Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Holi 2024

‘যদি বলো রঙিন, ৫৩ বছরের কাঞ্চনকেই শুধু আমি জানি’! বিয়ের পর প্রথম দোলে কলম ধরলেন শ্রীময়ী

কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গে বিয়ের পর প্রথম দোল শ্রীময়ী চট্টরাজের। প্রেমের রং, স্বামী কাঞ্চন ও তাঁদের ঝলমলে জীবন নিয়ে লিখলেন শ্রীময়ী। মনের কথা উজাড় করে দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনের পাতায়।

On the first Holi after Marriage Sreemoyee Chattoraj writes about the colours of her relationship with Kanchan Mullick

কাঞ্চন আর শ্রীময়ীর রঙিন দাম্পত্যের ঝলক। ছবি: সংগৃহীত।

শ্রীময়ী চট্টরাজ মল্লিক
শ্রীময়ী চট্টরাজ মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৪ ১০:০৪
Share: Save:

জীবনের আঠাশটি বসন্ত পেরিয়ে এসে এ বছরের দোল আমার জীবনের অন্যতম রঙিন দিন। প্রথম বার আমার মনের মানুষ, আমার স্বামী অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক আবির ছোঁয়াবে শ্রীময়ী চট্টরাজের গালে। থুড়ি, শ্রীময়ী চট্টরাজ মল্লিকের গালে। এর আগে জীবনে রং ছিল না, তা নয়, কিন্তু এমন রঙিন মুহূর্ত আসেনি।

লাল আমার সবচেয়ে পছন্দের রং। বিয়ের পর সেই রঙের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়েছে। স্নান করে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন সিঁথিতে সিঁদুর পরি, আমি নিজেকেই চিনতে পারি না। আর কাঞ্চন তো আমার সিঁদুর পরা মুখ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। বলে, ‘তোর মুখটা একেবারে বদলে গিয়েছে।’ এত সুন্দর নাকি এর আগে কখনও আমাকে লাগেনি। আমি অবশ্য জবাব দিই না। শুধু মনে মনে বলি, এ রঙে তো তুমিই আমাকে রাঙিয়েছ। ভালবাসা পূর্ণতা পেলে চারদিকটা এমন রঙিন হয়ে ওঠে, সেটা আগে বুঝিনি। এখন তো আমার প্রতি দিনই দোল। রোজই বসন্ত উৎসব।

এর আগে বেশ কয়েক বছর বন্ধুদের আয়োজন করা দোলের পার্টিতে কাঞ্চন আর আমি একসঙ্গে গিয়েছি। কিন্তু একান্তে কখনও উদ্‌যাপন করা হয়নি। সমালোচনার একটা ভয় তো ছিলই। আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনও চর্চা হোক, সেটা চাইনি। তা ছা়ড়া, কিছু আনন্দ জমিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম ভবিষ্যতের জন্য। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কাঞ্চনকে আমি নিজের করে পেয়েছি। এ বার সেই ঝুলি থেকে রঙিন আনন্দগুলি একে একে বেরোনোর পালা। স্বামী-স্ত্রী হিসাবে আমার আর কাঞ্চনের এটা প্রথম দোল। মনে মনে বেশ উত্তেজনা হচ্ছে।

প্রেমের মতো রঙিন, এ দুনিয়ায় আর কিছু হয় কি না, আমার জানা নেই। যে প্রেম করে সে জানে, ভালবাসার কী মহিমা। আর আমাদের সম্পর্ক তো নানা অর্থেই রং পেয়েছে। কিছুটা অন্তরের। কিছুটা আবার বাইরে থেকেই জুড়েছে। তবে আমাদের এই রঙিন দাম্পত্যের নেপথ্যে লড়াই কম নেই। সমালোচনা আমরা কানে নিই না। তা ছাড়া, আমাদের দু’জনের ভালবাসার রঙে বিতর্ক, কটু মন্তব্য, নিন্দা সব ফিকে হয়ে যায়। আমাদের বিয়ে নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছে এবং এখনও হয়ে চলছে। আমার তো মনে হয় বিতর্ক কখনও আমাদের পিছু ছাড়বে না। তবে আমরা দারুণ আছি। আগে প্রেম করতে যেতে পারতাম না। এখন দু’জনে হাত ধরে বেরিয়ে পড়লেও অসুবিধা নেই। জমানো কথা সব উজাড় করে বলতে পারছি। ভালবাসার মানুষের সঙ্গে জীবন কাটানোর সুযোগ পেয়েছি, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কীই বা হতে পারে!

কাঞ্চন আমার চেয়ে বয়সে অনেকটাই বড়। তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ কম হয়নি। আগে মনে হত, একটা বয়সের পর জীবনটা ফিকে হতে থাকে। কিন্তু কাঞ্চন আমার সেই ধারণা একেবারে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এক জন প্রাপ্তবয়স্ক, পরিণত পুরুষের জীবনদর্শনটাই তো আলাদা। আমার তো মনে হয়, কাঞ্চনের ৫০-এর পর থেকেই জীবন নতুন করে রঙিন হতে শুরু করেছে। কাঞ্চনের মতো রঙিন মানুষ আমি সত্যিই দেখিনি। আমি সৌভাগ্যবতী, যে এমন এক জনকে আমার জীবনে পেয়েছি। শুধু রঙিন নয়, ওর মতো ভাল মানুষও খুব কম আছে। কাঞ্চনের সততা, ধৈর্যশীলতা আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে।

আমার আবার ধৈর্য বলতে কিছু নেই। এই যে এতটা পথ হেঁটে এসে আমরা ঘর বেঁধেছি, তা শুধুমাত্র কাঞ্চনের ধৈর্য ছিল বলেই। আমাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কাঞ্চন কম লড়াই করেনি। পিঙ্কিদি অভিযোগ করার পর থেকে আমাকে প্রতি দিন কাউন্সেলিং করাত কাঞ্চন। চিৎকার-চেঁচামেচি করতাম। মারাত্মক অবসাদে চলে গিয়েছিলাম। কাঞ্চন আমাকে সব সময়ে বোঝাত। ভেঙে পড়তে বারণ করত। আমার বন্ধুরা আমার সঙ্গে রাস্তায় বেরোতে চাইত না। আমার সঙ্গে পোস্ট করা ছবি পর্যন্ত ফেসবুক থেকে মুছে দিয়েছিল। আমার বাড়ির লোকজন পর্যন্ত বলেছিল, এ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে। কাঞ্চন কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও আমার হাত ছাড়েনি। আমিও আমার ১২ বছরের বন্ধুত্ব অস্বীকার করে চলে যেতে পারিনি। কা়ঞ্চন আমাকে বলেছিল, ‘এ সম্পর্কটা যখন তোকে বদনাম দিয়েছে, আমিই তোকে স্বীকৃতি দেব।’ ক’জন মানুষ এমন বলতে পারে? এ-ও কিন্তু মানুষটির আর এক রকম রং। ওঁর চরিত্রের এই রং শুধু আমিই জানি। ঝড়-ঝঞ্ঝা বয়ে যাক, তিনি শান্ত। ফলে সে রং কোমল।

কোমল রং ধরে রাখা কিন্তু সহজ নয়। এর আগে দু’বার তো কাঞ্চন সম্পর্ক থেকে আঘাত পেয়েছে। সে আঘাত চরিত্রের রং বদলে দেয় অনেক ক্ষেত্রে। তবে কাঞ্চন আলাদা। এত কিছুর পরেও প্রেমের কোমল রং ধরে রেখেছে নিজের মধ্যে। প্রথম বার কী হয়েছে, আমি জানি না। তখন আমি ছিলাম না। কিন্তু দ্বিতীয় বার আমি কাছ থেকে দেখেছি। ঝড় বয়ে গিয়েছে কাঞ্চনের উপর দিয়ে। আমি শুধু এটুকুই বলব, কাঞ্চনের সত্যি কোনও দোষ ছিল না এ ক্ষেত্রে। কাঞ্চন সম্পর্ক বাঁচানোর চেষ্টা করে। তবে সম্পর্ক না থাকলেও স্মৃতি তো থেকে যায়। সব কিছু মন থেকে সরিয়ে ফেলে কাঞ্চন তো আবার নতুন করে শুরু করেছে। তাই আমার চেয়েও ওর লড়াই অনেক বেশি কঠিন। মনের মধ্যে সাহস, সে রংও পুষে রাখে কাঞ্চন। তার থেকে জোর পায় আমাদের সম্পর্ক।

আমি ওর কাছে সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমাদের সম্পর্ককে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কাঞ্চন অনেক বড় ঝুঁকি নিয়েছে। এখনকার ছেলেরা তো সম্পর্ক গড়ে ওঠার আগেই ভেঙে দেয়। ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’-এ বিশ্বাস করেন অনেকেই। সেখানে কাঞ্চন একটা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে, আমার হাত ধরেছে। বিয়ের আগে আমি কিন্তু কাঞ্চনকে বহু বার বলেছিলাম যে, তুমি ভাল করে ভেবে নাও। এর আগে দু’বার এমন ঘটনা ঘটেছে। তৃতীয় বার কোনও আঘাত সইতে না তুমি পারবে, না আমি বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারব।

তার পরেও কাঞ্চনের তরফ থেকেই বিয়ের প্রস্তাব এসেছে আমার কাছে। তার মানে, আমি ওকে সেই ভরসা দিতে পেরেছি। আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রতিটি মুহূর্ত তাই আমার কাছে ছিল নানা রঙে ভরা। কাঞ্চনও বলেছে যে, তৃতীয় বিয়ের মতো আনন্দ আগের দু’বারে হয়নি। দ্বিতীয় বিয়ে যে ওর জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল, তা বহু বার বলেছে আমাকে। কাঁদত, কাজ করতে পারত না। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমারও খানিকটা সংশয় ছিল। আশঙ্কা হত, আমার ক্ষেত্রেও এমন হবে কি না ভেবে। তবে কাঞ্চন আমাকে বিশ্বাস আর ভরসা দুই-ই জুগিয়েছিল। তাই যদি বলো রঙিন, ৫৩ বছরের কাঞ্চনকেই শুধু আমি জানি।

অন্য বিষয়গুলি:

Holi 2024 Sreemoyee Chattoraj Kanchan Mullick
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy