলে চুপটি করে তাদের নাওয়া-খাওয়া দেখেই সময় কেটে যাবে।
৬ থেকে ১০
বছর
-
ডুডলিং: এই বয়সের
বাচ্চাদের হাতের গ্রিপ মোটামুটি তৈরি হয়ে যায়। তাই মন্ডালা আর্ট, ডুডলিং করার বই
কিনে দিতে পারেন। সেগুলো ভরাট করেও সময় কাটবে। তার সঙ্গে নতুন একটা আর্টও
শেখা হবে। সঙ্গে একটা নোটবুকও দিন। সেখানে নিজে থেকে ডুডল বানাতে শিখবে।
-
জার্নালিং: নিজের পছন্দের
বিষয়ের খবর, ছবি
সংগ্রহ করতে বলুন কাগজ ও ম্যাগাজ়িন থেকে। তার সঙ্গে স্টিকার, সিকুইন দিয়ে
জার্নাল তৈরি করতে দিন। এতে বহির্জগতে কী ঘটছে, সংবাদ সংগ্রহের আগ্রহ তৈরি হবে। তার
সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হবে।
-
বুকমার্ক: হাতে করে মোটা
কাগজ নিয়ে মনের মতো ছবি এঁকে বুকমার্ক বানাতে পারে। স্কুল খুললেই বিভিন্ন
বিষয়ের বইয়ে সেগুলো কাজে লাগবে।
এ ছাড়া সায়েন্স অ্যান্ড ম্যাজিক, বিডস অ্যান্ড জুয়েলরির মতো ক্রাফ্ট বক্স
কিনে দিতে পারেন।
১১-এর
বেশি বয়স হলে
-
নাটক: শহরের বিভিন্ন
জায়গায় নাটকের ওয়ার্কশপ করানো হয়। খোঁজ নিয়ে তেমন কোনও ওয়ার্কশপে যোগ দেওয়া
যায়। আবার বন্ধুরা মিলে নাটকের একটা স্ক্রিপ্ট তৈরি করে বা বিখ্যাত লেখকের
লেখা থেকেও নাটক মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা করতে পারেন। মঞ্চ ভাড়া নিতে হবে, এমন নয়। আবাসনের
কমিউনিটি হলে বা কোনও বন্ধুর ছাদও সে ক্ষেত্রে মঞ্চ হিসেবে সাজিয়ে নেওয়া যায়।
-
পটারি: কোনও পটারি
ওয়ার্কশপে দিতে পারেন। হাতে করে নতুন জিনিস বানাতে শিখবে।
-
সরাচিত্র: মাটির সরার উপরে
আলপনা দিয়ে বা মনের মতো আঁকাও ফুটিয়ে তোলা যায়।
সামার
ক্যাম্প / ওয়ার্কশপ
শহর জুড়ে
অনেকেই এ সময়ে সামার ক্যাম্প, ওয়ার্কশপের আয়োজন করে থাকেন। অভিনেত্রী
সুদীপ্তা চক্রবর্তী যেমন বাচ্চাদের নিয়ে একটা ওয়ার্কশপ করলেন। সুদীপ্তার কথায়, “চার-পাঁচ দিনের একটা ছোট ওয়ার্কশপ করলাম,
৬-১০
বছরের বাচ্চাদের নিয়ে। মজার মাধ্যমে কিছু জরুরি কথা বলা, বাংলা ভাষায় পড়ার অভ্যেস তৈরি করার জন্য উৎসাহিত করাই মূল উদ্দেশ্য থাকে
আমাদের। বাংলায় পড়ার অভ্যেস
তো প্রায়
উঠেই যাচ্ছে। তাই বাংলা ছড়া, বাংলার সাহিত্যিকদের ছোট ছোট গল্প শোনানো
হয়। গান হয়। এর মাধ্যমে একটা পারফরম্যান্সের জন্য তৈরি করা হয়।” তা ছাড়া এখানে
এসে নতুন বন্ধুও তৈরি হয়। বাচ্চারা যেমন আনন্দ করে, যখন ওয়ার্কশপ শেষে ফিরে যায়,
কিছু শিখে
যায়।
আর এই
ক’দিন স্ক্রিনটাইমের প্রায় সুযোগই পায় না। সেটা আর একটা বড় দিক।
অন্য দিকে
ন্যাশনাল মাইম ইনস্টিটিউট যেমন শিশুনাট্য কর্মশালার আয়োজন করেছে। উদ্যোক্তা
মধুরিমা গোস্বামী বললেন, “এই কর্মশালায় আমরা মাইম, নাটক, নাচ,
গান, পাপেট, ক্লে আর্ট ইত্যাদি শেখাই। আর শেষ দিন
একটা পারফরম্যান্স করা হয়। সবটা তো পুরো শেখানো যায় না। তবে একটা ধারণা তৈরি করে
কী ভাবে তা করবে, সেটা শেখানো যায়। বাচ্চারাও খুব মজা
পায়।”
গরমের
ছুটির দুপুরগুলো এমন সৃজনশীলে কাজে কাটলে শিশুমনেও নতুন কিছু শেখার আগ্রহ তৈরি
হবে।
মডেল: আরুষ দে, মায়রা মিশ্র; মেকআপ: প্রিয়া গুপ্ত; ছবি: অমিত দাস; লোকেশন: চৌধুরী ভিলা, কেয়াতলা লেন; ফুড পার্টনার: চাওম্যান
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)