Advertisement
E-Paper

পুষ্টিগুণে ভরপুর মাখনা

এই অর্থবর্ষের বাজেটে মাখনা উৎপাদনে বিশেষ উৎসাহ দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ডায়েটে কেন রাখবেন মাখনা, জেনে নিন

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:২৬
Share
Save

পাড়ার দোকান থেকে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সাদা ফুলকো পাফের মতো মাখনা এখন প্রায় সর্বত্রই চোখে পড়ে। চিজ়, রোস্টেড, ক্যারামেলাইজ়ড নানা ফ্লেভারের মাখনাও বাজারে সহজলভ্য। এক সময়ে আয়ুর্বেদ এবং চিনা ওষুধে মাখনা বা ফক্স নাট ব্যবহার হত। পদ্মফুলের মধ্যে থাকা বীজ শুকিয়ে আগুনে সেঁকে নেওয়ার পরে তার বাইরের কালো খোসা ভেঙে যে সাদা পাফের মতো অংশটি বেরিয়ে আসে, তা-ই হল মাখনা।

মাখনা এত গুরুত্ব পাচ্ছে কেন?

বিহার, উত্তরপ্রদেশে এই সুপারফুডের চাষ বেশি হয়। পুষ্টিবিদ ড. অনন্যা ভৌমিক বলছেন, “অসুস্থতার কারণে কিংবা স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ায় যাঁদের খাদ্যতালিকা থেকে চিপস, চানাচুর, ফুচকার মতো মুখরোচক খাবার বাদ পড়েছে, তাঁদের ডায়েটে অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে মাখনা।” উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টসের গুণে ভরপুর এই খাদ্যশস্য মূলত গ্লুটেনফ্রি। তা ছাড়া, এতে থাকে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস। তাই স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তি খাদ্যতালিকায় রাখতেই পারেন মাখনা। ভারতের উদ্যোগেই গত বছরটাকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ‘আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এই অর্থবর্ষে ভারত সরকার মাখনা উৎপাদনে বিশেষ উৎসাহ দেখাচ্ছে। তার পিছনে কারণ হয়তো সাধারণ মানুষের মধ্যে এটির ক্রমবর্ধমান চাহিদা। এ বছর বাজেটেও মাখনা চাষিদের উন্নয়নের জন্য বিশেষ বোর্ড গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।

কেন খাবেন মাখনা?

প্রথমত, পুষ্টিগুণে ভরপুর, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক মাখনা। এতে ক্যালরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে। ফলে যাঁরা বাড়তি ওজন নিয়ে সচেতন, তাঁরা নিশ্চিন্তে রোজের খাবার তালিকায় মাখনা জুড়তে পারেন। এতে টুকটাক খাওয়ার ইচ্ছে মেটে এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় মাখনা দ্রুত হজম হয়, পেটের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি কমায়। মাখনার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ইত্যাদিও নিয়ন্ত্রণে রাখে, হার্ট ভাল রাখে। শরীরের মেটাবলিজ়ম বাড়িয়ে কিডনি ডিটক্সিফিকেশনেও সাহায্য করে। পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরী বলছেন, “আয়রন ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় নিয়মিত মাখনা খেলে শরীরে রক্ত বাড়ে, ত্বকের জৌলুস বাড়ে। স্ট্রেস, অন্যান্য মানসিক সমস্যাও কম হয়। অনিদ্রা থেকেও রেহাই মেলে। শারীরিক উদ্যম ও অনাক্রম্যতা, দুই-ই বাড়ে।” তা ছাড়া, মাখনাতে থাকা ক্যালশিয়াম হাড় মজবুত করে। মাখনা ক্ষত নিরাময়েও সহায়ক। ফলে সন্তান প্রসবের পরে মহিলাদের মাখনা খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেক পুষ্টিবিদ। তবে কোনও কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া ভাল না। রোজকার খাদ্যতালিকায় কতটা মাখনা রাখা যেতে পারে, সে বিষয়ে পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নেওয়াই ভাল।

কী ভাবে খাবেন?

স্বাস্থ্যসচেতন বাঙালির রান্নাঘরে ক্রমশ জায়গা করে নিচ্ছে মাখনা। অল্প ঘি, মাখন, সাদা তেল কিংবা শুকনো খোলায় রোস্ট করা মাখনা বাচ্চা থেকে বয়স্ক, যে কেউ খেতে পারে। সঙ্গে গোলমরিচ, রোজ়মেরি, অরিগ্যানো, নানা ধরনের হার্ব ইত্যাদিও ব্যবহার করতে পারেন। ক্যালরির চিন্তা না থাকলে তাতে গুড়, চিজ়, চকলেট বা ক্যারামেল সসও মেশাতে পারেন। মাখনা দেওয়া ডাল এবং তরকারিও সুস্বাদু হয় খেতে। সুপের উপরে কুড়কুড়ে মাখনা দেয় এখন অনেক রেস্তরাঁয়। স্মুদিতেও মাখনা ব্যবহার করেন অনেকে। মাখনা গুঁড়ো করে দুধে ফুটিয়ে তাতে এলাচ, তেজপাতা, কাজু, কিশমিশ দিয়ে ক্ষীর বানাতে পারেন।

বিকেলের স্ন্যাক্স হিসেবে কিংবা বাচ্চাদের স্কুলের টিফিনে এটি দিতে পারেন। তবে বাজারে প্যাকেটজাত যে সব ফ্লেভারড মাখনা পাওয়া যায়, তাতে থাকা প্রিজ়ারভেটিভস এর আসল খাদ্যগুণ নষ্ট করে। শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই বাড়িতে বানানো মাখনা খাওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Fox Nuts

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}