মশার বংশবৃদ্ধি আটকানোয় জোর দিতে হবে রোগ প্রতিকারের ক্ষেত্রে। ফাইল ছবি।
একেই কোভিড আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে, তার মধ্যে দোসর চিকুনগুনিয়া। বর্ষা আসতেই ডেঙ্গির সঙ্গে ব্যাপক হারে ছড়াচ্ছে ভাইরাল ফিভার। এ বার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চিকুনগুনিয়াও। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই রোগী আসা শুরু হয়েছে চিকুনগুনিয়ার। বর্ষাকালে তাই ডেঙ্গি ছাড়াও এই রোগের প্রকোপ থেকেও সাবধান থাকতে হবে। সতর্ক হতে হবে মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ে। মূলেই আটকে দিতে হবে এই রোগ, এমনই বলছেন চিকিৎসকরা।
ভাইরাস-ব্যাকটিরিয়ার মতো পরজীবী নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁরাও বর্তমান জ্বরের চরিত্র ও তার কারণ নিয়ে ধন্দে রয়েছেন। জ্বর এক দিনের বেশি থাকলেই রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এই প্রসঙ্গে মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, বেশি জোর দিতে হবে রক্তপরীক্ষায়। তার পর উপসর্গ। কোনটা ডেঙ্গি, কোনটা চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করা সম্ভব একমাত্র রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই। বয়স্ক বা শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে বেশি।
চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে আগে অনেক বেশি জোর দেওয়া হত উপসর্গের ক্ষেত্রে। কিন্তু প্যারাসিটামলের ব্যবহারের পরই চরিত্রগুলো আগের থেকে পালটেছে। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে জ্বরের আলাদা কোনও চরিত্র ছিল না। কিন্তু সারা গায়ে অসম্ভব ব্যথার সঙ্গে জ্বর একটা অন্যতম উপসর্গ ছিল। তবে এখন অল্প জ্বর ও গাঁটে ব্যথা হলেও চিকুনগুনিয়া হতে পারে। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। কোনও ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করতে হয় না, এ ক্ষেত্রে শুধু অ্যান্টিবডি পরীক্ষাই যথেষ্ট এমনই জানান অরিন্দমবাবু।
আরও খবর: খাবারে অনীহা, অল্পে হাঁপিয়ে ওঠে বাচ্চা, জন্মগত হার্টের অসুখ নয় তো?
চিকুনগুনিয়া কী?
এই প্রসঙ্গে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মেডিক্যাল এন্টোমোলজিস্ট গৌতম চন্দ্র বলেন, এটি একটি আলফা ভাইরাস। এই রোগে সবচেয়ে বড় ভূমিকা জমা জলের। কারণ জল ছাড়া মশা বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। ডেঙ্গির মতোই চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে ভেক্টর বা বাহক এডিস মশা। রাজ্যে ডেঙ্গি ছড়ায় এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবোপিকটাস নামে দু’টি প্রজাতি। গবেষকরা বলছেন, এডিস মশার ক্ষেত্রে বংশবৃদ্ধির জন্য এক ছিপি জলই যথেষ্ট। তাই এই ভাইরাসের বিষয়ে সতর্ক থাকতেই হবে।
এই বিষয়ে সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলেন, চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যুর হার অত্যন্ত কম, এটা ঠিক। তবে জ্বরের সঙ্গে শরীরের প্রতিটি অস্থিসন্ধিতে মারাত্মক ব্যথা হয়। সারা শরীর নাড়াতে গেলেও খুব বেশি রকমের ব্যথা হয়। চিকিৎসকের কাছে চিকুনগুনিয়ার এমন রোগীও এসেছেন, যেখানে হাঁটুর অস্থি সন্ধিতে হাত ছোঁয়ালেও কেঁপে উঠেছেন রোগী। অর্থাৎ আর্থারাইটিসের প্রবণতা রয়েছে। এই জায়গায় চিকুনগুনিয়া কোভিডের থেকে আলাদা, জানান অমিতাভবাবু।
আরও খবর: অল্প বয়সেই চুলে পাক? একটি পাতার ব্যবহারেই কেল্লাফতে
গৌতম বাবু বলেন, চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে জ্বর ছাড়াও গায়ে র্যাশ বেরোয়। তবে তা ডেঙ্গির র্যাশের চেয়ে আলাদা। প্রথম দিকে ভাইরালের ফিভারের মতোই খুব জ্বর এবং গা হাত পা ব্যথা থাকে এই রোগের ক্ষেত্রেও। তাই এই রোগকে দূরে ঠেকাতে মশার বংশবৃদ্ধি যাতে না হয়, সে বিষয়ে নজর দিতে বলেন গৌতম বাবু।
তাঁর কথায়, পাঁচ ফুটের বেশি গভীর জলাশয়ের ক্ষেত্রে এডিস মশা কখনওই জন্মায় না, কারণ এদের লার্ভা জলের তলায় গিয়ে খাবার খায়, শ্বাস নিতে উপরিতলে উঠে আসে। সে ক্ষেত্রে গভীর পুকুর হলে এই লার্ভা বাঁচতে পারে না। তবে ছোট ছোট পাত্রে জল থাকলে, সহজেই জন্ম নেয় এই লার্ভা। এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, বাড়ির আশপাশের অতিরিক্ত জল জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। টবে জমা জল, পরিত্যক্ত জায়গায় জমা জল, আগাছার কারণে জমে থাকা জল সবটাই সরিয়ে ফেলতে হবে। যাঁরা বাইরে বেরোচ্ছেন নিয়মিত, সে ক্ষেত্রে স্প্রে ব্যবহার করলে খানিকটা সুবিধা মিলবে। হাত-পা ঢাকা পোশাক পরলে মশার কামড়ের হাত থেকে খানিকটা হলেও রেহাই মিলতে পারে বলে জানান তিনি।
আরও খবর: মরসুমি ফল না এক্সোটিক ফ্রুট কোনটা খাবেন? কেন?
চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, মশাবাহিত এই ভাইরাল জ্বর ঠেকাতে মশারি টাঙিয়ে শোওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। বিশেষত বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে, যাঁরা রোগের কারণে শয্যাশায়ী, তাঁদের এটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy