Advertisement
E-Paper

জিমে যাওয়া মানে আগুন নিয়ে খেলা

বিশেষজ্ঞরা জিম খুলে দেওয়াকে সমর্থন করছেন না। তাঁদের মতে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জিম করতে না পারলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে মারাত্মক ভাবে।

বিশেষজ্ঞরা জিম খুলে দেওয়াকে সমর্থন করছেন না। প্রতীকী ছবি।

বিশেষজ্ঞরা জিম খুলে দেওয়াকে সমর্থন করছেন না। প্রতীকী ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০ ১৯:৫৮
Share
Save

নভেল করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে আমাদের দিনযাপন। গৃহবন্দি থাকায় শরীর ও মন ক্রমশ স্থবির হয়ে পড়ছিল। এরই মধ্যে আশার খবর আনলক ৩-এ খুলে দেওয়া হচ্ছে জিমের দরজা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন। বাড়িতে নিঃসঙ্গ ভাবে আসন করার থেকে ট্রেনারের তত্ত্বাবধানে জিম করতে অনেকেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জিম খুলে দেওয়াকে সমর্থন করছেন না। তাঁদের মতে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জিম করতে না পারলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে মারাত্মক ভাবে। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত জানালেন, এখন জিমে যাওয়া আত্মহত্যার সামিল।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন হু হু করে বাড়ছে। ‘‘দেশ জুড়ে প্রত্যেক দিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। জিম খোলা হলে আরও সংক্রমণ বেড়ে যাবে। এই সময় রোগের প্রকোপ কমাতে মানুষে মানুষে দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। জিমে এই ব্যাপারটা মেনে চলা একেবারেই অসম্ভব,’’— বললেন দেবকিশোর। জিমে এক্সারসাইজ অভ্যাস করেন এক সঙ্গে অনেকে। এক একটি ইন্সট্রুমেন্ট একাধিক জন ব্যবহার করেন। সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। কোভিড ১৯ সংক্রমণের সব কটি রিস্ক ফ্যাক্টর জিমে আছে। এখনকার বেশির ভাগ জিম শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ বদ্ধ ঘরে একাধিক মানুষ একসঙ্গে এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় কাটাবেন। অর্থাৎ কোনও এক জন মানুষ যদি উপসর্গহীন কোভিড পজিটিভ হন, তাঁর থেকে প্রত্যেকেই সংক্রমিত হয়ে পড়বেন। এই পরিস্থিতিতে জিম খুলে দেওয়া আগুন নিয়ে খেলার সামিল বলে দেবকিশোর মনে করেন।

সুস্থ থাকতে নিয়মিত শরীর চর্চা করেন অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী। তাঁর মতে, বাজার-দোকান-বাস-সহ সবই যখন খোলা, তখন জিম খুলতে বাধা কিসের। বাসে বা বাজারে ঠাসাঠাসি ভিড়ে যদি অসুবিধে না হয় তো জিমকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কোনও মানে হয় না। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হলে আখেরে ভালই হয়। টোটা নিজে অবশ্য নিয়মিত জিমের বদলে যোগাসন ও অন্যান্য এক্সারসাইজ করেন। একই সঙ্গে তাঁর নিজস্ব কিছু ইক্যুইপমেন্টের সাহায্যে শরীর চর্চা করেন। তাঁর মতে যথাযথ নিয়ম মেনে জিমে গিয়ে শরীর চর্চা করলে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। একসঙ্গে ভিড় করে জিমে না গিয়ে ধাপে ধাপে অল্প কয়েকজন করে জিমে গেলে অসুবিধে হওর কথা নয়। এছাড়া জিম কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় স্যানিটাইজেশনের ব্যাপারে গুরুত্ব দেবেন।

কোনও উপসর্গহীন রোগী যদি জিমে আসেন, জিম ইনসট্রাক্টর থেকে অন্য প্রতিটি
সদস্যদের মধ্যে কোভিড ১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে যাবার ঝুঁকি থেকেই যায়।

আরও পড়ুন: রোগ প্রতিরোধে পাতে থাকুক টক দই, তবে খাওয়ার আগে মাথায় রাখুন এ সব

আরও পড়ুন: জ্বর না হয়েও করোনা আক্রান্ত অনেকেই, এ সব বিষয়ে সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকরা

ফিজিক্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ মৌলীমাধব ঘটক কলকাতার একমাত্র চিকিৎসক যিনি জিম চালান। তিনি জানালেন, কলকাতায় কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরুতেই তিনি বেলেঘাটার নিজস্ব জিমটি বন্ধ করে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে জিম থেকে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তাই এই মুহূর্তে মৌলীমাধবের জিম খোলার কোনও পরিকল্পনাই নেই। তাঁর মতে, মাস্ক পরে জিমে এক্সারসাইজ অভ্যাস করা যায় না। মাস্ক ছাড়াই এক্সারসাইজ করতে হয়। এর মধ্যে কোনও উপসর্গহীন রোগী যদি জিমে আসেন, জিম ইনসট্রাক্টর থেকে অন্য প্রতিটি সদস্যদের মধ্যে কোভিড ১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে যাবার ঝুঁকি থেকেই যায়। এই পরিস্থিতিতে জিম খুলে দেওয়া কোনও মতেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে মৌলীমাধবের মত।

লেক প্লেসের মেটল জিমের স্বত্বাধিকারী ও ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৈকত দাস বললেন, ‘‘আমরা মূলত বেঙ্গল রোয়িং ক্লাব ও মোহনবাগান ক্লাবের মতো কিছু ক্লাবের খেলোয়াড়দের ফিজিক্যাল ট্রেনিং করাই। জিম বন্ধ থাকায় শরীরচর্চা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছিল। বিশেষ করে খেলোয়াড়দের এন্ডিওরেন্স ট্রেনিং না থাকলে পেশীর কর্মক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে জিম খুলে দেওয়ায় সুবিধেই হল।’’ কিন্তু কোভিড ১৯ প্রতিরোধে সৈকতের জিমে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। যে হেতু বদ্ধ ঘরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে, তাই তাঁরা জানলা-দরজা খুলে জিম ব্যবহার করার পক্ষপাতি। এ ছাড়া জিম সম্পূর্ণ ভাবে স্যানিটাইজ করার পর তবেই ব্যবহার করা হবে। জিমের আয়তন অনুযায়ী লোকজন জিম অভ্যাস করলে অসুবিধে হওয়ার কথা নয় বলে সৈকতের মত। তাঁর কথায়, ‘‘২ হাজার স্কোয়ার ফিট জিমে ১০ জন মানুষ যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে অভ্যাস করতে পারেন। কিন্তু জিমের আয়তন কম হলে সেখানে ৩– ৪ জনের বেশি অ্যালাও না করাই উচিত।’’ এ ছাড়া আরও কয়েকটা ব্যাপারে সৈকত নিয়ম মেনে চলতে চান। যেমন, নিজস্ব ম্যাট সঙ্গে করে নিয়ে আসার প্রস্তাব রাখছেন তিনি। কার্ডিও এক্সারসাইজ তুলনামূলক ভাবে কিছুটা কম করার অনুরোধ করছেন। শুয়ে অভ্যাসের পরিবর্তে দাঁড়িয়ে কিছু এক্সারসাইজ করার কথা ভেবেছেন। সৈকত মনে করেন, এই নিয়ম মেনে জিম করলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবে না।

অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরা অত্যন্ত স্বাস্থ্য সচেতন। একটি নামী জিমে নিয়মিত অভ্যাস করতেন। লকডাউনের সময় নিজের বাড়িতেই একটা ছোটখাটো সেটআপ বানিয়ে নিয়েছেন। জিম খোলার খবর শুনে কিছুটা দ্বিধান্বিত। যদিও তিনি ইতিমধ্যে ইন্সটাক্টরের সঙ্গে কথা বলে জানতে চেয়েছেন, তাঁরা ঠিক কী কী ব্যবস্থা নিয়ে জিম চালু করবেন। একই সঙ্গে অঙ্কুশ জানালেন, জিম খুললেও মাস দেড়েক তিনি না যাওয়ারই চেষ্টা করবেন। এই অতিমারির পরিস্থিতিতে জিমে গিয়ে বিপদে পড়তে চান না। কেন না বিভিন্ন জায়গা থেকে নানান মানুষ জিমে অভ্যাস করতে যান। এক একটা মেশিনে তিনটে সেটে এক্সারসাইজ অভ্যাস করতে হয়। এক জন একসঙ্গে তিন সেট অভ্যাস করেন না, পর্যায়ক্রমে তিন জন অভ্যাস করেন। তাই সংক্রমণের ঝুঁকি খুব বাড়ে। তা ছাড়া অল্প বয়সের অনেক তরুণ-তরুণী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন, আবার ৮০ বছরেও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। আবার জিমে মাস্ক পরে এক্সারসাইজ করা যাবে না, তাই পুরো ব্যাপারটা ওঁর কাছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। এই মুহূর্তে জিমে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনাই অঙ্কুশের নেই।

মেডিসিনের চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘জিম থেকে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি যথেষ্ট বেশি। কিন্তু সরকার থেকে যখন খুলে দিচ্ছে, তখন যাঁর ইচ্ছা হবে তিনি যাবেন। সঠিক ব্যবস্থা নিয়ে জিমে গিয়ে এক্সারসাইজ করবেন। মানুষ নিজে সচেতন না হলে আমরা কী ভাবে আটকাতে পারি।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।)

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯

Coronavirus Gym Healthy Living Tips COVID-19 Health

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।