Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
New Corona Strain

কোভিডের নতুন স্ট্রেন ধরা পড়ার মতো কিট কি এ দেশে আছে?

যদি এই নতুন করোনা স্ট্রেন আগের চেয়েও দ্রুত গতিতে ছড়ায়, যদি তা কোনও মতে ভারতে ঢুকে পড়ে তা হলে কী হবে? ভারতের কাছে কি যথেষ্ট কিট বা পরীক্ষা করার সামগ্রী আছে এই নতুন ভাইরাসকে চিনে ফেলার জন্য?

করোনার নয়া স্ট্রেনের পরীক্ষা কি পুরনো পদ্ধতিতেই!—প্রতীকী ছবি।

করোনার নয়া স্ট্রেনের পরীক্ষা কি পুরনো পদ্ধতিতেই!—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:৪৯
Share: Save:

ভয় বাড়ছে। শক্তি বাড়িয়ে এক রকম ‘বাহুবলী’ হয়ে উঠছে করোনা ভাইরাসের নতুন অবতার ‘নিউ করোনা ভাইরাস স্ট্রেন’। আগের থেকে ৭০ শতাংশ বেশি ক্ষমতা তার এখন। দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে। সুযোগ পেলেই বাসা বাধছে শরীরে। তবে এই নতুন ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে কতটা ক্ষতি করছে, কত দ্রুত ঠেলে দিচ্ছে মৃত্যুর মুখে, এ সব প্রশ্নের জবাব এখনও পাওয়া যায়নি। এই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভাইরাস আন্ডার ইনভেস্টিগেশন’ ভিইউআই-২০২০১২/০১।

নতুন অবতারে নিজেকে কতটা বদলাচ্ছে এই ভাইরাস? কত দ্রুতগতিতে হচ্ছে ভাইরাসের জিনের ভাঙাগড়া? কত তাড়াতাড়ি নিজেকে তৈরি করে ফেলছে প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করার জন্য, তা নিয়ে এখনও চুলচেরা অনুসন্ধান চলছে। সব প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কাটিয়ে করেনার ‘মহা ভাইরাস’ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাকেও পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞেরা। এ সব তথ্য যত সাধারণ মানুষের কানে পৌঁছচ্ছে, ততই বাড়ছে ভয়। ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। এর মধ্যেই নয়া স্ট্রেন খুব সন্তর্পণে ঢুকে পড়েছে বিশ্বের আরও অন্তত দশটি দেশে। ব্রিটেনের পর ইতালি, জার্মানি, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে সিঙ্গাপুরেও সংক্রমণ ধরা পড়েছে ‘বাহুবলী’ নয়া করোনা স্ট্রেন-এর। স্বাভাবিক ভাবে তাই মনে আসছে আর একটি প্রশ্নও। যদি এই নতুন করোনা স্ট্রেন আগের চেয়েও দ্রুত গতিতে ছড়ায়, যদি তা কোনও মতে ভারতে ঢুকে পড়ে তা হলে কী হবে? ভারতের কাছে কি যথেষ্ট কিট বা পরীক্ষা করার সামগ্রী আছে এই নতুন ভাইরাসকে চিনে ফেলার জন্য? কারণ যদি জানাই না যায়, তবে একে আটকানো যাবে কী ভাবে?

পশ্চিমবঙ্গে করেনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে প্রথম থেকেই কাজ করছেন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। নতুন করোনা ভাইরাস স্ট্রেনকে কী ভাবে বা কোন পরীক্ষা দিয়ে চেনা যাবে? তিনি বলেন, ‘‘এটা বুঝতে হলে আগে ভাইরাসের এই নতুন মিউটেশন বা জিনগত ভাঙাগড়া ব্যাপারটা বুঝতে হবে। কেন বাড়ছে এর সংক্রমণ? কারণ হল, ভাইরাসের হাত কিছুটা হালকা হয়েছে।’’ কী ভাবে? সুবর্ণবাবু বলছেন, ‘‘করোনা ভাইরাসের গায়ে লেগে থাকা ছোট ছোট ‘হাত’ বা কাঁটাগুলোতেই রয়েছে সংক্রমণের যত শক্তি। এই কাঁটাগুলোতে থাকে গ্লাইকো প্রোটিন। যা মোটামুটি দু’রকমের, এস-১ এবং এস-২। করেনা ভাইরাসের কাঁটায় থাকা এস-১ নাক থেকে গলা অবধি যে শ্বাসপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত রিসেপ্টর, তাতে গিয়ে লাগে। এবং এস-২ দিয়ে ভাইরাস কোষে প্রবেশ করে।’’

তাঁর ব্যাখ্যা: ‘‘প্রোটিনকে যদি আমরা একটা বাড়ি ভাবি তবে সেই বাড়ির এক একটি ইট হল এক একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড। এস-১-এর যে অজস্র অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে, তার মধ্যে ৬৯ আর ৭০ নম্বর অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরির কোডগুলোকে মুছে ফেলেছে এই নতুন স্ট্রেন। ফলে ভাইরাসের হাত কিছুটা হালকা হয়েছে। দু’টি অ্যামাইনো অ্যাসিড আর তৈরি করতে হচ্ছে না তাকে। সে তার পুরনো অবতারের তুলনায় ৭০ শতাংশ দ্রুত গতিতে ঢুকে পড়ছে রিসেপ্টরে। ফলে সংক্রমণ হচ্ছে দ্রুত।’’

আরও পড়ুন: উদ্বেগ থেকে সাবধান থাকুন

এখন এই ভাইরাসকে চিহ্নিত করা যাবে কীভাবে! সুবর্ণ গোস্বামী কথায় চিহ্নিত করা যাবে। আমাদের দেশে যে আরটিপিসিআর পরীক্ষা চালু আছে তাতে ভাইরাসের তিনটি জিনগত সিকোয়েন্সকে টার্গেট করা হয়। সারস কোভিড ভাইরাসের যে জেনোমিক সিকোয়েন্স তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয় ব্যাপারটা মিলছে কি না। তাঁর কথায়: ‘‘তিনটি আলাদা আলাদা জেনোমিক সিকোয়েন্স মিললে তবেই পজিটিভ রিপোর্ট দিই। এ বার যদি কোনও ল্যাব বা গবেষণাগার তাড়াহুড়োর কারণে বা বেশি পরিমাণে পরীক্ষার চাপে পড়ে এই একটি জেনোমিক সিকোয়েন্স মিলিয়েই পজিটিভ বা নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়ে দেয় তা হলে নতুন স্ট্রেনের বিশেষত্ব ধরা পড়বে না। সে ক্ষেত্রে তা হবে ভুল রিপোর্ট। তাই এটা বলা যেতে পারে, ভারতে বা বিশ্বে এখন যে প্রক্রিয়ায় করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে তার প্রতিটি ধাপ সঠিক ভাবে বজায় রেখে যদি পরীক্ষা করানো যায় তবে তাতেই ধরা পড়বে করোনা ভাইরাসের এই নতুন স্ট্রেনের অস্তিত্ব।’’

তবে সিনিয়র ভাইরোলজিস্ট অমিতাভ নন্দী এ ব্যাপারে এখনই এত নিশ্চিত হচ্ছেন না। করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার যে আরটিপিসিআর পদ্ধতি এখন দেশে চালু আছে, তাতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লেও নতুন স্ট্রেনকে চিহ্নিত করা যাবে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে তাঁর। তাঁর কথায়: ‘‘ব্যাপারটা অনেকটা সন্দেশের ছাঁচের মতো। ছাঁচের সঙ্গে মিলে গেলে যেমন জিনিস খাপে খাপে আটকে যায়, তেমনই ভাইরাসকে ধরতেও একটা ছাঁচ করা আছে আরটিপিসিআর পরীক্ষায়। ছাঁচের সঙ্গে ভাইরাসের বৈশিষ্ট মিললে ধরা পড়বে। না হলে, ধরা না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।’’

আরও পড়ুন: মোবাইল স্ক্রিনেই গ্লাস ঠেকিয়ে চেঁচিয়ে বলুন উল্লাস!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy