Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সন্তানের মন বুঝে পাঠ শুরু হোক

নাচ, গান, আঁকা, আবৃত্তি... সন্তানকে নতুন কিছু শেখানোর আগে তার ইচ্ছেটা জানাও জরুরি। কী করে বুঝবেন, আপনার সন্তান কী শিখতে চায়? রইল তার মনের হদিশ পাওয়ার সহজ উপায়

বুঝুন শিশুর আগ্রহ।

বুঝুন শিশুর আগ্রহ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৩৬
Share: Save:

প্রথাগত পড়াশোনার বাইরে সন্তানকে নতুন কিছু শেখানোর আগ্রহ সব মা-বাবারই থাকে। কিন্তু সেই নতুন বিষয় শেখাতে গিয়ে শিশুটির উপরে যেন নতুন করে চাপ সৃষ্টি না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি যেন উপভোগ্য হয় শিশুটির কাছে। তারই পাশাপাশি, সে যেন কিছু শিখতেও পারে। কোনও কিছু শেখার চাপে শেখার আনন্দটা যেন নষ্ট না হয়!

বুঝতে হবে সন্তান কী শিখতে চায়

হয়তো আপনি চান, আপনার সন্তান গান শিখুক বা ব্যাডমিন্টন খেলুক। সেই অনুযায়ী আপনিও তেমনই কোনও ক্লাসের খোঁজ করে তাকে ভর্তি করে দিলেন। কিন্তু যে শিশুটিকে গান শেখাতে চাইছেন, তার আগ্রহ সাঁতারে হতেই পারে। তাই সন্তানের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিন। সে যদি কোনও বিষয় উপভোগ করে, তবেই সেই বিষয়ের নির্যাস সে গ্রহণ করতে পারবে, নতুবা নয়।

কী ভাবে বুঝবেন সন্তানের আগ্রহ

প্রত্যেকটি শিশুই সব সময়ে কোনও না কোনও কাজ করেই চলে। কোনওটি আবার করে খেলার ছলে। সন্তান কী নিয়ে খেলছে, কী করতে পছন্দ করছে... সে দিকে নজর রাখুন। তার সারা দিনের অ্যাক্টিভিটির মধ্য থেকেই আপনি খুঁজে পাবেন তার আগ্রহের বিষয় কোনগুলি।

পরীক্ষা এবং প্রথম হওয়ার চাপ নয়

পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বললেন, ‘‘নাচ, গান বা কোনও ইনস্ট্রুমেন্ট শেখার বিষয়... যা-ই হোক না কেন, কোনও ইনস্টিটিউশনেই হয়তো মা-বাবা ভর্তি করে দেন। এ বার সেখানে গিয়ে অনেকের ভিড়ে সে হারিয়ে যায়। তার উপরে সেখান থেকেও জোটে কিছু হোমওয়র্ক এবং পরীক্ষার রুটিন। ফলে ভালবাসার বিষয় থেকে সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মনে রাখতে হবে, তাকে এমন জায়গাতেই ভর্তি করবেন, যেখানে তাকে যত্ন নিয়ে শেখানো হবে।’’ অনেক নামী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেও কিন্তু আশানুরূপ ফল না-ও পেতে পারেন। তার কারণও সেই একই। তবে এর সমাধান মানেই বাড়িতে একা শেখানো নয়। তা হলে সে সকলের মধ্যে পিছিয়ে পড়তে পারে। টিমওয়র্কও শিখবে না। তাই এমন কোনও জায়গা খুঁজে বার করতে হবে, যেখানে আপনার সন্তান কিছু সঙ্গীও পাবে, আবার শিখতেও পারবে আনন্দ করে।

খেয়াল রাখা জরুরি

প্রথাগত শিক্ষার বাইরে কিছু শিখতে গিয়ে তা যেন সন্তানের উপরে মানসিক চাপ সৃষ্টি না করে। যাঁর কাছে শিখবে, তাঁকেও বুঝতে হবে শিশুটির মন। মা-বাবাকে কথা বলতে হবে শিক্ষকের সঙ্গে। বাগান করা, সেলাই করা, উল বোনা, পেপার কুইলং, অরিগ্যামি ইত্যাদির মাধ্যমে বাড়িতেই শুরু করতে পারেন শেখানো। এতে ওদের নতুন জিনিস শেখার বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হবে।

সন্তানের মতই প্রথম শর্ত

বাড়িতে হয়তো আপনার চার বছরের মেয়ে সারা দিনই নেচে নেচে ঘুরে বেড়ায়। সেই দেখে আপনি ওকে টেনে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিলেন ভরতনাট্যম শেখানোর স্কুলে। দেখা গেল, কিছু দিন পর থেকে সে আর নাচতেই চাইছে না। আর সেই স্কুলে যেতেও চাইছে না। সে ক্ষেত্রে কিন্তু তাকে জোর করা ভুল হবে। বরং সে না চাইলে ক’দিন নাচের স্কুল বন্ধ রেখে দেখতে পারেন। যদি তার পরেও সে নাচ শিখতে যেতে না চায়, তাকে জোর করা ঠিক হবে না। বরং তাকে জিজ্ঞেস করুন, সে তা হলে

কী শিখতে চায়? হয়তো আপনার সন্তান মুখ ফুটেই বলে দেবে তার পছন্দের শখটির কথা।

বয়স মাথায় রাখা জরুরি

সব কিছু শেখারই একটা বয়স আছে। অনেকেই হয়তো মনে করেন যে, খুব ছোট বয়স থেকে কিছু শুরু করলে তা শেখাও সহজ হবে। কিন্তু সেটাই সর্বৈব সত্যি নয়। যেমন খুব ছোট বয়সে স্ট্রিং ইনস্ট্রুমেন্ট শেখানো ঠিক নয়। কারণ অনেক সময়ে নরম হাত-আঙুল কেটে যায় স্ট্রিংয়ে। সে ক্ষেত্রে কিবোর্ড, পিয়ানোর মতো ইনস্ট্রুমেন্ট বাজানো শেখাতে পারেন। আবার অনেকেই মনে করেন যে, খুব ছোট বয়স থেকে গান শেখার জন্যও চাপ দেওয়া ঠিক নয়। এতে ভোকাল কর্ডে চাপ পড়ে।

সন্তানকে প্রস্তুত হতে সময় দিন

দু’-তিন বছর বয়স থেকেই বাচ্চারা বিভিন্ন জিনিস নিয়ে খেলতে শুরু করে। এ সময় থেকেই তার হাতে এমন কিছু খেলনা তুলে দিতে হবে, যা তার ক্রিয়েটিভ স্কিল তৈরি করতে সহায়ক হবে। পায়েল ঘোষ বললেন, ‘‘ছোট বাচ্চাদের কিছু ক্রিয়েটিভ স্কিল শেখানো জরুরি। আমাদের সকলেরই কিছু স্কিল থাকে— ফাইন মোটর স্কিল আর গ্রস মোটর স্কিল। সাধারণত হাতে ধরে বা আঙুলের সাহায্যে যা করা হয়ে থাকে, তা-ই পড়ে ফাইন মোটর স্কিলের আওতায়। জামার বোতাম আটকানো, খাওয়া, পাতা উল্টানো, কাঁচি দিয়ে কিছু কাটা, পিয়ানো বাজানো... ইত্যাদি ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে এই স্কিল পলিশ

করা যায়। অন্য দিকে আছে গ্রস মোটর স্কিল। সাধারণত হাত-পায়ের পেশির কাজই এই স্কিলের আওতায় পড়ে। ফলে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, সাঁতার পড়ে গ্রস মোটর স্কিলের মধ্যে।’’ প্রথমে ফাইন মোটর স্কিল ডেভলপ করতে হবে। তার পরে একটু বড় হলে শুরু করতে হবে গ্রস মোটর স্কিলের কাজ। ছোট বাচ্চা নিজে থেকে যতটা দৌড়াদৌড়ি করে খেলে, ততটাই উৎসাহ দেবেন ওকে। জোর করে তার চেয়ে বেশি কিছু করাতে যাবেন না। মনে রাখা দরকার, ওদের হাড়ের গঠন কিন্তু তখনও নরম। ফলে সাবধান থাকুন।

শেখার ইচ্ছেটাই আসল। একটু বড় বয়সে শুরু করলেও কিন্তু অনেক কিছুই শেখা যায়। জোর করে সন্তানকে কিছু শেখানোর চেষ্টা করবেন না। বরং ওকেই ঠিক করতে দিন, ও কী শিখতে চায়।

মডেল: তৃণা বৈদ্য, ঐশিকী বসু

ছবি: অয়ন নন্দী

পেন্টিং সৌজন্য: হিমশিখা পালিত

অন্য বিষয়গুলি:

Child Care Child Parenting Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE